
২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘পরিবর্তনে’র স্লোগান তুলে সে সময় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল বারাক ওবামা। ‘দ্যা চেঞ্চ’ স্লোগানকে পুঁজি করে তারুণ্যকে কাছে টেনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। বারাক ওবামার সেই স্লোগানই পছন্দ ঐক্যফ্রন্টের। তাদের ইশতেহারের প্রধান স্লোগানই হচ্ছে ‘পরিবর্তন’। তারুণ্যকে দেয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব।
‘পরিবর্তন’ ছাড়াও ‘ইশতেহারে দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আনবে পরিবর্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক শীর্ষক স্লোগানও থাকছে।
কোটা সংস্কার কিংবা চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো বা চাকরিতে আবেদন ফি বা পে অর্ডার না থাকার অঙ্গীকার থাকছে ইশতেহারে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতের বিষয়টিও গুরুত্ব দেবে ঐক্যফ্রন্ট। কমানো হবে ইন্টারনেটের দামও।
এছাড়া গণমাধ্যমের অধিকার বা কণ্ঠরোধ না করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও দেয়া হবে গুরুত্ব। আইনের সংস্কার বা সুশাসনকেও রাখা হবে পরিবর্তনের ইশতেহারে। প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসার আসনেই বসাবে বিরোধী দলকে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পূর্ব ঘোষিত ভিশন-২০৩০ রূপকল্পও গুরুত্ব পারে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে।
মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তকে গুরুত্ব দিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমানো, কৃষকের স্বার্থ, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের কৌশল ও সুন্দরবন বাঁচানোর প্রতিশ্রুতিও থাকছে ইশতেহারে। ডিজিটাল আইনসহ কিছু অপআইন সংশোধন করার ঘোষণাও থাকছে। পরিবহন সেক্টরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথাও থাকছে। যানবাহনে বা গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফভাড়া কার্যকর করার অঙ্গীকারও থাকছে ইশতেহারে।
একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ইশতেহারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সংস্কার, কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে নিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের কথাও উল্লেখ থাকছে।
সূত্রটি জানায়, ৩৭টি বিষয়ে ২৫৬ দফা সংবলিত ‘ভিশন-২০৩০’ তুলে ধরার পর দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি হাইকমান্ড। এটি কাজে লাগিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতি জনআস্থা ও বিশ্বাস আরও কিভাবে সুদৃঢ় করা যায়, সে লক্ষ্য নিয়েই তৈরি হচ্ছে ইশতেহার। এর মূল ভিত্তি হবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা।
জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনার প্রত্যয় থাকবে ইশতেহারে। সুশাসন, সুনীতি ও সু-সরকারের (থ্রি-জি) সমন্বয় ও বৃহত্তর জনগণের সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’গড়ার অঙ্গীকার থাকবে এতে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দলীয়করণের অবসান ঘটিয়ে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকবে। ক্রীড়াক্ষেত্রে শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, গুরুত্ব দেয়া হবে নিয়মিত টানা অনুশীলনের দিকে, খেলায় শতভাগ মনোযোগ দেয়ার লক্ষ্যে খেলোয়াড়দের আর্থিক বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার প্রতিশ্রুতি থাকবে।
ইশতেহার কমিটির অন্যতম সদস্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইশতেহার হবে জনগণের জন্য। সুতরাং এখানে জনগণকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ইশতেহারে প্রয়োজনীয় সময় অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। যেমন- ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমরা এক বছরের মধ্যে কী করবো, দুই বছরের মধ্যে কী কী করবো- সেগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আইনের নামে বাংলাদেশে যেসব আইন চালু আছে এগুলো বন্ধের ঘোষণা থাকবে। এছাড়া আমাদের অন্যতম গুরুত্ব থাকবে কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়। ঢাকার মানুষও যেন ন্যায্য মূল্য পায়। সবদিকে সামঞ্জস্য রাখা হবে। আমরা এমন ইশতেহার দেব যাতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তরা বেশি উপকৃত হন।
Array