
নিউজ ডেস্ক: জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কারে গঠিত কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। জনপ্রশাসন কমিশন তাদের প্রতিবেদনে দেশকে ৪টি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছে। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের একক কর্তৃত্ব কমলেও দেশের প্রেক্ষাপটে লাভ হবে না বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় রয়েছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে আলাদা সিটি সরকার গঠন, কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ ঘোষণা, আলাদা সুপিরিয়র ক্যাডার সার্ভিস গঠন।
এ নিয়ে সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলছিলেন, দেশকে প্রদেশে বিভক্ত করলে দুর্নীতি ও মাথাপিছু ব্যয় বাড়বে। এতে জনগণের কোনো লাভ হবে বলে মনে করি না। বরং এক্ষেত্রে সম্পদ অপচয়কারী একটি গোষ্ঠী তৈরি হবে। তবে সিটি সরকারের ধারণাটি যুক্তিযুক্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান বলেছেন, এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি বাড়তে পারে। এছাড়া, জনগণের ওপর করের বোঝা বেড়ে যাবে। কারণ, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার উভয়কে ট্যাক্স দিতে হবে।
উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা ৭৫ থেকে ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এই বৈষম্য কমানোর দাবি অনেকদিনের। তবে এই সুপারিশকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন না আব্দুল আউয়াল মজুমদার। যদিও এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেছেন, ভিন্ন ক্যাডারে বারো থেকে চৌদ্দ বছর চাকরিরতদের মধ্য থেকে উপসচিব পদের অর্ধেক পূরণ করা হলে তারা তৈরি হওয়ার সুযোগ পাবে না। ফলে এক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি না করে অন্য ক্যাডারের সুযোগ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান বলেন, সকল সংস্কারের ক্ষেত্রেই নাগরিকদের একটি প্রাধান্য রয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে জনগণ কী চাচ্ছে তা যাচাইবাছাই করতে হবে।
অন্যদিকে, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে রয়েছে— উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে আলাদা কমিটি গঠন, বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় ও রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধীকে ক্ষমা করার ক্ষমতা না দেয়া।
আগেও উপজেলা পর্যায়ে আদালত করা হয়েছিল উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলেন, তাতে বিচারে খুব একটা শৃঙ্খলা আসেনি। বরং বিচার বিভাগের সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি।
কাজী মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান বলেন, বেঞ্চ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। মূল বিষয় হলো, বিচারকরা কতটা স্বাধীন থাকতে চান এবং কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। এছাড়া, বিচারকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিষয়ও রয়েছে।
তবে দিনশেষে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান এই দুই বিশ্লেষক। স্বার্থের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কাজী মোহাম্মদ মাহবুবর।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ থেকেই মূল সমস্যাটা তৈরি হয়। ফলে তারা যাতে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেটি সংস্কার কমিশনের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে সামাজিক চাপ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
Array