• ঢাকা, বাংলাদেশ

আমিরাতের যুবরাজও কম খেল দেখাচ্ছেন না 

 admin 
23rd Nov 2018 7:57 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনা ৩৩ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা হলেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিপাকে পড়েছে সৌদি আরব। সৌদি বাদশা ও যুবরাজের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। যুবরাজকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও উঠেছে। এমন অবস্থায় যুবরাজ মোহাম্মাদের আরেক দোসর সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ খেলেছেন আরেক ভুল ঘুঁটি।

মোহাম্মদ বিন জায়েদের মারমুখী নীতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুবাইয়ের অগ্রগতিতে। সৌদি যুবরাজের চেয়ে বয়সে অনেক বড় হলেও মানসিক পরিপক্বতা খুব বেশি পার্থক্য নেই দুজনের। দুই যুবরাজকে রক্তক্ষয়ী ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। তাঁদের দুজনের জন্যই গত ১৭ মাস ধরে কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আরব দেশগুলো। কিন্তু এসব নীতিতে কি খুব লাভবান হয়েছে দুবাই? মার্কিন সাময়িকী দ্য ইকোনোমিস্টের এক প্রতিবেদনে উঠ এসেছে বিষয়টি।

আসলে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যুতে জড়িয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ। এর মধ্যে অন্যতম দুটি হচ্ছে, ইয়েমেন যুদ্ধ। অপরটি হলো উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সদস্য রাষ্ট্র কাতারের বিরুদ্ধে আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে অবরোধ আরোপ। ২০১৭ সালের জুনে সৌদি আরবসহ সাতটি দেশ কাতারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাদের অভিযোগ, দেশটি সন্ত্রাসবাদে আর্থিক সহায়তা ও মদদ দিয়ে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। বে দোহা কর্তৃপক্ষ বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এ অবস্থায় সাময়িকভাবে ব্যাপক সমস্যাতেও পড়েছিল দোহা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছিল দেশটির অর্থনীতি। আর সেই চাপকে কাজে লাগিয়ে কাতারকে শর্তের বেড়াজালে আটকে ফেলে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু এই আক্রমণে দুবাই হারিয়েছে তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদারকে।

দুবাই থেকে এখন কোনো ফ্লাইট দোহা বিমানবন্দরে যায় না। দুবাইয়ের জাবেল আলি বন্দর দিয়ে আমদানি করত কাতার, সেটাও বন্ধ হয়েছে। এমনকি ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন নিয়ে অংশীদার হিসেবে দুবাই যে ব্যবসায়িক ফায়দা নিতে পারত সেটাও এখন অনিশ্চিত। ওই টুর্নামেন্টকে হতাশ করার ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউএই।

কিন্তু উপসাগরীয় অন্যান্য শেখদের রাজত্বের চেয়ে দুবাই বেশ ভিন্নই ছিল। দুবাইয়ের অর্থনীতির চালিকাশক্তি কেবল তেল নয়, বরং পর্যটন, বাণিজ্য ও আর্থিক খাতের ওপরও অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর দুবাইতে, এখন পর্যন্ত দুবাইয়ের ‘বুর্জ খলিফাই’ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে সুউচ্চ ভবন, রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর জাবেল আলি। ২০১৮ সালে ইউএইর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০১৭ সালের জুনে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সাত দেশ। ছবি: রয়টার্স

২০১৭ সালের জুনে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সাত দেশ। ছবি: রয়টার্সতবে ভালো ভালো পরিসংখ্যান চোখ ধাঁধালেও বেশ বিপদে আছে দুবাই। তেলের দাম বৃদ্ধি স্বল্পমেয়াদে কিছুটা গতি আনলেও, দীর্ঘ মেয়াদে এই ধারাটি নিম্নমুখী। দুবাইয়ের এমএফইউজি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইশান খোমানসহ বিভিন্ন বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, একটি বিশৃঙ্খল সম্পত্তি বাজার এবং আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব এই উদ্বেগের অন্যতম কারণ। গত বছরের তুলনায় দুবাইয়ের পুঁজিবাজারে সূচকের দরপতন হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। যা মধ্য প্রাচ্যের অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি দরপতন। এর মধ্যে সম্প্রতি দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারের বৃহত্তম সংস্থা আবরাজ গ্রুপের পতন আস্থায় নাড়া দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে নতুন করে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে খুব কমই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের হার কমেছে রেকর্ড পরিমাণ।

দুবাইয়ের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই বিদেশি, অথচ প্রবাসীদের জন্য স্কুলের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা একদিকে বলছেন, খালি ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না, অন্যদিকে ডেভলপাররা ফ্ল্যাট তৈরি করেই যাচ্ছেন। ২০১৭ সালে দুবাইয়ের সম্পত্তি বাজারের পারফরম্যান্স ছিল খুবই খারাপ। মূলত বাড়িভাড়ার দাম কমে যাওয়ায় এ সমস্যার তৈরি হয়। দুবাইয়ের অন্যতম বড় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ইমার প্রপার্টিজের শেয়ারের দাম চলতি বছর ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

এর আগে ২০০৯ সালে একবার সংকটের মুখে পড়ে দুবাই। ঋণের ভারে ওই সংকট তৈরি হয়। সংকট কাটাতে আবুধাবি থেকে দুবাইকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা নিতে হয়েছিল। তবে ওই অবস্থা বিচক্ষণ করেছে বর্তমান ব্যাংকিং খাতকে। বিশ্লেষকেরা আশা করছেন অত বড় সংকট হয়তো আর তৈরি হবে না। তবে ঝুঁকি নিয়ে আশঙ্কা রয়েই গেছে। আবাসন ঋণ আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা না করে অনেক ব্যাংকই দেউলিয়া হয়ে যেতে হতে পারে।

এ অবস্থার অন্যতম কারণ যুবরাজের বিভিন্ন পদক্ষেপ। শুধু কাতার নয় ইরানের সঙ্গেও সম্পর্ক নষ্ট করছে দুবাই। এত দিন দুজনের সম্পর্ক বেশ লাভজনকই ছিল। ইরানে পুনঃরপ্তানি করে প্রতিবছর প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার বন্দর ফি আয় করত সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে দুই বিদ্রোহী প্রিন্সের সমর্থন নিয়ে ইরানের ওর যুক্তরাষ্ট্রের আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ এই ব্যবসায়িক সম্পর্কে ভীতি তৈরি করেছে। যেসব জাহাজ পণ্য নিয়ে প্রতি সপ্তাহে পারস্য সাগর পাড়ি দিত এখন মাসেও একবার এ পথ দিয়ে যায় না। ইরানের পেছনের দরজা হিসাবে দুবাইয়ের আকর্ষণ দিনদিনই কমছে। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও অ্যামিরেটসের পর্যবেক্ষকেরা ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড করপোরেশনের (আইআরজিসি) ব্যবহৃত একটি কারেন্সি এক্সচেঞ্জ নেটওয়ার্কের খোঁজ পায়। যুক্তরাষ্ট্র তার অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ওয়াচ তালিকায় দুবাইকে রেখেছে।

ইয়েমেনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য দুই যুবরাজকেই দায়ী করা হয়। ছবি: রয়টার্সইয়েমেনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য দুই যুবরাজকেই দায়ী করা হয়। ছবি: রয়টার্সতবে যুবরাজ যতই হঠকারী হোক না কেন, আমিরকে তো বিজ্ঞ হতেই হয়। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে দুবাইয়ের আমির মোহাম্মদ বন রশিদ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিদেশিরা যাতে দেশ ছেড়ে না যায় এ জন্য প্রাইভেট স্কুলের বেতন ও কর কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি কর্ম ভিসা চালুর করেছেন তিনি। এ ছাড়া ব্যবসার মালিকানা নিয়ে যে কড়াকড়ি ছিল তাও শিথিল করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে চীনের বিনিয়োগকারীরা এতে আগ্রহী হবেন। এর বিপরীতে দুবাইয়ের দুকম বন্দরের উন্নয়নে কাজ করবে চীন।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এক পক্ষের বিরোধপূর্ণ সম্পর্কে সুযোগ নেয় অপরপক্ষ। ইয়েমেন বন্দরে নিষেধাজ্ঞা আরোপে নতুন পথ খুলতে পারত বিশ্বের অন্যতম বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ডের। যেমন লিবিয়ার যোদ্ধা জেনারেল খলিফা হাফারের সঙ্গে জোট করলে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলো একই রকম সুবিধা পেতে পারে। সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হলে পুনর্গঠন চুক্তি হতে পারে। কিন্তু ইউএই উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাই সুযোগ তো নিতেই পারছে না বরং ভিকটিম হয়ে পড়ছে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১