• ঢাকা, বাংলাদেশ

ইউক্রেনে রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া 

 admin 
04th Jul 2025 7:56 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:   ইউক্রেনে রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিয়েভের আকাশ স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ জুলাই) ধোঁয়া ও বিস্ফোরকের গন্ধে ভারী হয়ে উঠে। এই হামলা ঘটে মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ফোনালাপে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘কোনো অগ্রগতি’ হয়নি।

এই ব্যাপক বিমান হামলায় ইউক্রেনের রাজধানীর একাধিক ভবন ও আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বর্ণনায় তিন বছরের যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি।

কিয়েভের জরুরি সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাতের হামলায় অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে শহর ও সামরিক কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৩ ঘণ্টাব্যাপী এই হামলায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার রেকর্ড ৫৩৯টি ড্রোনের মধ্যে ৪৭৬টি তারা ধ্বংস করেছে। এছাড়া রাশিয়া ১১টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে।

দেশটির আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, ইউক্রেনের নতুন ইন্টারসেপ্টর ড্রোন দ্বারা ৬০টি রাশিয়ান ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে।

শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোর পর্যন্ত শহরজুড়ে বিস্ফোরণ ও ড্রোনের শব্দের মধ্যে হাজার হাজার বাসিন্দা মেট্রো স্টেশন বা ভূগর্ভস্থ পার্কিং লটের মতো আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটিয়েছেন।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সাইবিহা বলেছেন, ‘কিয়েভে একেবারেই ভয়াবহ ও নিরবচ্ছিন্ন একটি রাত পার হয়েছে। এ যুদ্ধের অন্যতম ভীতিকর রাত এটি।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একে ‘দেশটির ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ বিমান হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন।

জেলেনস্কি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) আমাদের শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে প্রথম বিমান হামলা সতর্কতা বাজতে শুরু করে। রাশিয়া আবারও দেখিয়ে দিল যে তাদের যুদ্ধ ও সন্ত্রাস বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা নেই।’

প্রথমে শহরের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও নতুন ড্রোন-ইন্টারসেপ্টরগুলোর শব্দ শোনা গেলেও, সময় যত গড়িয়েছে, আকাশে ড্রোনের অবিরাম শব্দ এবং পরে আঘাতের শব্দ শোনা গেছে।

ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় শহরের একাধিক জেলায় ভবন ও স্থাপনায় আগুন ধরে যায় এবং বহুতল ভবন আংশিক ধ্বংস হয়। এছাড়া কিয়েভের রেলপথের একটি অংশ ধ্বংস হয় এবং আহতদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পোল্যান্ডের কনস্যুলেটও এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্ল সিকোর্স্কি। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ইউক্রেনে বিমান-বিরোধী গোলাবারুদ সরবরাহ পুনরায় চালু করতে এবং আগ্রাসীর ওপর কঠোর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের’ আহ্বান জানিয়েছেন।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়া প্রায় প্রতিরাতেই শতাধিক মিসাইল ও ড্রোন নিয়ে ইউক্রেনে বিমান হামলা চালাচ্ছে। এর আগের রেকর্ড সংখ্যক হামলা হয়েছিল মাত্র পাঁচ দিন আগে— যখন রাশিয়া ইউক্রেনে ৫৩৭টি ড্রোন ও মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ করেন এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কথা হয়েছিল। বেশ দীর্ঘ আলাপ ছিল। আমরা অনেক বিষয়ে কথা বলেছি, যার মধ্যে ইরানও ছিল। ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আরও কথা বলেছি। বিষয়গুলো নিয়ে আমি খুশি নই।’

পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারলেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘না’।

তিনি যোগ করেন, ‘আজ তার সঙ্গে আমার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিনি শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলবেন এবং পুতিনের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে তিনি ‘অত্যন্ত হতাশ’, কারণ তার মতে পুতিন যুদ্ধ থামানোর ‘কোনো চেষ্টাই করছেন না’।

শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোনালাপে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, রাশিয়া ট্রাম্পের সকল বক্তব্যের প্রতি ‘গভীর মনোযোগ’ দেয়।

পেসকোভ বলেন, আলোচনায় পুতিন ‘আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আগ্রহের পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং পছন্দ অনুসারে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে তা করা যায় কি না তা নিয়েও কথা হয়েছে।’

রাশিয়ার রাতের পর রাত হামলা এখন কিয়েভবাসীর জন্য নতুন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় শুক্রবার (৪ জুলাই) জানিয়েছে, রাতের হামলার পর শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা ‘উচ্চ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বেসামরিক নাগরিকদের ঘরের ভেতরে থাকতে, ঘর বায়ুচলাচল না করতে এবং সম্ভব হলে এয়ার পিউরিফায়ার সর্বোচ্চ সেটিংয়ে চালানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিমান হামলা সতর্কতা বন্ধ হওয়ার পর ইউক্রেনের বাসিন্দারা রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতি ট্রাম্পের সহনশীলতাকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন।

কিয়েভের এক বাসিন্দা ইউরি বলেন, ‘সবাই জানে পুতিনের মানসিকতা একটি গুন্ডার মতো। সে কেবল ক্ষমতা বোঝে, এবং দুর্ভাগ্যবশত ট্রাম্প সেই ক্ষমতা দেখাচ্ছেন না। রাশিয়া মনে করছে তারা দায়মুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারে এবং তাদের কর্মের জন্য কোনো শাস্তি পাবে না। এটি স্রেফ সন্ত্রাস।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে, রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সামরিক সহায়তাদাতা, যারা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন, রকেট লঞ্চার, রাডার, ট্যাংক ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তবে, ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর ইউক্রেনে সাহায্যের ভারসাম্য ব্যাপকভাবে বদলেছে, যা কিয়েভের জন্য মার্কিন সমর্থনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১