
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের একটি টিম ২৬ লাখ রুপির জাল নোট ও তা তৈরির সরঞ্জামসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পোশাক ও গরু আমদানির কাজে এসব জাল রুপি লেনদেন করার উদ্দেশ্য ছিল প্রতারকদের।
গোয়েন্দারা জানান, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা, বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা এসব রুপি ব্যবহার করে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩১ আগস্ট জাল রুপিসহ যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকার একটি বাসা থেকে লিয়াকত হোসেন জাকির, শান্তা আক্তার ও মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জাল রুপি তৈরিতে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, একটি কালার প্রিন্টার, একটি লেমিনেশন মেশিন, জাল রুপি তৈরির বিপুল পরিমাণ কাগজ, প্রিন্টারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কালির কার্টিজ, সিকিউরিটি সিল সংবলিত স্ক্রিন বোর্ড, গাম ও ভারতীয় জাল রুপি বানানোর জন্য ব্যবহৃত সিল মারা ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়।
বাসায় জাল রুপি পাওয়ায় তিনজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এই চক্রের দলনেতা লিয়াকত হোসেন জাকির। বাকি দুজন তার সহযোগী। তবে গ্রেফতার নারী দুজন জাল রুপি তৈরির দক্ষ কারিগর।
তিনি জানান, লিয়াকত হোসেন ১০ বছর ধরে তারা জাল টাকা ছাপানোর কাজ করছিল। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা জাল রুপি বানানো শুরু করেছে। এই রুপিগুলো সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা অধিক লাভবান হওয়ার জন্য এই প্রতারকদের কাছ থেকে কিনে নিতো।
জাল রুপি লেনদেনচক্রের বিষয়ে ১ আগস্ট ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, চক্রটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ভারতীয় নাগরিকরাও। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এসব জাল রুপি নিয়ে যায়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেগুলো কিছু কেনার বিনিময়ে চালিয়ে দিতো তারা।
গ্রেফতার আসামিদের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, এক লাখ পরিমাণ জাল রুপি ও জাল টাকার মূল্য প্রায় সমান। এক লাখ টাকার একটি বান্ডিল ১০-১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
জাল রুপি তৈরি ও বাজারে ছাড়া প্রতারকদের সঙ্গে ভারতীয়দের যোগসাজশ থাকার বিষয়টি ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। এ ধরনের অপরাধীদের ক্ষেত্রে দুই দেশের পুলিশ একে অপরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে। ভারতে জড়িতদের গ্রেফতারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ডিবির এক কর্মকর্তা।
জাল রুপি তৈরির সঙ্গে জড়িত প্রতারকরা গ্রেফতার এড়াতে ২-৩ মাস পর পর বাসা পরিবর্তন করতো বলে জানান মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, তারা দ্রুত বাসা পরিবর্তন করতো। বাসা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে বহুতল ভবনের ওপরের দিকের ফ্ল্যাটই বেছে নিতো, যাতে লোকজনের যাতায়াত কম থাকে।
ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি শেষ হয়েছে ডিএমপি’র ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ’। এই সময়ে পুলিশের কঠোর নজরদারি কারণে জালিয়াতচক্রের সদস্যরা বাসা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ শুরুর ৩ দিনের মাথায় একটি নতুন বাসা পরিবর্তন করে তারা। ডিএমপির এ উদ্যোগের কারণে অপরাধীরা ঢাকায় সহজে অবস্থান করতে পারবে না বলে জানান ডিএমপির ঊর্ধ্বতনরা।
Array