• ঢাকা, বাংলাদেশ

ক্রিকেটারদের ধর্মঘট : যেভাবে সূত্রপাত, যা হয়েছে আন্দোলনে 

 admin 
21st Oct 2020 3:05 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

হঠাৎ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে যেন চেপে বসেছিল অশরীরি আত্মা। ২০১৯ সালের অক্টোবরের ২১ তারিখ।  সেদিন ছিল সোমবার। দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এ দিনটি নিশ্চিত লেখা থাকবে কালো অক্ষরে। দুপুর থেকেই মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কানাঘুষা। যেন  কিছু একটা হবে, হয়েছেও তাই। এমন কিছু হয়েছে যা কেউ কল্পনা করেনি ঘুণাক্ষরে, ভাবতে পারেননি অনেকেই। হতভম্ব করে দিয়েছে দেশের ক্রিকেটের নীতিনির্ধারকদের।

বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। কিছুক্ষণ পরই বিসিবি একাডেমি মাঠের পেছন দিক দিয়ে হুড়মুড় করে ক্রিকেটাররা  আসেন। আগে থেকেই হাজির ছিলের দেশের সব গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তারা ঢুকতেই গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সামনের সারিতে ছিলেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমের মতো তারকা ক্রিকেটাররাও।

এটা মূলত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের করার কথা ছিল। তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বোর্ডে লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার কথা ছিল ১৫ অক্টোবর। পরে আন্দোলন চলে যায় জাতীয় ক্রিকেটারদের হাতে। ধর্মঘট হয় বড় পরিসরে। বিসিবিকে কোনো সময় না দিয়ে ক্রিকেটই বন্ধ করে দেন তারা।  সাকিব আল হাসান এতে যুক্ত হয়ে নেতৃত্বে আসেন। ২০ তারিখ একটি রেস্তরাঁয় সভা করে ২১ তারিখ ধর্মঘট ডাক দেন। সবাই যাতে বুঝতে না পারে এজন্য বিকল্প পথে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা হয়। এরপর ক্রিকেটাররা একে একে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। প্রথমে ১১ দফা দাবি দিলেও পরে আরও দুই দফা সংযুক্ত করে মোট ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

জানতেন না মাশরাফি

সব ক্রিকেটার উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না মাশরাফি। কারণ তাকে জানানো হয়নি। অভিমান করে মাশরাফি বলেছিলেন, অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে, দেশের ক্রিকেটের এমন একটি দিনে আমি কেন উপস্থিত ছিলাম না। আমার মনে হয়, প্রশ্নটি আমাকে না করে, ওদেরকে করাই শ্রেয়। এই উদ্যোগ সম্পর্কে আমি একদমই অবগত ছিলাম না।

বিসিবি সভাপতির হুংকার

পরদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি স্রেফ জানিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করা হবে। তিনি জানান, যেসব দাবি তারা জানিয়েছে আলাপ-আলোচনা করলেই সমাধান হতো। পাপন সেদিন আরও জানিয়েছিলেন, এমন কিছু হয়েছে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। তার একটাই কথা, খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক। সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়।

সাবেকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

ধর্মঘটের পর দৈনিক আমাদের সময়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, খালেদ মাহমুদ সুজন ও খালেদ মাসুদ পাইলট।

রকিবুল হাসান মনে করেন, ক্রিকেটারদের দাবি যৌক্তিক ছিল, কিন্তু তাদের উপস্থাপনের পদ্ধতি ভুল ছিল। সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় বলেছিলেন, আমরা সবাই ভাই ভাই, কোনো বিভেদ চাই না।

তাদের দাবি নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য আগে থেকেই আহ্বান করছিলেন বলে জানিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছিলেন, ক্রিকেটারদের দাবি যৌক্তিক। তার ভাষ্য ছিল বিসিবি সভাপতিকে কেউ ভুল বোঝাচ্ছিলেন, তিনি বোর্ড সভাপতিকে সব মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাপনের বৈঠক

ক্রিকেটাররা পাপনের হুংকারে কিংবা আহ্বানে কোনোটাই সাড়া দেননি। অগত্যা বিসিবি সভাপতি দেখা করতে যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বোর্ড পরিচালক ও সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও পাপনের সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি।

দফায় দফায় বৈঠক

ধর্মঘটের পর থেকেই বিসিবিতে ক্রিকেটের নীতিনির্ধারকদের দফায় দফায় বৈঠক হয়। কোনো ক্রিকেটারই তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন না। কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না ফোনে। ক্রিকেটাররাও মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন। ২২ তারিখ বিসিবি সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের মাঠে ফেরার আহ্বান করলেও তারা সাড়া দেননি। পরদিন ক্রিকেটাররা পরে আবার গুলশানের একটি রেস্তরাঁয় মিলিত হন। ওখানে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন।

অবশেষে সমাধান

২৩ তারিখ রাতে গুলশানের রেস্তরাঁ থেকে ক্রিকেটাররা আসেন বিসিবি কার্যালয়ে। রাত ১০টার দিকে তারা মিটিং শুরু করেন বোর্ড সভাপতি ও পরিচালকদের সঙ্গে। এখানে সবকিছুই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন বিসিবি সভাপতি। আর কিছু দাবি বিসিবি পরবর্তীতে আলাপ আলোচনা করে পূরণ করে দেবেন বলে কথাও দেন। ক্রিকেটাররাও মাঠে ফেরার আশ্বাস দেন।

সমাধানের পর যা বলেন পাপন-সাকিব

রাতে বৈঠকের পর ক্রিকেটারদেরদের নিয়েই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন পাপন। এ সময় তিনি ক্রিকেটারদের ধন্যবাদ জানান বিসিবির সঙ্গে বসার জন্য। এরপর বলেছেন, এসব দাবি সমাধানযোগ্য ছিল। আর সাকিব প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, আমরা আপাতত খুশি। যে আলোচনা হয়েছে তাতে খুশি আমরা।

সাকিব জানান, প্রথমে দেওয়া ১১ দফা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কারণ পরে যে দুটি দিয়েছি সেগুলো বোর্ড মাত্র দেখেছে। তাই ১১ দফার দাবি যেগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব সেগুলো বোর্ড মেনে নেবে দ্রুত।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১