admin
06th Sep 2019 3:46 pm | অনলাইন সংস্করণ

ঢাকার চলচ্চিত্রে তার আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন এবং তারপর একদিন চলে গেলেন। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাস থেকে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর। প্রায় সাড়ে তিন বছরের সিনে ক্যারিয়ারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনায় ছিলেন। ঢালিউডের এ ক্ষণজন্মা নায়ক মৃত্যুর দুই দশকের পরেও সমানভাবে আলোচিত।
শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬। ২৩ বছর আগের সেই শুক্রবার বিকালের মধ্যেই রটে যায় ঢালিউড সুপারস্টার সালমান শাহ আর নেই। আগের রাতেই এফডিসিতে আড্ডা জমিয়ে তোলা সালমান পরের দিন দূর আকাশের তারা হয়ে যাবেন কেইবা ভেবেছিল। সিলেটের জকিগঞ্জে ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহ ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরীর আদরের সন্তান ছিলেন তিনি।
শিশু শিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে শুরু হয় তার। নব্বই দশকের শুরুতে সালমান শাহ নায়ক হিসেবে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে আবির্ভূত হন তার সঙ্গে নবাগতা মৌসুমীরও যাত্রা শুরু হয়। আমির খান, জুহি চাওলা জুটির হিন্দি সিনেমার আনুষ্ঠানিক রিমেকে দেশ জুড়ে ঝড় তোলেন সালমান শাহ ও মৌসুমী জুটি। পরবর্তী সময়ে সালমানের সঙ্গে গড়ে ওঠে শাবনূরের জুটি। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা কয়েকটি জুটির মধ্যে অন্যতম ছিল সালমান শাহ-মৌসুমী ও সালমান শাহ-শাবনূর জুটি। ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকতেই নিভে যায় সালমানের জীবন প্রদীপ। মৃত্যুর পরেও আটটি সিনেমার মাধ্যমে দর্শকের সামনে এসেছিলেন সালমান। সিনেমাগুলো হলো ছটকু আহমেদের সত্যের মৃত্যু নেই (১৯৯৬), জাকির হোসেন রাজুর জীবন সংসার (১৯৯৬), শিবলী সাদিকের মায়ের অধিকার (১৯৯৬), এমএম সরকারের চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬), রেজা হাসমতের প্রেম পিয়াসী (১৯৯৭), নাসির খানের স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭), শিবলী সাদিকের আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭), কাজী মোর্শেদের শুধু তুমি (১৯৯৭) এবং ছটকু আহমেদের বুকের ভেতর আগুন (১৯৯৭)।
সালমান শাহ আশির দশকে ইমন নামে কিছু নাটকও করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আকাশ ছোঁয়া, দেয়াল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস প্রভৃতি। নায়ক হওয়ার পর তাকে দেখা যায় নয়ন, ইতিকথা, স্বপ্নের পৃথিবী ইত্যাদি নাটকে।
সালমান তার স্বল্পসময়ের ক্যারিয়ারে দর্শকের মাঝে অন্যরকম আবেদন তৈরি করেছিলেন। পরিচালক শাহ আলম কিরণ সালমান সম্পর্কে বলেছিলেন, ও যাই করত, সেটাই ভালো লেগে যেত। অল্প সময়ের মধ্যে এ ছেলেটা চলচ্চিত্রমোদীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।
আরেক নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুর মতে, নব্বই দশকের প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সালমান। তিনি বলেন, সালমান শাহর অভিনয়ের মধ্যে দর্শক একটা ভিন্নধারা খুঁজে পেয়েছিল। অনেকে আবার সালমান শাহর মধ্যে বলিউড নায়কদের ছায়াও খুঁজে পেয়েছিলেন।
ফ্যাশন সচেতন সালমান তার চলাফেরায় আধুনিকতার ছাপ রাখতেন। তিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। সে সময়ের কিশোর-তরুণরা তাকে অনুসরণ করতেন। মধ্য নব্বইয়ের প্রেমিক হতে চাইতেন সালমানের মতো রোমান্টিক। প্রেমিকা পেতে চাইতেন সালমানের মতো প্রেমিক। প্রথম নায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে সালমান করেন মাত্র চারটি সিনেমা। সবগুলোই ছিল আলোচিত। আরেক নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমান উপহার দেন ১৪টি সিনেমা। এ ছাড়াও সালমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, সাবরিনা, শিল্পী প্রমুখ। সালমান অভিনীত সর্বমোট ২৭টি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।
বন্ধু সালমান শাহ স্মরণে চিত্রনায়িকা মৌসুমী বলেছিলেন, যদিও মাত্র চারটি ছবিতে আমি সালমান শাহর সঙ্গে কাজ করেছি, কিন্তু সে ছিল আমার প্রকৃত বন্ধু। আজ এতটা বছর পরও তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। হয়তো কখনও তাকে ভুলে যেতে পারব না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কয়েকটি সিনেমার আংশিক কাজ করে যেতে পেরেছিলেন সালমান। পরবর্তীতে অন্য অভিনেতাকে দিয়ে সিনেমাগুলোর কাজ শেষ করা হয় এবং সেগুলো সফলতার মুখও দেখেছিল। চিত্রনায়িকা সন্ধ্যার সঙ্গে সালমান প্রেমের বাজি সিনেমার কিছু কাজ করেছিলেন। সেটি আর শেষ হয়নি, অসমাপ্তই রয়ে গেছে।
Array