• ঢাকা, বাংলাদেশ

করোনার টিকা নেয়া সম্পর্কে যা বললেন আলেমরা 

 admin 
29th Jan 2021 3:35 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারির নাম করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২২ লাখেরও বেশি মানুষ। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এ ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষায় ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন (টিকা) আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশ্ববাসীর জন্য এটি একটি সুখবর। সম্প্রতি টিকা নেয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্য। এ সম্পর্কে সচেতন আলেম-সমাজ তাদের বিবৃতি তুলে ধরেছেন।

গণমাধ্যমের সঙ্গে করোনার টিকা নেয়া প্রসঙ্গে মতামত ব্যক্ত করেছেন দেশ ও দেশের বাইরের ইসলামিক স্কলাররা। সব ভয়-ভীতি ও সন্দেহ-সংশয় উপেক্ষা করে সবার প্রতি করোনার টিকা নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

দেশের বিজ্ঞ আলেম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন কী উপাদান দিয়ে তৈরি; সেটা আমার জানা নেই। যদি হারাম কোনো কিছুর ব্যবহারের মধ্যমে তা তৈরি করা হয় তবে এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলেমদের ফতোয়া লাগবে।

কেননা চিকিৎসার ক্ষেত্রে হালাল জিনিস পাওয়া না গেলে হারাম জিনিসের অনুমোদন দেয় ইসলামি শরিয়ত। আর যে কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে শরিয়ত কখনো নিষেধ করে না। বরং রোগ হলে চিকিৎসা নেয়া আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। তাই করোনার প্রতিষেধক হিসেবে আবিস্কৃত করোনার টিকা নেয়ায় কোনো সমস্যা নেই।

সুতরাং দেশের জনগণ নির্ভয়ে টিকা নিতে পারেন। কেননা ভ্যাকসিন যারা তৈরি করেছেন তারা অনেক গবেষণা ও রিসার্চ করেই তা তৈরি করেই বাজারে ছেড়েছেন। আর করোনার প্রতিষেধক হিসেবেই চিকিৎসকরা এটাকে অনুমোদন দিয়েছেন।

সাধারণ জনতার ছড়ানো গুজবে কান না দিয়ে ভ্যাকসিন নেয়াটাই জরুরি। কোথায় ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে তা নিয়ে ভাবারও প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন আল্লামা মাসঊদ।

মুফতি হামজা ইসলাম

দাতব্য প্রতিষ্ঠান আল-মারকাজুল ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুফতি হামজা ইসলাম আলেমদের মধ্যে প্রথম মহামারি করোনার টিকা নিয়েছেন। তিনি বলেন,

‘টিকা গ্রহণ নিয়ে কোনো গুজবের ঘটনা যেন না ঘটে; সে জন্য আমি আগে টিকা নিয়েছি। আশা করি, এর মাধ্যমে সবার মাঝে একটি ভালো মেসেজ যাবে। তরুণ উদ্যোগী আলেম সবাইকে নির্ভয়ে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতেই প্রথম টিকা নিয়েছেন।’

মুফতি হামজা বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা একবার ট্রাই করে দেখুন। ইনশাআল্লাহ করোনার টিকা আমাদের জন্য উপকারী হবে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।

করোনা শুরু হওয়ার সময়ে ঘটনা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন,

‘মহামারি করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর এতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনে এগিয়ে এসেছে আল-মারকাজুল ইসলামী। করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটা অজানা আতঙ্ক ছিল। যে কারণে করোনা আক্রান্তদের মরদেহ ফেলে রেখে যাওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে এ দেশে।

সেই দুর্যোগ মুহূর্তে মানবতার সেবায় আমরা সবার আগে মৃত ব্যক্তিদের চূড়ান্ত দাফন-কাফনের কাজ সম্পন্ন করেছি। তারপর অনেকেই এ কাজে এগিয়ে এসেছেন। আল-মারকাজুল ইসলামী সব সময় মানবতার সেবায় সবার আগে এগিয়ে থাকতে চায়। সেই ধারাবাহিকতা থেকেই আমি নিজেই আজ মহামারি করোনার টিকা নিয়েছি।’

মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ

শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘অনেক গবেষণা করে করোনার প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন) আবিস্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইমলামি শরিয়তের হুকুম হলো, ‘আল্লাহ রোগ দিয়েছেন; আল্লাহই ভালো করবেন। এ আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করে যদি কেউ পথ্য বা ঔষধ গ্রহণ করে; তবে এটাই আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

‘প্রত্যেক রোগের শেফা রয়েছে।’

মানুষ হয়তো গবেষণা করে সে রোগের ঔষধ বের করতে পারে অথবা পারে না।

বর্তমান সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে করোনা ভাইরাসের যে টিকা আবিস্কার করেছেন সে বিষয়ে আমি বলবো- অন্তরে এ বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহই রোগ ভালো করবেন। তাই ঔষধ ওসিলা হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ইসলামে কোনো নিধেষ নেই।

শায়খ আহমাদুল্লাহ

বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহও করোনার টিকা নিতে সবাইকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হলো রোগ হওয়ার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর সতর্কতা হিসেবে যেটিকে আমরা ভ্যাকসিন বা টিকা বলে থাকি তা ইসলামে সম্পূর্ণ অনুমোদিত একটি বিষয়।’

রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি সকালবেলা ৭ টি আজওয়া খেজুর খায় তাহলে তাকে কোনো রোগ স্পর্শ করবে না। এই যে রোগ হওয়ার আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা’-এটি পবিত্র হাদিস থেকেই প্রমাণিত।

সুতরাং টিকা কিংবা ভ্যাকসিন মানুষের জন্য সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এটি গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল বিরোধী কাজ নয়। বরং এটা হাদিস অনুমোদিত ইসলামের অনেক বড় একটি শিক্ষা।

মুফতি হাফেজ মোহাম্মদ ফায়েকুদ্দীন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত মসজিদে আবু হুরায়রার ইমাম মুফতি হাফেজ মোহাম্মদ ফায়েকুদ্দীন বলেন, ‘ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এতে মানুষের জীবন ঘনিষ্ট অনেক বিষয় নিয়ে সুন্দর সমাধান রয়েছে।

কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের কথায় আসি-পৃথিবীজুড়ে মানুষ এ ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য হাহাকার করছে। জীবনের নিভু নিভু আলো পুনরুজ্জীবিত করতে চাচ্ছে। এটা কোনো বিনোদনের বিষয় নয়। বরং বাঁচা-মরার প্রশ্ন।

আর ইসলামে জীবন রক্ষা করা ফরজ। তাই জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন (টিকা) ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামি শরিয়তের একটি স্বতঃসিদ্ধ উসুল আছে-

‘প্রয়োজন কখনো কখনো নিষিদ্ধ কোনো কিছুকে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বৈধতা দেয়।’

সুতরাং এ উসুলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন ব্যবহারে ইসলামের কোনো বাধা নেই। যদিও এতে হারাম কিছু থাকে।’

মনে রাখা জরুরি

জীবন বাঁচানো ফরজ। কোনো অহেতুক যুক্তি-তর্কে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর ভাইরাসমুক্ত থাকতে ভ্যাকসিন নিতেও অনেকের মাঝে যে ভয়-ভীতি কাজ করছে; তা থেকে বেরিয়ে টিকা গ্রহণ করা আবশ্যক। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ-অবৈধ দ্বিধাদ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞ আলেমদের মতামত ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া বৈধ। আর তা নিতেই উৎসাহিত করেছেন তারা। যেমনিভাবে উদ্বোধনের প্রথম দিনেই টিকা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মুফতি হামজা ইসলাম।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১