
স্বাধীনতার পর এই প্রথম- ১৯৯১ সাল থেকে বিরোধী দলের নেতার পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রথমে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা, পরে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া এবং সর্বশেষ বেগম রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্বাধীনতার পর এই প্রথম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ও উপনেতা পদে বসছেন আপন দুই ভাই। বুধবার জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে তাদের নিয়োগ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।
বিরোধী দলের নেতা পদে এইচএম এরশাদ এবং উপনেতা পদে তার ছোট ভাই জিএম কাদের যথাক্রমে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন। মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ ব্যাতীত সংসদে সর্বোচ্চ আসন হচ্ছে জাতীয় পার্টির। তারা ২২টি আসন পেয়েছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন। মহাজোটভুক্ত অন্য দলগুলোকে এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। ফলে তারা সবাই বিরোধী দলে বসছে এটা প্রায় নিশ্চিত। এদিকে ঐক্যফ্রণ্টের সদস্যরা শপথ নিচ্ছেনা বলে জানানো হয়েছে।
বিরোধী দলের নেতা পদে এরশাদের বসার মধ্য দিয়ে প্রায় ২৮ বছর পর এই পদটি নারীমুক্ত হচ্ছে। ১৯৯১ সাল থেকে বিরোধী দলের নেতার পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রথমে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা, পরে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া এবং সর্বশেষ বেগম রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুধকার সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে জাতীয় সংসদের তৃতীয় তলায় অবস্থিত বিরোধী দলের নেতা ও উপনেতার কার্যালয় গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। বিদায়ী বিরোধী দলের নেতার পিএস জানিয়েছেন, অফিসের ইনভেনটরী করা হচ্ছে। সংসদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান অফিস দু’টি সাজানোর কাজ শুরু করবে।
এ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারির পর বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে তা নিজ বাসায় নিয়েছেন এইচএম এরশাদ। বিরোধী দলের চিফ হুইপ পদে ইতিমধ্যেই মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারির কোন বিষয় না থাকায় সংসদ শুরুর আগে চিঠি দিয়ে স্পিকারকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছে বিরোধী দলের নেতার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা।
৫ দেশের রাষ্ট্র-সরকার প্রধানের অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং সূত্র জানায়, বুধবার শেখ হাসিনাকে পৃথক বার্তা পাঠিয়ে তারা এ শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মেদ সলিহ, নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং এবং ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী গুয়েন জুয়ান ফুক। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা।
আলোচনায় মন্ত্রীদের পিএস নিয়োগ, যারা পেলেন নিয়োগ
নতুন সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) নিয়োগ দিয়ে গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সাধারণত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পছন্দ অনুযায়ী তাদের একান্ত সচিব (পিএস) দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তবে এবার এর ব্যত্যয় ঘটেছে। সচিবালয় সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকেই পিএস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এ কারণে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা গেছে; একই অবস্থা নিয়োগপ্রাপ্ত একান্ত সচিবদের অধিকাংশেরই। উপরন্তু উপসচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ হতাশও। তবে তা প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করছেন না। যদিও সচিবালয়-মন্ত্রণালয়ে দুদিন ধরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পিএস নিয়োগের এ বিষয়টি।
এদিকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পছন্দানুযায়ী পিএস নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়টিকে বরং ইতিবাচকভাবেই দেখা হচ্ছে সরকারের শুভাকাক্সক্ষী মহল থেকে। এতে করে মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি-অনিয়ম কমে আসবে বলে মনে করছেন অনেকেই। বলছেন, এতে করে কাজের গতি বাড়বে।
এদিকে পিএস নিয়োগের বিষয়ে গতকাল নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কাজের গতিকে আরও বেগবান করার জন্য আমরাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানিয়েছিলাম কিছু দক্ষ চৌকস কর্মকর্তাকে পিএস হিসেবে নিয়োগ দিতে। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যাচাই-বাছাই করে এ নিয়োগ দিয়েছে। আমরা, মন্ত্রিসভার সব সদস্য এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছি। আশা করি, এর ফলে কাজে আরও গতি আসবে।
এবারই প্রথম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিবুল হাসান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যেখানে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাতে আমি কোনো অসুবিধা দেখছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ভালো মনে করবেন, তার নেতৃত্বে সেভাবেই আমরা কাজ করব।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সরকার যদি ভালো লোককে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস নিয়োগ দেয়, তা হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
কারণ এসব কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সরকার যাদের নিয়োগ দিয়েছে, তারা কতটুকু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, তা-ই দেখার বিষয়। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তাদের পছন্দের লোককে পিএস হিসেবে পেলে সহজেই দুর্নীতির পথে পা বাড়াতে পারেন। সেটি এবার কমে আসতে পারে।
নতুন মন্ত্রিসভায় দশম সংসদের মন্ত্রিসভার ১৫ সদস্যও রয়েছেন। তাদেরও নতুন করে পিএস দেওয়া হয়েছে। নতুন সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ৩১ জনই নতুন।
মন্ত্রীদের পিএস : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পিএস শ্রম মন্ত্রণালয়ের হাবিবুর রহমান, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পিপিপি অথরিটির পরিচালক গৌতমচন্দ্র পাল, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক অর্থ বিভাগের ড. মো. মুনসুর আলম খান,
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জনপ্রশাসনের দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ জনপ্রশাসনের মো. আরিফ নাজমুল আহসান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিদ্যুৎ বিভাগের আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্থানীয় সরকার বিভাগের ড. মো. ফেরদৌস আলম, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নুরে আলম সিদ্দিকী,
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আরপিএটিসির উপপরিচালক ড. আবদুল আলীম খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আবদুল মোমেন রাজউকের পরিচালক ড. শাহরিয়ার ফিরোজ, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ই-সার্ভিস স্পেশালিস্ট, এটুআই প্রোগ্রামের মো. এনামুল হক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন প্রাথমিকের মো. আবদুল ওয়াহেদ, বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিতোষ হাজরা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মো. ওয়াহিদুর রহমান, খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার জনপ্রশাসনের মো. সহিদুজ্জামান,
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একই মন্ত্রণালয়ের মো. মাসুকুর রহমান শিকদার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আসিফ আহসান, গণপূর্তমন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম রাজউকের পরিচালক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মো. আক্তারুজ্জামান, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিশ^াস রাসেল হুসাইন,
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, রেলপথমন্ত্রীর নূরুল ইসলাম সুজন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আতিকুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মো. কায়েসুজ্জামান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডোমেইন স্পেশালিস্ট, এটুআইর মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খানকে একান্ত সচিব হিসেবে পেয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রীদের পিএস : শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোমিন, প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ সুরক্ষা সেবা বিভাগের আহমেদ কবির, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল জননিরাপত্তা বিভাগের মো. মজিবর রহমান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ বিভাগের আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু সুরক্ষা সেবা বিভাগের বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান জনপ্রশাসনের বেগম উম্মে রেহানা,
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ডিএনসিসির প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মোহাম্মদ মিকাইল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জনপ্রশাসনের মো. গোলাম মাওলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নরসিংদীর এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম; জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বিদ্যুৎ বিভাগের মো. রেজাউল আলম; এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য জনপ্রশাসনের মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন,
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নূর আলম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মারুফ রশীদ খান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জনপ্রশাসনের হেমন্ত হেনরী কুবি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মো. কামরুল হাসান, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান স্থানীয় সরকার, ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ, পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ভূমি মন্ত্রণালয়ের মো. আঃ জলিল এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সচিব খন্দকার ইয়াসির আরেফিনকে একান্ত সচিব হিসেবে পেয়েছেন।
উপমন্ত্রীদের পিএস : পরিবেশ উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম সানজিদা ইয়াসমিন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম জননিরাপত্তা বিভাগের মো. কামরুল আহসান তালুকদার এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মো. শাহগীর আলমকে একান্ত সচিব হিসেবে পেয়েছেন। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।
Array