
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির তদন্ত হঠাৎ করেই মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। দেশজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করা এই ঘটনার তদন্ত বন্ধ থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে রাঘববোয়ালরা। রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেওয়ার পেছনে ইসির ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ২৫ জন জড়িত বলে দুদক প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু জালিয়াতি উদ্ঘাটনের এক মাস পরও আইনের আওতায় আসেনি অধিকাংশ অভিযুক্ত। আবার অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজনের ব্যাংক ব্যালান্সসহ সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান শুরুর অনুমতি চেয়েছিল চট্টগ্রাম দুদক। ২২ সেপ্টেম্বর এটির অনুমোদনও দেয় কেন্দ্রীয় দুদক। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কারও বিরুদ্ধে নোটিশ ইস্যু করা হয়নি। করা হয়নি জিজ্ঞাসাবাদও। জালিয়াতির এ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের মধ্যে দুদকের সন্দেহভাজন অভিযুক্ত আছেন মাত্র চারজন। গত এক মাসে নতুন কোনো গ্রেপ্তার নেই। এদিকে কমিশন থেকে উধাও হওয়া সাত ল্যাপটপের দুটি উদ্ধার হলেও বাকিগুলো এখনও রয়ে গেছে জালিয়াত চক্রের কাছে। ল্যাপটপ উদ্ধারেও নতুন করে অভিযান চালানো হয়নি।
জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে এ প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তারা আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছেন।’ হঠাৎ করে কার্যক্রমে স্থবিরতা এলো কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই। তদন্ত কাজও এগিয়ে চলছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়তো কম। কিন্তু আমরা বসে নেই।’ দুদক চট্টগ্রামের কেউ স্বনামে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টি ঢাকা থেকে মনিটর করা হচ্ছে। এ জন্য কাজ করছে চার সদস্যের একটি বিশেষ টিম। যে সাতজনের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমোদন মিলেছে তাদের ব্যাপারেও এখন সিদ্ধান্ত নিবে বিশেষ এই টিম।’
দুদকের প্রতিবেদনে নাম আসে যাদের: কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পেছনে ইসির ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ২৫ জন জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দুদক। ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠানো এ প্রতিবেদনে দুই নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সাতজনের সংশ্নিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় তাদের সম্পদ অনুসন্ধানেরও অনুমতি চান চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। এতে চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখের নাম রয়েছে। লতিফ শেখ বর্তমানে পাবনার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। অন্যরা হলেন- ঢাকা এনআইডি প্রজেক্টের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাগর, একই শাখার সাবেক টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, চট্টগ্রামের পটিয়ার বড় উঠান ইউনিয়নের শাহানুর মিয়া, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অস্থায়ী অপারেটর জনপ্রিয় বড়ুয়া (পটিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী রাসেল বড়ুয়ার চাচাতো ভাই) ও চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন। তাদের মধ্যে সাগর ও সত্য সুন্দর দে এরই মধ্যে ভারতে পলিয়ে গেছেন বলে ধারণা করছেন দুদকের এনফোর্সমেন্ট শাখার এক কর্মকর্তা।
ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে অন্যরাও: এনআইডি জালিয়াতিতে শাহনূর ও জয়নালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও এ দু’জনের সিন্ডিকেটে থাকা সবাই আছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ দুদকের প্রতিবেদনে শাহনূরের খালাতো ভাই কক্সবাজার সদর নির্বাচন অফিসের অপারেটর নঈম ইসলাম, বোয়ালখালী নির্বাচন অফিসের অপারেটর শাহ আলম, শাহানূরের খালাতো দুই বোন ইয়াছমিন আক্তার রূপা, ফারজানা আক্তার, ভাগিনা শহিদ উল্লাহ, ভাগ্নে শারমিন, জেঠাতো ভাই শাহেদ, তার বন্ধু রামু নির্বাচন অফিসের অপারেটর হিরু ও পাঁচলাইশ নির্বাচন অফিসের অপারেটর তাছলিমা আক্তারের নাম আছে। দুদক বলছে, আউট সোর্সিং প্রতিষ্ঠান আইপিএলের কর্মকর্তা দ্বিজেন দাশের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা দিয়ে তাদের সবাইকে কমিশনে নিয়োগ দিয়েছেন শাহানূর মিয়া। অন্যদিকে জয়নাল আবেদিনের সিন্ডিকেটেও তার ছয় থেকে আট জন আত্মীয় নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কার্যালয়ে কাজ করছেন বলে উল্লেখ করে দুদক। তাদের মধ্যে আছে তার আত্মীয় নুর আহমেদ, বোনজামাই বয়ান উদ্দিন। রিশি, সৈকত বড়ূয়া, শাহ জামাল ও পাভেল বড়ূয়াও ছিল জয়নালের অবৈধ কাজের সহযোগী।
Array