
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা কয়েক দিনের হল খোলার আন্দোলনের মধ্যে তিন হল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা অন্য হলগুলো থেকেও চলে যাচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানালেও শিক্ষার্থীদের এক প্রতিনিধি আগামীকাল বুধবার থেকে আবার আন্দোলনে নামার কথা বলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আসম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা আশা করছি, শিক্ষার্থীরা শিগগির হল ত্যাগ করে সরকারের আদেশ মান্য করবে।
কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল খুলে দেওয়ার আন্দোলনের মধ্যে গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী দিপু মণি ঘোষণা দেন, আগামী ১৭ মে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা শুরু হবে। তার আগে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। শুধু অনলাইন ক্লাস চালু থাকবে।
এদিকে, টানা তিনদিন ধরে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার আন্দোলন মঙ্গলবার স্থগিত রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল ৫টায় পরিবহন চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে আবার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সিরাজুল হক।
সিরাজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এখন হল ছাড়তে রাজি না। আজকে আমাদের আন্দোলন স্থগিত থাকলেও আগামীকাল (বুধবার) থেকে অব্যাহত থাকবে। হলে হলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে হানতে চাইলে বললে সিরাজুল হক বলেন, আমরা আবার হলে উঠব। এত তাড়াতাড়ি হল ছাড়ব না। এ সময় কর্তৃপক্ষের কাছে জাহাঙ্গীরনগরের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করার কথা জানান তিনি।
তবে বিকাল থেকেই হল ছাড়তে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শহীদ রফিক-জব্বার হল, শহীদ সালাম-বরকত হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল তিনটি সিলগালা করা হয়েছে। আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল এবং মীর মোশাররফ হোসেন হলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বলছে হল কর্তৃপক্ষ।
প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার পর প্রত্যেক হল প্রাধ্যক্ষ তাদের টিম নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য হলে যান। শিক্ষার্থীদের বোঝানোর পর ইতিমধ্যে তারা পাঁচটি হল ছেড়ে গেছে। যে হলগুলো থেকে এখনও শিক্ষার্থীরা বের হয়নি তাদের দায়ভার কর্তৃপক্ষের না। কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আর হল ছাড়ার ব্যাপারে কথাও বলবে না। যদিও বাকি চারটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা আস্তে আস্তে বের হয়ে যাচ্ছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ না মেনে শিক্ষার্থীরা যদি হলে অবস্থান করতে চায় তাহলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ তা দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আর কিছুই বলবে না বলেও জানান তিনি। শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় আদেশ মানতে অনুরোধ করলে তারা হল থেকে চলে যায়। এখন হল সিলগালা অবস্থায় আছে।
বঙ্গমাতা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে তারা হল ছেড়ে চলে যায়। কাউকেই জোর করতে হয়নি। হল এখন সিলগালা অবস্থায় আছে। শহীদ সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, শিক্ষার্থীদের বোঝানোর পর তারা হল ছেড়ে দিয়েছে। হল ছেড়ে দেওয়ার পর আমরা সিলগালা করে দিয়েছি।
এর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে সব পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, সরকারের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সব ধরনের পরীক্ষা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। সান্ধ্যকালীন সব কোর্সও স্থগিত করা হয়েছে।
Array