
করোনার প্রথম আঘাতে তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্য সরকার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য প্রায় আট হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছিল। ঘোষণা করেছিল অন্যান্য প্রণোদনা। প্রথম ঢেউয়ে করোনার অভিঘাতের রেশ কাটতে না কাটতে দ্বিতীয় আঘাত লাগে। এ অবস্থায় আরেক দফায় প্রণোদনার আবেদন করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কিন্তু ঈদের আর চারদিন বাকি থাকলেও সরকার এখনো প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সাড়া দেয়নি।
তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রচণ্ড আঘাত করলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ বাতিল হয়, স্থগিত হয় অনেক তৈরি পোশাক শিল্প কার্যাদেশ। সরকার তৈরি পোশাক শিল্পের এই অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য কম দুই শতাংশ সুদে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রনোদনার ঘোষণা করে। এছাড়া পুরো শিল্প খাতের জন্য আরও প্রায় এক লাখ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। এ দফায় তৈরি পোশাক শিল্প বেশ সক্ষমতার সাথে করোনা মহামারী মোকাবিলা করে। নভেম্বর মাসেই উৎপাদন ও রপ্তানি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে পড়ে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত স্বাভাবিক হতে থাকে।
তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, এ সময় দেশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে করোনা মহামারী কমলেও তৈরি পোশাকের আমদানিকারক দেশগুলোতে করোনার মৃত্যু ও আক্রান্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় কার্যাদেশ আসতে থাকলেও কিছু কিছু কার্যাদেশ আবার কমতে শুরু করে, কিছু কিছু কার্যাদেশ বাতিল হয়। এ সময় ইউরোপের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশেও করোনার দ্বিতীয় ওয়েব শুরু হয় এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার এপ্রিল মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০০ পর্যন্ত ওঠে। যদিও এ সময় করোনার কারণে তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়নি। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল শ্রমিকদের করোনা প্রতিরোধী ক্ষমতা বেশি থাকার কারণে আক্রান্ত হচ্ছে না। এ সময়য়েই সরকারের কাছে শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন ও দুই উৎসবের ভাতার সমপরিমাণ টাকা প্রণোদনার আবেদন করা হয়।
বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশে-বিদেশে কঠোর লকডাউনের কারণে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় এপ্রিল, মে ও জুন তিন মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা দেওয়ার জন্য প্রণোদনা প্রয়োজন।
বিজিএমইএ-এর এ আবেদন স্বভাব সুলভ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা কোনো অজুহাত পেলেই আবেদন করে বসে। এবার যখন প্রণোদনা চেয়ে বসেছে তখন উদ্যোক্তাদের সম্ভাবত খেয়াল নেই তারা এলসির বিপরীতে টাকা চাইলে ২ শতাংশ সুদ হারে ঋণ সুবিধা পান। অন্যান্য প্রণোদনা আছে তাদের জন্য। তারা কঠোর লকডাউনের মধ্যেও কারখানা খোলা রাখার দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার মেনে নেয়। এ জন্য বন্দর খোলা রাখা হয়েছে। কারখানা খোলার জন্য পুলিশ, কাস্টমসহ সকল প্রশাসন যন্ত্র স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। এর মধ্যে নিরাপদ রপ্তানি হচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও হচ্ছে। চাহিদা মতো ব্যাংক খুলে দেওয়া হয়েছে। তাহলে আবার প্রণোদনা কেন! এরপর আবার এপ্রিল মাসে রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারায় আছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্স ইনিসস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এই এইচ মনসুর খোলা কাগজকে বলেন, উদ্যোক্তাদের এখন প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যে প্রণোদনাগুলো করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় দেওয়া হয়েছিল এগুলোর বেশ কিছুর টাকা ফেরত দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। সেগুলোর সময় কমপক্ষে আরও এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও এসএমইএ-এর প্রণোদনা বিতরণ করতে বাকি আছে, ওই খাতের যারা ছোট উদ্যোক্তা বিভিন্ন জটিলতার কারণে পায়নি, তাদের পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাহায্য লাগবে কাজ হারা দিনে এনে দিন খেয়ে মজুর শ্রেণির মানুষের।
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে সরকার এখনও পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের আবেদনের কোনো সাড়া দেয়নি। সরকারের আর্থিক খাত সূত্র জানায়, গার্মেন্টস মালিকদের দ্বিতীয় দফার বেতন ভাতা সহায়তা বাবদ প্রণোদনা সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের বিষয়। গার্মেন্টস মালিকদের আবেদন সম্পর্কে আমরা জানি।
Array