
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, সম্প্রতি শুরু হওয়া এই সংস্কৃতি আমাদের পরিবার ও সমাজকে কলুষিত করছে। এ ধরণের অপরাধ বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও সচেষ্ট। কাজেই ক্যাসিনো নির্মূল এই অভিযান চলমান থাকবে। পুলিশকে আরো বেশি জনবান্ধব করতে আমরা কাজ করছি। শনিবার সকালে কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধ বিষয়ক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে রাজধানীর এফডিসিতে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিযোগিতার আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অতিরিক্ত আইজিপি আরো বলেন, কিশোর অপরাধের ব্যপকতা পারিবারিক ও সামাজিক ব্যর্থতারই প্রতিফলন। এ অপরাধ প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শতভাগ সফল না হলেও বিফলও নয়। তবে আরো সফলতা অর্জনের জন্য কিভাবে কার্যকর ভূমিকা নেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট আছি। কিশোর অপরাধের কারণে সৃষ্ট হত্যাকান্ড ও অন্যান্য দুঃখজনক ঘটনা। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা চাপ নেই। এমনকি এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো অবহেলা নেই। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সেইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার না করে কিশোর-তরুণদের সৃজনশীলতা বিকাশে ব্যবহার করতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান বলেন, কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদ্বিচ্ছা খুবই জরুরি। রাজনীতিবিদরা যাতে তাদের মিটিং-মিছিল সমাবেশে অনৈতিক ভাবে কিশোর-তরুনদের ব্যাবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসব গ্যাং বাহিনী বা কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টানা না গেলে আদনান ও রিফাত হত্যার মতো আরো অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কিশোর অপরাধ দমনে আরো কঠোর হতে হবে। সেইসঙ্গে বাবা-মাকে সন্তানদের প্রতি আরো যত্মবান হতে হবে।
তিনি আরো বলেন এ সকল উঠতি বয়সের কিশোররা তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইভটিজিং, সংঘবদ্ধ হয়ে মারামারি, গ্রুপ করে বেআইনিভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি বা মটরসাইকেল চালানো, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি থেকে শুরু করে খুনাখুনির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর গ্যাংরা।
কিরণ বলেন ত্রুটিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রনহীন ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের অপব্যাবহার, শিথিল সামাজিক বন্ধন, বাবা-মায়ের অতি আদর-অনাদর, সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, মাদকের সহযলভ্যতা, নৈতিক শিক্ষার অভাব, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোররা গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আকৃষ্ট করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যাবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে।
প্রতিযোগিতায় ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়াকে হারিয়ে করে ঢাকা কলেজ বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক পারভেজ রেজা, সাংবাদিক নেছারুল ইসলাম খোকন, উন্নয়ন বিশ্লেষক ড. এস এম মোর্শেদ এবং জেন্ডার এক্সপার্ট নিশাত সুলতানা।
Array