• ঢাকা, বাংলাদেশ

করোনার নির্দেশনা মানতে নজরদারিতে গুরুত্ব কম 

 admin 
17th May 2020 12:24 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি হালকা হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া নির্দেশনা ঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে না। এ বিষয়ে নজরদারির প্রাতিষ্ঠানিক বা কাঠামোগত ব্যবস্থা নেই। নির্দেশনা মানার বিষয়টি সাধারণ মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

‘কোভিড–১৯ মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কারিগরি নির্দেশনা’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেই রয়ে গেছে। নির্দেশনাগুলো মানুষ মানছে কি না, কত মানুষ মানছে, না মানলে কেন মানছে না—এসব বিষয়ে নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই।

আটজন বিশেষজ্ঞ ২০ ধরনের স্থান (বাড়ি, হোটেল, অফিস, শপিং মল ইত্যাদি), ১৪ ধরনের সামাজিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কারাগার, মসজিদ ইত্যাদি) এবং ১৬ ধরনের জনগোষ্ঠী (যেমন শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী এমন) জন্য পৃথক নির্দেশনা তৈরি করেন। ৭ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৬২ পৃষ্ঠার এই নির্দেশনা তাদের ওয়েবসাইটে দেয়।

এই নির্দেশনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেছেন, ‘নির্দেশনা মানা হচ্ছে না, তা আমরা বুঝতে পারছি। আমরা এখন মানার বিষয়ে নতুন বিকল্প নিয়ে কাজ করছি।’

এসব নির্দেশনার মধ্যে দুটি বিষয় সাধারণ ছিল: মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। একজনের হাঁচি–কাশি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। গতকাল শনিবার এই প্রতিবেদক ঢাকা শহরের কিছু এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন, নজরদারি থাকলে নির্দেশনা মেনে চলার সম্ভাবনা বাড়বে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ওপর নজরদারি করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে সম্ভব না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে।

রাস্তাঘাট–দোকানপাট

রাজধানীর বাংলামোটর–হাতিরপুল এলাকা টাইলসের ব্যবসার জন্য নাম কুড়িয়েছে। ১০ তারিখ থেকে এই এলাকার দোকানপাটও নিয়মিত খুলছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে অর্ধেকের বেশি দোকান খোলা দেখা গেছে।

ফেয়ার প্যালেস নামের দোকানে ঢুকতেই এক যুবক হাতে জীবাণুনাশক ঢেলে দিলেন। যুবকের নাম জাহিদ হাসান। তিনি বললেন, একসঙ্গে তিনজনের বেশি ক্রেতাকে দোকানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। যাঁরা ঢুকবেন প্রত্যেককেই হ্যান্ড সেনিটাইজার দেওয়া হয়। খরিদ্দার চলে গেলে দরজার হাতল জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমরা না, এলাকার সব দোকানই সরকারের নির্দেশ মানছে।’

কিছুদূর এগিয়ে গেলেই হাতিরপুল কাঁচাবাজার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বাজারের অনেক দোকান এখন নিয়মিত রাস্তায় বসছে, বিশেষ করে মাছের দোকানগুলো। কিন্তু পুরো বাজারে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি অবহেলিত। ভিড়ের মধ্যেও একজন সবজি বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার, গরম বড্ড বেশি। মাস্ক পরলে বেশিক্ষণ টেকন যায় না।’

• প্রতিটি নির্দেশনায় পৃথকভাবে প্রচার দরকার।
• দরিদ্রের বিনা মূল্যে মাস্ক দেওয়া উচিত।
• নির্দেশনা অমান্যে শাস্তি দিতে হবে।

রাস্তায় বা দোকানে অধিকাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক। রিকশাওয়ালা, ফল বিক্রেতা, মুদি দোকানি, মাছ–মুরগি বিক্রেতা, গাড়ি চালক সব শ্রেণি–পেশার মানুষের মুখে নানা ধরনের নানা রঙের মাস্ক। এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালের মোড়ে বাটার দোকানে ১৮ জন কর্মীর সবার মুখেই গতকাল মাস্ক ছিল। দোকানের ব্যবস্থাপক হাফিজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ১০ থেকে ১২ জনের বেশি খরিদ্দার কখনো একসঙ্গে দোকানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

শাহবাগ এলাকার আজিজ সুপার মার্কেটে ঢোকার আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। তা ছাড়া শরীরে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে জীবাণুনাশকও ছিটানো হচ্ছে। সব মার্কেটের মতো এই মার্কেটেও চিরাচরিত ভিড় নেই। কিছু দোকান বন্ধ। একটি বইয়ের দোকানে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই মালিক ও কর্মচারী মুখোমুখি বসে গল্প করছিলেন। কারও মুখে মাস্ক ছিল না। দোকানের বাইরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক মুঠোফোনে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে কথা বলছিলেন। মুখে কোনো মাস্ক ছিল না।

দুপুরের পর পর্যন্ত কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মহাখালী এলাকাতে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। কিছু মানুষ মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন। অনেকে রাস্তায় বা দোকানে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলছেন না।

মিরপুর ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সদস্যসচিব আতিকুর রহমান বলেছেন, এলাকার ৯০ শতাংশ দোকান বন্ধ। যাঁরা খুলছেন তাঁদের মধ্যে দু–একজন হয়তো বিধি মানছেন না। ওই দু–একজনই তো বিপদের জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন, জটলা কমাতে পুলিশ বা সেনা টহল বাড়াতে হবে।

পুলিশের বিপদ

গতকাল হাতিরপুলে ইস্টার্ন প্লাজার সামনে, বাটা সিগন্যালের মোড়ে এবং শাহবাগ এলাকায় পুলিশের গাড়ি চোখে পড়ে। প্রতিটি গাড়ির চালকের মুখে মাস্ক ছিল। তবে গাড়ির পেছনে বসে থাকা সবার মুখে মাস্ক ছিল না। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, মাস্ক পরা ঝামেলার হলেও পরা উচিত।

গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৩৮৪ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন আটজন। পুলিশে সংক্রমণ বেশি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো কি হলো না তার চেয়ে বড় কথা কাজের ধরনই পুলিশের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার রীতি অনুসরণ করে আসামি ধরা সম্ভব না। পলাতক করোনা রোগী উদ্ধারসহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার, আসামি ধরার মতো কাজগুলো ঝুঁকি নিয়েই করতে হচ্ছে।’

মো. সোহেল রানা আরও বলেন, পুলিশের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৈরি করা নির্দেশিকা পুলিশ কর্তৃপক্ষ দেখেছে। তারাও পুলিশের জন্য নির্দেশনা তৈরি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

এখন করণীয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস বহুদিন থাকবে। কত দিন তা কেউ জানে না। তবে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুশীলনে এখনই সবাইকে নামতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দেশনাগুলো ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখাই যথেষ্ট না। এসব নির্দেশনা সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র ছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে এই কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘রাষ্ট্রকে দুটি কাজ করতে হবে। জনপরিসরে এসে ঝুঁকি তৈরি করছে এমন ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দরিদ্র মানুষের জন্য বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে।’

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১