
কয়েক মিনিটের মধ্যেই চোখের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নও মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে গেলো। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এখন কী করবো ভেবে কুল পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো বলতে পারছি না।’ এসব কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন রফিক। মিরপুরের রূপনগর বস্তির আগুন কয়েক মিনিটের ব্যবধানে নিঃস্ব করে যার পরিবারকে পথে বসিয়েছে।
শুধু রফিকই নন ভয়াবহ এই আগুন আরও নিঃস্ব করেছে বস্তিটির দেড় হাজারেরও বেশি পরিবারকে। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পার হলেও এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার পুড়ে যাওয়ার তালিকায় যোগ হচ্ছে আরও নতুন নতুন পরিবারের নাম।
বুধবার সকাল পৌনে দশটার দিকে রূপনগর বস্তিটিতে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরে আগুন নেভাতে যোগ দেয় আরও ছয়টি ইউনিট।
২২টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ভয়াবহতা বেশি হওয়ায় আগুন নেভাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাঝের সব ঘর পুড়িয়ে নতুন নতুন ঘরে লাগছে আগুন।
চোখের সামনেই সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও করার কিছুই ছিল না বস্তির বাসিন্দাদের। তাদের অনেকে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বস্তির কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বস্তিটিতে দেড় থেকে দুই হাজার পরিবার থাকে। এসব পরিবারে আনুমানিক দুই থেকে চারজন করে সদস্য থাকলে আট থেকে ১০ হাজার লোক বাস করতেন বস্তিটিতে। আগুন লাগার মধ্যেই যে যতটুকু পেয়েছেন মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, বস্তিটিতে বাঁশ-টিন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় বস্তির আশপাশের কয়েকটি ভবনের বাসিন্দাদের মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
পুড়ে যাওয়া বস্তির পাশে বিলাপ করছিলেন এক নারী। মায়ের কান্না দেখে কাঁদছেন কোলে থাকা তার শিশু সন্তানও। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও যখন বস্তিতে আগুন জ্বলছিল তখন তিনি কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন। ওই নারী বলেন, ‘আগুন হামার সব পুড়ি শ্যাষ করি দিলো। এখন কেমনে বাঁচমু।’
তার পাশে থাকা রিকশাচালক মজনু বলেন, জীবিকার তাগিদে সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত এসে দেখেন আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে। বাসায় আসতে আসতে তার ঘরের সব মালামাল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর পৌনে ১২টার দিকেও রূপনগর বস্তিটিতে আগুন জ্বলছে। বস্তির আশপাশে যেসব ভবন রয়েছে ওইসহ ভবনের অনেক বাসিন্দা তাদের মালামাল নিচে রাস্তায় নামিয়ে এনেছেন। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তারা মালামাল নামিয়ে আনেন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নেভাতে তাদের ২২টি ইউনিট কাজ করছে।
Array