• ঢাকা, বাংলাদেশ

অভাবের তাড়নায় ভাতের মাড় খেয়ে দিন পার করছে আঁখিসহ তার ভুমিহীন গৃহহীন পরিবার 

 admin 
24th Jan 2025 6:43 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

জেলা প্রতিনিধি: চাই না মাগো রাজা হতে, রাজা হবার সাধ নাই, মাগো দু’বেলা যেন পাই মা খেতে’ কথাগুলো ছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও সাধক রামপ্রসাদ সেনের। প্রকৃত অর্থে এটিই বাঙালির হাজার বছরের চিরন্তন স্বপ্ন। বাঙালির ভাতের কষ্ট, পেটের টানের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। তবে, এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও অভাবের তাড়নায় ভাতের অভাবে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা, সন্তানকে অন্যের বাসা থেকে ভাতের মাড় নিয়ে খাওয়ানোর গল্পটা কিছুটা অবাস্তব কিংবা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।

কিন্তু, এটাই চিরসত্য। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও একমুঠো ভাতের অভাবে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ৬ বছর বয়সী শিশু সন্তান আফসানা খাতুন আঁখির মুখে ভাতের মাড় তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে শিশুটির পরিবার।
আফসানার বাসা আশাশুনি উপজেলার বাঁকড়া ব্রিজ এলাকায়। সে ওই এলাকার আলমগীর হোসেন ও রুবিনা খাতুন দম্পত্তির একমাত্র সন্তান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক দশক আগেও ভাতের অভাব ছিলনা শিশুটির পরিবারে। বসবাস করতো মরিচ্চাপ নদীর তীরে। তবে অপরিকল্পিত ভাবে নদী খননের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় আলমগীর হোসেনের বসতভিটা। এরপর যাযাবরের মতো দেশের বিভিন্ন ইটভাটা ও রাইচ মিলে পরিবারসহ কাজ করে নিজ সংসারের ভরণপোষণ যোগাতেন তিনি। তবে শারীরিক অক্ষমতার কারনে মালিকপক্ষের মনোগত কাজ করতে না পারাতে সেখান থেকেও বিতারিত হতে হয় আলমগীরকে। একপর্যায়ে উপায়ন্তর না পেয়ে বাঁকড়া ব্রীজের ভেড়িবাঁধের স্লোপে (পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা) বেড়া আর নারকেল গাছের পাতার ছাউনি দিয়ে বসবাস করতে থাকেন আলমগীর ও রুবিনা দম্পতি। এসবের ভিতরে জন্ম হয় শিশু আফসানা খাতুন আঁখির।

আঁখির বয়স যতো বাড়তে থাকে ততো সাংসারিক খরচও বাড়তে থাকে আলমগীরের সংসারে। তবে শারীরিকভাবে ভারি কাজ করতে অক্ষম হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় বেকার থাকতে হয় আলমগীরকে। অপরদিকে রুবিনা কাজ করলেও নায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হন তিনিও। তার উপর প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়াতে সবসময় কাজ না পাওয়ায় এই দুরবস্থা সৃষ্টি হয় তাদের সংসারে।
সরেজমিনে আঁখিদের এলাকাতে গেলে জানা যায়, বর্তমানে ওই এলাকার বিদ্যুৎহীন পরিবার তারা। বছরের অধিকাংশ সময় কোন না কোন বেলা অনাহারে থাকতে হয় তাদের। এনজিওর সহায়তায় আঁখির বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সেটার আলো হিসেব করে ব্যবহার করতে হয়। যদি আকাশ দীর্ঘদিন মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে অন্ধকারে থাকতে হয় রাতের সময়। আর রাতের মতোই অন্ধকার নেমে এসেছে তাদের জীবনে।

শিশু আঁখির বাসাতে যেয়ে দেখা, পার্শ্ববর্তী একটা বাড়ি থেকে মেয়ে আঁখির জন্য ভাতের মাড় সংগ্রহ করে রেখেছেন তার মা রুবিনা খাতুন। দুপুরের পর যখন আঁখি ৩ কিলোমিটার দূরের স্কুলের ক্লাস শেষ করে ফিরবে তখন এই ভাতের মাড় খেয়ে পেটে ক্ষুদা নিবারণ করবে শিশুটি। এসময় শিশুটির খাবারের তালিকাতে ছিল টমেটো সিদ্ধ ও দেশি পুঁটি ভাজা মাছ। সবজির দাম কমে যাওয়াতে এই টমেটো ক্রয় করেন আঁখির বাবা। মাছগুলো ছিল প্রতিবেশী এক ঘের মালিকের দেওয়া।
এব্যাপারে আঁখির মা রুবিনা খাতুন জানান, অনেক কষ্টের ভেতরে রয়েছেন তিনিসহ তার পরিবার। অভাবে অভাবে এখন বেঁচে থাকাটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান তিনি।

রুবিনার ভাষাতে, নসীবে যদি কষ্ট লেখা থাকে তাহলে সুখবা আসবে কোথা থেকে! স্বামী অসুস্থ, ভারি কাজ করতে পারেনা। একদিন কাজ হয়লে দুইদিন কাজ হয়না। আর আমিতো নারী। আমারে সবাই কাজেও নেয়না। যারা নেয় তারাও কম মজুরী দেয়। বর্তমান বাজারে এক, দেড় শ’ টাকাতে কী সংসার চলে জানিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি।
আবেগপ্রবণ হয়ে রুবিনা বলেন, মেয়েটারে নতুন জামাকাপড় দিতে পারিনা। লোকের বাদ দেওয়া জামাকাপড় দিয়ে বছরের পর বছর পড়ে আসছে তার সন্তান। বর্তমানে এমতাবস্থায় আছি যে, ফুল ড্রেসের পরিবর্তে হাফপ্যান্ট পড়ে তার সন্তান ক্লাস করাতে স্কুলের শিক্ষকরাও আপত্তি তুলেছে। যেখানে এক মুঠো ভাত জোগাড় করতে পারিনা, সেখানে ফুল প্যান্ট কেনা আমাদের সাধ্যের বাইরে।

আঁখির বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, জীবনে সুখ কী জীনিস সেটাই জানিনা। বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছিল। তবে আমাদের ভাগ্যে কোন ঘর জোটেনি। আবেদন করেছিলাম। সরাসরি তৎকালীন ইউএনও ও তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করেছিলাম, তবে কোন সুফল মেলেনি।
আক্ষেপ করে আলমগীর বলেন, আজ ৫ বছরের মতো ভেড়িবাঁধের স্লোপে বসবাস করছি। এখানে কর্মসংস্থানের অভাব। যে কাজগুলো মেলে তাতে নিজের দেহ পারে না।

সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত জানিয়ে আলমগীর বলেন, এপর্যন্ত কোন সহায়তা পায়নি। যখন সাহায্যের জন্য চাইতে যাইতাম তখন আমি বা আমরা কার সমর্থক সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। যেখানে একমুঠো ভাত নিয়ে প্রতিটা দিন যুদ্ধ করতে হয় সেখানে প্রকাশ্যে রাজনীতি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমর্থক হওয়াটা কতটুকু যুক্তিসংগত জানিয়ে প্রতিবেদকের কাছেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের জায়গা থেকে আমাদের চলে যাওয়ার জন্য মৌখিক ভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এখান থেকে চলে গেলে থাকবো কোথায়? কিংবা যাবো বা কোথায়? এজন্য নিজ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সমাজের মানবিক ব্যক্তিসহ রাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সংবাদ কর্মী এসকে বাদশা বলেন, পরিবারটি অনেক অসহায়। আমরা ইতিপূর্বে পেশাগত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই পরিবারকে সরকারি ঘর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি রেখেছিলাম। তবে এখনও পর্যন্ত সেটা উপেক্ষিত। এজন্য নতুন বাংলাদেশে আঁখির মতো পরিবাররা যাতে গৃহহীন কিংবা ক্ষুদার্ত না থাকে সেজন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এব্যাপারে সাতক্ষীরার উন্নয়ন কর্মী মাধব দত্ত বলেন, আফসানা আঁখি আমাদেরই সমাজে বেড়ে উঠা সন্তান, তার ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে, উন্নয়ন সংগঠন, প্রশাসন ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই এই পরিবারের সহায়তা করবে। আজকের দিনে আঁখির মত ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবার থাকতে পারে না। বিত্তবানরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াবে প্রতাশা করি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগ আছে, আছে বেসরকারি প্রকল্প। আশাকরি তাদের জন্য একটি সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। নিশ্চিত হবে আঁখির অনাগত ভবিষ্যত। এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদের সাকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কল রিসিভ না হওয়াতে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১