
বিকল্প ধারার সিনেমা বলতে যা বুঝায় তার চেয়েও বিকল্প ধারার ছবি আন্ধাধুন! আইটেম গান, সস্তা প্রেমের কাহিনী আর মার মার কাট কাটে যেখানে সয়লাব পুরো বলিউড সেখানে ‘আন্ধাধুন’ পুরোপুরি আলাদা ঘরানার সিনেমা। সাসপেন্স থ্রিলার ফিল্ম দিয়েও যে বক্স অফিস ফুলে ফেঁপে উঠতে পারে এই সিনেমাটি তার অতি সাম্প্রতিক উদাহরণ।
নির্মাতা শ্রীরাম রাঘবানের হাত ধরে বলিউডের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। ঘন্টা দুয়েক দর্শক হৃদয়কে একই দিকে ধাবিত করা দুঃসাধ্য বৈকি! আন্ধাধুন সেখানে পুরো সময়ই টান টান উত্তেজনা উপহার দিয়েছে। বিরতির সময় পানি পানের বদলে ভাবতে পারেন, আসলে কি হতে চলেছে পরের সিকুয়েন্সে! মিনিট দশেক গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে পারেন লাভ ক্ষতির হিসেব মিলাতে। ছবির প্রেক্ষাপট উল্লেখ করতে হলে বলবো, পাপকে মুছতে গিয়ে নতুন করে পাপ করা! যে পাপের জন্ম হয় পরকীয়া প্রেমের জের ধরে। অনেকটা নিউক্লিয়ার বোমের মতো! যা শুধু ছড়াতেই থাকে। একসময় রূপালি পর্দা কাঁপানো অভিনেতার সুন্দরী স্ত্রীর একঘেয়েমি কাটাতে অবৈধ সম্পর্কের সূচনা ঘটে।
একদিন এই তিক্ত সত্যের মুখোমুখি হওয়ায় প্রমোদ সিনহার (অনিল ধাওয়ান) জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয় স্ত্রী আর তার কথিত প্রেমিক! ঘটনাচক্রে যার চাক্ষুস সাক্ষী হয়ে মহা বিপদে পড়েন আকাশ (আয়ুস্মান খুরানা) নামের এক পিয়ানো বাদক। যে নিজেকে প্রকৃত মিউজিসিয়ান হিসেবে তৈরি করতে অন্ধের বেশে ঘুরে বেড়ায়। ঘরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করলেও বাইরে অন্ধের বেশ! কিন্তু অপ্রত্যাশিত খুনের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ায় বেঁচে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় আকাশের। সত্য ঘটনা কাল হয়ে দাঁড়ায় আকাশের। বিবেকের তাড়নায় পুলিশের সাহায্য নিতে চায় আকাশ। কিন্তু রক্ষকের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে দেখা মিলে ভক্ষকের! খুনের কথা থানায় জানাতে গিয়ে মুখোমুখি হন সেই খুনি ইন্সপেক্টরের! অভিনয় দক্ষতার দিক বিবেচনায় আয়ুস্মান খুরানা যথারীতি সেরাদের সেরা! আয়ুস্মান কেন অন্যদের চেয়ে আলাদা তা নতুন করে বুঝালেন। তব্বুও নতুন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এই ছবিতে আয়ুস্মান আর তব্বুর রসায়ন দেখার জন্য হলেও দেখা যায়।
তবে রাধিকা আপ্তেকে আরোও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারতেন বলে আমার মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে কে.ইউ মহানানের ফিল্মোগ্রাফিতে সব চরিত্রকে মোটামুটি ভালোভাবেই সাজিয়ে নিয়েছেন রাঘবান। অমিত ত্রিবেদীর মিউজিক শোনার জন্যও আন্ধাধুন দেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করবেন সিনেমা পাগলরা। জনি গদ্দার, বদলাপুর, এক হাসিনা থি দেখা থাকলে বড় আশা নিয়েই আন্ধাধুন দেখতে বসে যেতে পারেন। কেননা, বিগত ফিল্মগুলোতে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন শ্রীরাম রাঘবন। ব্ল্যাক কমেডি নিয়ে কতটা খেলতে পারেন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
যদিও ছবিটির মূল কাহিনী নেয়া হয়েছে ফরাসি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লাকোরদার’ থেকে। নির্মাতা তা অকপটে স্বীকার করেছেন। মূল কাহিনী ফ্রেঞ্চ ফিল্মের হলেও আন্ধাধুনে যে মসলার মিশেল ঘটিয়েছেন শ্রীরাম রাঘবান তা দুই কলম লিখে শেষ করবার নয়। ছবিটি দেখলেই সকল বিশেষণের সত্যতা বেড়িয়ে আসবে। কেন এই ছবিটিকে আলাদা করে দেখছেন আলোচক-সমালোচকরা।
Array