
ইউরো কি চ্যাম্পিয়নশিপের নকআউটপর্বে হারলেই বাদ, জিতলেই টুর্নামেন্টের শেষ আটে ওঠার লড়াই শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। আজ রাতে মাঠে গড়াবে সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচটি। রাত ১টায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের মুখোমুখি হবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা বেলজিয়াম। প্রায় তিন দশক ধরে পর্তুগালের বিপক্ষে জয় নেই বেলজিয়ামের। আবার এটি দুদলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো টুর্নামেন্টে প্রথম লড়াই। শেষ ষোলোর এই ম্যাচে তাই পর্তুগিজদের হারাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রেড ডেভিলরা। কোচ রবার্তো মার্তিনেজের মতে, সব রকম প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে ফেলেছেন রোমেলু লুকাকু-কেভিন ডি ব্রুইনরা। এই ম্যাচের তিন ঘণ্টা আগে নেদারল্যান্ডসের প্রতিপক্ষ চেক প্রজাতন্ত্র।
পর্তুগাল ও বেলজিয়ামের শেষ পাঁচ ম্যাচে একটিতেও জিতেনি রবার্তো মার্তিনেজের শিষ্যরা। তিন হারের বিপরীতে দুটি ম্যাচে ড্র করেছে তারা। এর সবগুলো ম্যাচই হয়েছে একবিংশ শতাব্দীতে। বিংশ শতাব্দীতে দুদল সর্বশেষ ম্যাচটি খেলেছিল ১৯৮৯ সালে। ওই ম্যাচে পর্তুগালকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বেলজিয়াম। এবারের ইউরোতে পর্তুগালের বিপক্ষে রোমেলু লুকাকুদের সেই জয় খরা কাটানোর পালা। বেলজিয়াম সেই কাজটি করতে মুখিয়েও রয়েছে। এ সম্পর্কে দলের কোচ রবার্তো মার্তিনেজের ভাষ্য, ‘পর্তুগাল সহজ কোনো প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু এসব ম্যাচের জন্য আমরা বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখনই তাদের বিপক্ষে খেলি কিংবা পরে, তাতে কোনো কিছু আসে যায় না। দল হিসেবে আমরা সব সময়ই তাদের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’ বেলজিয়ামের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এ সম্পর্কে রবার্তো মার্তিনেজ বলেন, ‘আমরা রক্ষণে ভালো করতে চাই। আপনারা জানেন, ক্রিশ্চিয়ানো খুবই সুদক্ষ খেলোয়াড়। তাই তাকে আমরা বিশেষভাবে নজরে রাখছি। শুধু রোনালদো না, তাদের অন্য ১০ জন খেলোয়াড়কেও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।’
বেলজিয়াম নকআউটপর্বে এসেছে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। সবকটি ম্যাচ জেতায় তাদের পয়েন্ট ছিল ৯। এই খেলোয়াড়দের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সম্পূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ দল তাদের। গোলপোস্টের নিচে থিবো কর্তুয়া, ডিফেন্সে থমাস মুনিয়ের, থমাস ভারমালিন, দেদ্রিক বয়োটারা। মিডফিল্ডে পরীক্ষিত কেভিন ডি ব্রুইন, ইউরি থিয়েলেমান্স ও এক্সেল উইটসেলের মতো খেলোয়াড়রা। দলটির আক্রমণভাগও সুনিপুণ। রোমেলু লুুকাকোর সঙ্গে রয়েছেন এডেন হ্যাজার্ড, জেরেমি ডকু, লিয়ান্দ্রো ত্রোসার্ড ও ড্রাইস মার্টেন্সরা। লুকাকু তিন গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। দলের অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড। এমনকি যারা বেঞ্চে নিয়মিত বসে থাকেন তারাও প্রত্যাশার বেশিই দিতে সক্ষম।
পর্তুগালের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পাঁচ গোল নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতাও। সর্বশেষ ফ্রান্সের বিপক্ষেও জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। যে কোনো মুহূর্তে রোনালদো যে দলের জন্য দেবদূত হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন তার নজির ফুটবল বিশ্ব অনেকবার দেখার সুযোগ পেয়েছে। পর্তুগিজদের ফিফা র্যাঙ্কিং ৫। সর্বশেষ কয়েক বছর ধরে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সুপারপাওয়ারে পরিণত হয়েছে তারা। এর পেছনে অনেক অবদান কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের। ২০১৪ সালে পর্তুগালের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।
পর্তুগাল নকআউটপর্বে এসেছে ‘এফ’ গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে। পর্তুগালের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও। রক্ষণভাগে রয়েছেন রুবেন দিয়াজ, পেপে, রাফায়েল গুয়েরোরো, দিয়াগো দালতের মতো খেলোয়াড়। দিয়াজ সদ্য সমাপ্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে জিতেছেন বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুলতে অসামান্য অবদান এই তারকার। পর্তুগারের মধ্যমাঠের সেনানি রেনেতো সানচেজ, বার্নার্দো সিলভা, ব্রুনো ফার্নান্দেজরা। রোনালদোর সঙ্গে রয়েছেন দিয়েগো জোতা, জোয়াও ফেলিক্স ও আন্দ্রে সিলভারা।
নেদারল্যান্ডস বনাম চেক প্রজাতন্ত্রের ম্যাচেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করতে পারেন ফুটবলপ্রেমীরা। ডাচরা নকআউটপর্বের টিকিট পেয়েছে ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। অন্যদিকে চেক প্রজাতন্ত্র ‘ডি’ গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছে। এই দুই দলের মধ্য শক্ত-সামর্থ্যে এগিয়ে নেদারল্যান্ডস। তাদের ফিফা র্যাঙ্কিং ১৬। যেখানে চেক প্রজাতন্ত্রের অবস্থান ৪০তম স্থানে। ডাচদের কোচ ফ্রাঙ্ক ডি বোর, চেক প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বে আছেন জারোস্লাভ সিলহাভি।
ডাচদের সবচেয়ে বড় তারকা মেম্ফিস ডিপাই। এ মৌসুমেই অলিম্পিন লিঁও থেকে বার্সেলোনায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। আক্রমণভাগে তার সঙ্গে আরো রয়েছেন লুক ডি ইয়ং, কুইন্সি প্রমেসরা। মধ্যমাঠে ডাচদের সবচেয়ে বড় ভরসা জর্জিনিও উইনাল্ডাম। দলের অধিনায়কও তিনি। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত তিনটি গোল করেছেন তিনি, যা যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মধ্যমাঠে এছাড়াও রয়েছেন ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, ডাভি ক্লাসেন, মার্টেন ডি রনরা। রক্ষণভাগে দলটির একঝাঁক তরুণ তারকা। জুভেন্টাসের ম্যাথিস ডি লিট থেকে শুরু করে নাথান এইকে, ডানজেল ডামফ্রিস ও জুয়েল ভেল্টম্যানরা। চেক প্রজাতন্ত্রের একমাত্র তারকা জ্বলজ্বল নাম প্যাট্রিক সিখ। তিনিও এ পর্যন্ত তিনটি গোল করেছেন দলের হয়ে। এছাড়া বাকিদের মধ্যে কেউই এতটা দাপটে নন। দেখার পালা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তারা কতদূর যেতে পারেন।
Array