• ঢাকা, বাংলাদেশ

চার কারণে ঢাকায় ভোটের খরা 

 admin 
20th Oct 2020 4:27 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে নির্বাচনগুলোতে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হতো। দিন দিন ভোটার উপস্থিতির হার কমতে থাকা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয় বলে মত দিয়েছেন তারা

সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা-৫ উপনির্বাচনে ৮৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ ভোট দেননি। অর্থাৎ মোট ৪ লাখ ৭১ হাজার ৭১ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৪৯ হাজার ১৪১ জন। অথচ এ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় কোনো কমতি ছিল না। শত শত বাইক, গাড়ি ও নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছিল প্রচারণায়। তাহলে কি প্রচারণায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বিশাল এ কর্মী বাহিনীও ভোট দিতে আসেনি- এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকায় বেশির ভাগ ভোটারের সঙ্গে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত সখ্য কম, উপনির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না, আগের নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় আস্থার সংকটের কারণে অনেকে ভোটকেন্দ্রে আসছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এরপর গত ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচনেও ভোট পড়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ ঢাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বিপুলসংখ্যক ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে দাবি করেন দলীয় নেতারা।

অন্যদিকে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এর ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা গেছে। শনিবার ঢাকা-৫ এর সঙ্গে নওগাঁ-৬ আসনেও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ৩০ দশমিক ৪৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। গত জুলাইয়ে যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বগুড়া-১ আসনে ভোট পড়েছিল ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তাছাড়া ঢাকার বাইরে অন্য নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে নির্বাচনগুলোতে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হতো। দিন দিন ভোটার উপস্থিতির হার কমতে থাকা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২

\হনয় বলে মত দিয়েছেন তারা।

আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ স ম আরিফিন সিদ্দিক যায়যায়দিনকে বলেন, কোনো একক কারণে ভোটার উপস্থিতি কমেনি। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকার ভোটাররা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়টি চিন্তা করে অনেকেই হয়তো কেন্দ্রে যাননি। উপনির্বাচন নিয়ে এমনিতেই আগ্রহ কম থাকে। গণতন্ত্র নিয়ে জনগণের মধ্যে নিবিড় চিন্তার ঘাটতি থাকার করাণে অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাননি।

ঢাকার প্রার্থীদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের ঘাটতি ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, নৈকট্যের কারণে গ্রামের মানুষের সঙ্গে প্রার্থীদের একটা নিবিড় সম্পর্ক থাকে। বাজারে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। কথা হয়, ভোটাররা প্রার্থীদের আপন মনে করেন। প্রার্থীরা অনেকের আত্মীয়-স্বজন। তাই বেশির ভাগ মানুষই মনে করে নিজেদের লোককে জয়ী করতে ভোট দিতে হবে।

তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচন কমিশনের কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। তবে এ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা না থাকায় ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ হচ্ছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার। আলাপকালে যায়যায়দিনকে বলেন, বর্তমান ও এর আগের নির্বাচন কমিশন ভোট পাগল মানুষকে ভোটবিমুখ করেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, অতীতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দিয়ে ফিরে আসা ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকার কারণে ভোটার উপস্থিতি দিন দিন কমছে।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশে ভোট হয়। এই খন্ড নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ কম থাকে। এ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। দুই বা আড়াই বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন সেই জন্য হয়তো প্রার্থী বা ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। পাশাপাশি করোনা নিয়ে মানুষ আতঙ্কিত। যদিও করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।

এদিকে, গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছিল ৮০ শতাংশ। ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এরপরের নির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি এত কম কেন, আর ভোটের দিন দলীয় অনেক নেতাকর্মীরা ভোট দিতে আসেননি- এসব বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, পরপর তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে। প্রতিটি এলাকায় একাধিক বলয় তৈরি হয়েছে। ফলে মিটিং-মিছিলে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিলেও ভোটকেন্দ্রে যাননি অনেকেই।

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা-৫ আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ২০ জন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর এক নেতা বলেন, এই ২০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী যদি ৫ হাজার করে ভোটার করে ভোটার থাকে তাও তো ১ লাখ ভোট হয়। কিন্তু সেই ২০ মনোনয়নপ্রত্যাশী কোথায় ছিল, তাদের ভূমিকা কী ছিল, তা দলীয়ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১