admin
25th Dec 2019 4:23 pm | অনলাইন সংস্করণ

দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘোষণা ও সিনিয়র নেতা, এমপি থেকে শুরু করে দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভূতপূর্ব সমর্থন নিয়েই সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। একই সঙ্গে মহাসচিবের পদে কোনো ধরণের পরির্বতন না করে বর্তমান মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাই শেষ পযর্ন্ত মহাসচিব পদে নির্বাচিত করতে পারেন জাপার কাউন্সিলররা । আগামী ২৮ ডিসেম্বর শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিটিউশনের বাইরের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিতব্য জাপার সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এমন ঘোষণাই আসতে পারে । জাতীয় পার্টির অন্তত একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, এমপি ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, বেগম রওশন এরশাদকে জাপার সবাই শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। তাই দলের এমপিরা তাকে বিরোধী দলীয় নেতা বানিয়েয়েছেন । বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তিনি সংসদ পরিচালনা করছেন। কিন্তু দল চালানোর জন্য তো শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন হয়। বয়সের কারণে রওশন এরশাদের তো তা এখন নেই। তাই জাপার চেয়ারম্যান পদে তাকে নিয়ে ভাবছেনও না তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।
তাছাড়া জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জীবদ্দশায় তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে গেছেন। শুধু ত্ইা নয়, তা কাউন্সিলে পাশ করিয়ে নেওয়ার জন্য কাউন্সিলদের প্রতি নির্দেশও দিয়ে গেছেন তিনি। তাই দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রাখার জন্য তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরের পালন করছেন জাপার সর্বস্থরের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া জিএম কাদের অল্প দিনেই তার কর্মদক্ষতা ও আন্তরিকতা ভালোবাসা দিয়ে জাপার সকল স্থরের নেতাকর্মীদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে গণমাধ্যম কর্মী , সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের কাছেও জিএম কাদেরের গ্রহণযোগ্যতা জাপার যেকোনো পর্যায়ের নেতার চেয়ে অনেক বেশি। সেকারণে আসন্ন কাউন্সিলে জিএম কাদেরই যে চেয়ারম্যান হচ্ছে তা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এছাড়া এই মুহুর্তে মহাসচিব পদে মশিউর রহমান রাঙ্গারও বিকল্প ভাবছেন না জাপার নেতাকমীরা।
এই ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন বলেছেন, আগামী কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা জিএম কাদেরের বিকল্প কিছুই ভাবছি না, স্যার ( এরশাদ ) মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি দলকে যেভাবে সুসংগঠিত করেছেন তা অকল্পনীয়। এছাড়া মহাসচিব পদে আমি চাই রাঙ্গা ভাই নির্বাচিত হয়ে আসুক। তৃণমুলের সমর্থন তাদের দুইজনের দিকেই আছে। আর বেগম রওশন এরশাদ আমাদের মায়ের মতে। তিনি সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা আছেন, থাকবেন।
অপর প্রেসিপিয়াম সদস্য এমরান হোসেন মিয়া বলেন, শুধু আমি কেন, জিএম কাদেরের পক্ষে পুরো জাতীয় পার্টি একাট্টা। সারাদেশের মানুষেরও সমর্থন জিএম কাদেরের পক্ষে। জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় যেতে হলে জিএম কাদেরর নেতৃত্বে বিকল্প নেই। তিনিই আগামী কাউন্সিলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। তাছাড়া স্যার ( এরশাদ ) তো জীবদ্দশায় সে কথা বলে গেছে। স্যারে ( এরশাদ ) নির্দেশ পালন করতে আমরা বাধ্য । আর মহাসচিব হিসেবে জিএম কাদের যাকে পছন্দ করে নেবেন তিনিই হবেন। তবে রাঙ্গা ভাইয়ের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সরদার শাহজাহান বলেন, দলের আসন্ন কাউন্সিলে জিএম কাদেরই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তৃণমুলের সকল নেতাকর্মীরা তাই চায়। আর মহাসচিব পদে এই মুহুর্তে পরিবর্তনের কোনো কারণ দেখছি না। রাঙ্গা ভাই তো ভালো কাজ করছেন, তিনি থাকলে দলের জন্য মঙ্গলজনক।
জাতীয় পার্টির যুগ্ন মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু বলেছেন, সারাদেশে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে জিএম কাদের ও রাঙ্গা ভাইয়ের প্রতি। আগামী ২৮ ডিসেম্বর সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভুতর্পূব সমর্থন নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন জিএম কাদের এমপি ও মহাসচিব নির্বাচিত হবেন মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি। এর বিকল্প জাপায় চিন্তা করার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, আগামী ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীতে জাতীয় পার্টির যে সম্মেলন হতে যাচ্ছে, তাতে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব কে হচ্ছেন তা নিয়ে জাপার একটি ক্ষুদ্র অংশ সোস্যাল মিডিয়ায় নানা ধরণের অপপ্রচারের লিপ্ত রয়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যমেও এই বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে জাপার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তিও লক্ষ করা যাচ্ছে।
তবে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরর বিকল্প কিছু না ভাবলেও মহাসচিব পদে রাঙ্গা ছাড়া আরো কয়েক জনের নাম গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু গণমাধ্যমে মহাসচিব পদে আগ্রহী যে কসল নেতার নাম এসেছে তাদের বেশিরভাগ নেতারই তৃণমুল জাপার নেতাকর্মীদের কাছে সামান্যতম গ্রহণযোগ্য নেতা। সে হিসেবে মশিউর রহমান রাঙ্গা বিগত এক বছরের মধ্যে নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতাদের সমর্থন আদায়ে সমর্থ হয়েছে। এজন্য আসন্ন কাউন্সিলে তিনি আবারো মহাসচিব নির্বাচিত হচ্ছে বলে ধারণা করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে কাউন্সিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ , বিএনপি সহ দেশের প্রায় সকল রাজণৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদুত ও হাইকমিশনারদের। জাপার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শুধু মাত্র কাউন্সিল ডেলিগেট মিলে ১২ হাজারের মতো নেতা অংশ নেবেন। তবে ভোরের ডাকের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজারের মতো নেতাকর্মী সমর্থক জাপার কাউন্সিল অধিবেশনের বাইরে অবস্থান নেবেন। এইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপার অন্তত দুইডজন শীর্ষ নেতা ও এমপি।
Array