
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধ কিছুটা শিথিল হলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। যেকোনো সময় চীনে উৎপাদিত পণ্যে মার্কিন প্রশাসনের সম্ভাব্য আমদানি শুল্কের খড়্গ নেমে আসতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকেই তাইওয়ানভিত্তিক ফক্সকন ৮৮০ কোটি ডলারে চীনে নির্মিত নিজেদের নতুন একটি ডিসপ্লে প্যানেল উৎপাদন কারখানা বিক্রির উপায় খুঁজছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা ফক্সকন, যা হন-হাই প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড নামেও পরিচিত। তাইওয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বেশির ভাগ মার্কিন গ্রাহকের পণ্য চীনে নির্মিত কারখানায় উৎপাদন করে আসছে। অ্যাপলের বেশির ভাগ পণ্যই সংযোজনের কাজ করে ফক্সকন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চীনা লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (এলসিডি) কারখানার সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজতে ব্যাংক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ফক্সকন। কারখানাটি দক্ষিণ চীনের গুয়াংজু শহরে অবস্থিত।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধের কারণে ব্যবসা কার্যক্রম নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে ফক্সকন। বিদ্যমান পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চতার মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফক্সকনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে ওঠার নানা উপায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর আগে বৃহৎ অর্থনীতির দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধের মধ্যেই চীনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা এবং ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ফক্সকন।
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের কারণে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতের সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছে ফক্সকন। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেমিকন্ডাক্টর খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ফক্সকনের সবচেয়ে বড় দুই রফতানি বাজার। যে কারণে বিদ্যমান বাণিজ্য বিরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
চীনে নির্মিত ডিসপ্লে কারখানা বিক্রির বিষয়ে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ফক্সকন। তুলনামূলক বড় এলসিডি ডিসপ্লে তৈরির ‘জেনারেশন-১০.৫’ কথিত কারখানার বিক্রিমূল্য কেমন হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এলসিডি ডিসপ্লে কারখানা বিক্রি করা খুব একটা সহজ কাজ হবে না। এটা বেশ সময়সাপেক্ষ হতে পারে। কারণ বৈশ্বিক বাজারে এলসিডি ডিসপ্লের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমছে। টিভির পাশাপাশি মোবাইল ডিভাইসসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসে এখন আরো উন্নত অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড বা ওএলইডি ডিসপ্লের ব্যবহার বাড়ছে।
ফক্সকন জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ব্যবসানীতি নিয়ে তারা কথা বলতে আগ্রহী নয়। চীনা ডিসপ্লে কারখানা বিক্রি করা হলে তা জানানো হবে। গুজবনির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল শুরু থেকেই তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইফোন ডিভাইস তৈরি করে আসছে। অ্যাপলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিংহভাগ আইফোন তৈরি করে আসছে ফক্সকন। আইফোন উৎপাদন থেকে চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির বড় অংকের রাজস্ব আসে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধে অ্যাপল-ফক্সকনের ব্যবসায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে অ্যাপলকে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন উৎপাদনে বাধ্য করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অ্যাপলও স্থানীয়ভাবে আইফোন উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। বাস্তবে এমন কিছু ঘটলে ব্যবসায় ঝুঁকির মুখে পড়বে ফক্সকন।
Array