
আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে নিয়মিত চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটক নিয়ে যাবে এমভি বে-ওয়ান ক্রুজ।
দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন রুটে নিয়মিত পর্যটক নিয়ে যাবে বিলাসবহুল প্রমোদতরী এমভি বে-ওয়ান। আগামী বৃহস্পতিবার নগরীর পতেঙ্গা থেকে মহেশখালী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হয়ে সেন্টমার্টিনে প্রায় দুই হাজার যাত্রী নিয়ে জাহাজটি যাতায়াত শুরুর কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাত ১১টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে জাহাজটি ছেড়ে যাবে। সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে সকাল ৭টায়। শুক্র, শনি ও রবিবার দুপুর ১টায় ফিরতি যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসবে জাহাজটি। সন্ধ্যা ৭টায় জাহাজটি চট্টগ্রামে ফিরবে। সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের জন্য এ জাহাজে যাওয়া-আসার সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ৩ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। যাতায়াতের জন্য একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এমভি বে-ওয়ানের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স।
পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনালে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিলাসবহুল এ শিপ নতুন সংযোজন। জাপানের কোবে শহরের মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজে তৈরি করা বে-ওয়ান ক্রুজ দেশে আনা হয়েছে। জাহাজটির উত্তাল সমুদ্র ও ঝড়-তুফান মোকাবিলা করার সক্ষমতা রয়েছে। জাহাজের দুই পাশে দুটি ফিন স্ট্যাবিলাইজার (বড় ফ্যান) আছে। সমুদ্রে ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে দুই পাশে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে আসবে। তখন জাহাজটি স্থির হয়ে থাকবে। জাহাজটিতে রয়েছে কেবিন, প্রেসিডেন্ট স্যুট ও সাধারণ আসন মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার আসন। জাহাজটি পরিচালনায় ১৭ জন ক্রুর পাশাপাশি যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবেন আরো ১৫০ জন ক্রু। দুই হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম এ জাহাজে প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে এক হাজার যাত্রী প্রত্যাশা করছি। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে যাত্রী বাড়বে। এখন সপ্তাহে তিনদিন চলাচল করলেও সপ্তাহে সাত দিনই চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের আর কোনো ক্রুজ শিপ চলাচল করেনি। সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক ক্রুজ শিপ আছে ৩১৪টি। বে-ওয়ান তার একটি। তিনি বলেন, শীতকালে সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করলেও অন্য সময়ে যেন জাহাজটিকে বসিয়ে রাখতে না হয়, সেজন্য আমরা নতুন রুট তৈরির ব্যাপারে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। জাহাজটি আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করতে সক্ষম। তাই সরকার যদি চায় হজের সময়ে আমরা এটিকে সৌদি আরব রুটে চলাচল করাতে পারব। এছাড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর রুটেও চলাচল করতে পারবে।
কর্মকর্তারা জানান, এমভি বে-ওয়ান জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৪৫০ ফুট ও প্রস্থ ৫৫ ফুট। এর গভীরতা ৫ দশমিক ৪ মিটার। জাহাজটি ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটতে পারবে। জাহাজটিতে রয়েছে অভিজাত রেস্তোরাঁ, স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিন এবং কয়েন পরিচালিত ঝর্ণা। দ্রুতগতির জাহাজ বে-ওয়ান চালুর মাধ্যমে পর্যটকরা কম সময়ে এবং নিরাপদে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি জাহাজে রাত্রিযাপনের মাধ্যমে সমুদ্র বিনোদন ও উপভোগের সুযোগ পাবেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর পূর্ব চীন সাগর অতিক্রম করে জাহাজটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এসে পৌঁছে।
জানা যায়, ফিরতি ভাড়া ও রাত্রিযাপনসহ ভিভিআইপি প্যাকেজের আওতায় দুজনের কেবিনের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, ফ্যামিলি প্যাকেজের আওতায় চারজনের স্পেশাল ক্লাস বাংকারের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, রয়েল প্যাকেজের আওতায় দুজনের রয়েল স্যুটের ভাড়া পড়বে ৪৫ হাজার টাকা, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজের আওতায় দুজনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ৩০ হাজার টাকা এবং বাংকার বেড প্যাকেজের আওতায় একজনের বাংকার বেডের ভাড়া পড়বে ১০ হাজার টাকা। ইকোনমি প্যাকেজের আওতায় ইকোনমি সিটের ভাড়া পড়বে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া বিজনেস ক্লাস সিটের ভাড়া ৪ হাজার টাকা। তবে একমুখী ভাড়া ও রাতযাপনসহ ভিভিআইপি কেবিনে দুজনের ভাড়া পড়বে ২৫ হাজার টাকা, ফ্যামিলি প্যাকেজে স্পেশাল ফার্স্ট ক্লাস বাংকার বেডের ভাড়া পড়বে ২৫ হাজার টাকা এবং রয়েল প্যাকেজে দুজনের রয়েল স্যুটের ভাড়া পড়বে ২০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজের আওতায় দুজনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ১৫ হাজার টাকা এবং একজনের সিঙ্গেল বাংকার বেডের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। এছাড়া বিজনেস ক্লাস সিটের ভাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ইকোনমি সিটের ভাড়া ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
Array