
বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন অরগানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে কাতার। আগামী বছরের জানুয়ারিতেই ওপেকের সঙ্গে ৫৭ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করবে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আসন্ন ওপেক সম্মেলনের প্রাক্কালে সংস্থাটি ত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিল কাতার।
কাতারের রাজধানী দোহায় সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি মন্ত্রী সাদ অল-কাবি জানিয়েছেন, জানুয়ারিতেই ওপেক গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসছে কাতার। জ্বালানি তেলের পাশাপাশি এবার জোর দেওয়া হবে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের ওপর। এই সিদ্ধান্ত প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্পের উন্নয়নে কাতারি প্রচেষ্টার প্রতিফলন। বছরে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ৭৭ মিলিয়ন টন থেকে বাড়িয়ে ১১০ মিলিয়ন টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তেল নয় গ্যাসও আমাদের শক্তির জায়গা। সেটিকে প্রাধান্য দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে আরব উপসাগরীয় দেশ কাতার। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিসর, বাহারাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। কাতারের ওপর চার দেশ যৌথভাবে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওপেক গোষ্ঠী থেকে কাতারের বেরিয়ে আসার এটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওপেক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেও চলতি সপ্তাহে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ওপেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে কাতার। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত এতটাই সহজ ছিল না। তবে ওপেক থেকে বেরিয়ে এলে তেল উৎপাদনে কোনও প্রভাব পড়বে না। তেলের পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে আরও বেশি জোর দেওয়া হবে।
ওপেক গোষ্ঠীতে তেল উৎপাদনের তালিকায় নিচে থাকলেও, বিশ্বে তৈল ভাণ্ডারের ১৩ শতাংশ রয়েছে কাতারে। প্রাকৃতি গ্যাস রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে দেশটি। বিশ্বের চাহিদার ৩০ শতাংশ লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) যোগান দেয় কাতার।
এর আগে ২০১৭ সালের ৫ জুন সৌদি জোটের কাতার বিরোধী অবরোধের ঘটনায় সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটে জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৬০ মার্কিন ডলার, যা দেশটিকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী দেশে পরিণত করেছে।
ওপেক হচ্ছে বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন। ১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠিত হলেও ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ওপেক এর বর্তমান সদস্য দেশ- অ্যাঙ্গোলা, আলজেরিয়া, ইরাক, ইরান, ইকুয়েডর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, লিবিয়া, সৌদি আরব, গেবন, ইকুয়াটরিয়াল জিউনিয়া। ইন্দোনেশিয়া ২০০৮ সালে ওপেক থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। সারা পৃথিবীতে তেলের দাম নির্ধারণ এবং রপ্তানি ও আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ওপেক। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওপেক গঠন করা হয়।
Array