• ঢাকা, বাংলাদেশ

ইতিহাস যেখানে কথা বলে 

 admin 
07th Dec 2019 3:48 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

ডেডলাইন ১৭ এপ্রিল, একাত্তর। মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন। কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে কয়েকটি গাড়ি করে সাংবাদিকদের নিয়ে বৈদ্যনাথতলায় পৌঁছান তরুণ ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম। বৈদ্যনাথতলায় আমবাগানের চারদিকে রাইফেল হাতে কড়া প্রহরায় ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আম্রকানন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সমবেত সংগ্রামী জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী জয়ধ্বনি ‘জয়বাংলা’। খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে তৈরি শপথ মঞ্চে একে একে উঠলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ অন্যরা। বেলা ১১টায় শুরু হয় সেই কাক্সিক্ষত অনুষ্ঠান। শুরুতেই বাংলাদেশকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ঘোষণা করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন আহমেদের (বীরবিক্রম) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সশস্ত্র দল। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে চার বীরসন্তান গাইলেন জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। পরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার আবেগময় ভাষণের শেষে দৃপ্তকণ্ঠে আশাবাদ ব্যক্ত করে

বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রপতি জনগণনন্দিত ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ নির্যাতিত মানুষের মূর্তপ্রতীক শেখ মুজিব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আজ বন্দি। তার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম জয়ী হবেই।’ অনুষ্ঠান শেষে বিদেশি সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার আধাঘন্টা পর শপথ নেয়া নেতারাও আবার চলে যান ভারতে। এর আধাঘন্টার মধ্যেই হানাদার পাকিস্তানিবাহিনী মুজিবনগরে পৌঁছে লন্ডভন্ড করে দেয় পুরো এলাকা। কিন্তু এর আগেই বিশ্ব জেনে যায় নতুন এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খবর। নাম বাংলাদেশ।গান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
মুজিবনগর সরকারের স্মৃতিধন্য এই স্থানটির পরতে পরতে ইতিহাস। কথা বলে দেশেপ্রেমের। মুক্তির। ত্যাগ আর বীরত্বগাঁথার। ঐতিহাসিক স্মৃতিকে রাখার উদ্দেশ্যে শপথগ্রহণের স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। মূল কাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকার ‘মুজিবনগর কমপ্লেক্স’ প্রকল্প হাতে নেয়। মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ইতিহাসের

 

অনন্য সাক্ষী ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র’ সাজবে একাত্তরের আলোকে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৫শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ দ্রæত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রের জমির পরিমাণ ৮১ দশমিক ৭৬ একর। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আরো অতিরিক্ত ৪৯ দশমিক ২৭ একর জমির প্রয়োজন। শিগগিরই জমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের থিমে সাজানো পুরো কমপ্লেক্সটি হবে ইতিহাসের সঙ্গে পর্যটনের মেলবন্ধন। কমপ্লেক্সের নকশাটি স্থাপত্য বিভাগ হয়ে এখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। শিগগিরই একনেকে উঠবে। আগামী তিন বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাধীনতার শপথভূমি মুজিবনগরকে মুক্তিযুদ্ধের তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার সরকারের। বাঙালির নয়মাসের বীরত্বগাঁথা, রক্তাক্ত সংগ্রাম আর লক্ষ প্রাণের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার স্মৃতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পুরো কমপ্লেক্সকে আর্ন্তজাতিক মানের করে গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্রের কাজ শুরু করেন। মুজিবনগর আম্রকাননকে ঘিরে গড়ে উঠে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি কমপ্লেক্স, ১১টি সেক্টর চিহ্নিত করে বাংলাদেশের মানচিত্র, প্রশাসনিক ভবন, অডিটরিয়াম ও প্লাজা, পর্যটন মোটেল, শিশু পরিবার, মসজিদ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতি ভাস্কর্য। পরে বিএনপি-জামায়াতের সময় এটি অবহেলায় অনাদরে পড়ে থাকে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানকে আরো ইতিহাসসমৃদ্ধ করে পর্যটন কেন্দ্র করা হবে।

এদিকে আম্রকাননের জায়গার পরিমাণ প্রায় ৪০ একরের মতো। এখানে আমগাছ রয়েছে ১হাজার ১০০ টি। ৬ দফা আন্দোলনের রূপক ছয় স্তর বিশিষ্ট দুইটি গোলাপ বাগান। রয়েছে বঙ্গবন্ধু তোরণ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, অডিটোরিয়াম, মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান, শেখ হাসিনা মঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্র, মসজিদ, হেলিপ্যাড, ২৩টি কংক্রিটের ত্রিকোণ দেয়ালের সঙ্গে উদীয়মান সুর্যের প্রতিকৃতিকে প্রতীক করে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, স্বাধীনতা মাঠ, স্বাধীনতা পাঠাগার, বিশ্রামাগার, পোষ্ট অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, শিশুপল্লী, ডরমেটরি ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র, ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া সম্মেলন, পাকবাহিনীর আত্মসর্ম্পন, রাজাকার, আল-বদর, আল শামসদের সহযোগিতায় বাঙালি নারী পুরুষের ওপর পাক হানাদার বাহিনির নির্যাতন, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ৪শ’ ভাস্কর্য।

স্মৃতিসৌধসহ প্রতিটি ভাস্কর্য আরো সুন্দর এবং পরিশিলিত হবে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর জেলাপ্রশাসক মো. আতাউল গনি।  রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, গার্ড অব অনার দেয়া সবকিছুর ভাস্কর্য থাকবে। ইতিহাসের থিম ধরে পুরো মুজিবনগরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। শিশু-বৃদ্ধসহ সব ধরণের শ্রেণী পেশার মানুষ এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পাশাপাশি স্থাপত্যশৈলিতে মুগ্ধ হবেন। কৃত্রিম লেক থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের প্যানোরমা তৈরি হবে। পাশে সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি শাখা থাকবে যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা মুজিবনগর সরকারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। জেলাপ্রশাসক বলেন, বর্তমান স্মৃতি কমপ্লেক্সের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শিশুপল্লী, পর্যটন মোটেল, বনবিভাগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সবকিছু স্থানান্তর হবে। এখানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের স্থাপনা ছাড়া কিছুই থাকবে না বলে জানান মো. আতাউল গনি।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১