• ঢাকা, বাংলাদেশ

ডাকসু নির্বাচন : রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া? 

 admin 
15th Mar 2019 2:06 am  |  অনলাইন সংস্করণ

বলা হয়ে থাকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজকে যা ভাবে, বাংলাদেশ তা পরের দিন ভাবে। গতকালের ডাকসুর নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির কোন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করলো? এবারের ডাকসু নির্বাচনে কতগুলো তাৎপর্যপূর্ণ দিক লক্ষ্যণীয়।

প্রথমত, ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে কোন রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়নি। বরং কোটা আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ছাত্রলীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ডাকসুর ইতিহাসে রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠনের বাইরে থেকে কারো উঠে আসার এমন ঘটনা বিরল। কখনই স্বতন্ত্ররা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। সংসদে তাদের কোন অবস্থান না থাকলেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে তারাই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী। ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের প্যানেল ডাকসুতে নির্বাচিত হয়। কিন্তু এবার তাদের কোন প্রার্থীই জয়লাভ তো করতেই পারেনি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। ডাকসুতে বরাবরই জাসদ, বাসদসহ বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর একটা প্রভাব লক্ষ্যণীয়। এরাই ডাকসুকে নিয়ন্ত্রণ করতো। কিন্তু এবার তারাও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেনি। যদিও এবার নির্বাচনে বেশ কিছু কারচুপির অভিযোগ সামনে এসেছে। যদিও কারচুপি যদি নাও হতো, তাহলেও ছাত্রদল বা বাম ছাত্রসংগঠনগুলো তেমন কিছুই করতে পারতো না। বরং কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতারা হয়তো আরেকটু ভালো করতে পারতো। তাহলে ডাকসু নির্বাচন কি এই ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপি বা বাম দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নেই। বরং একটা তৃতীয় শক্তির উত্থান হবে যারা কোটা আন্দোলনের মতো সাধারণ মানুষের দাবি দাওয়া সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে উঠে আসবে? তা যদি হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা তৃতীয় ধারার সূচনা হবে।

দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে এটা স্পষ্ট যে, ছাত্রলীগের প্রভাব বিস্তারের তৎপরতা স্পষ্ট ছিল। ছাত্রলীগকে জিতিয়ে দেয়ার জন্য প্রশাসনের নির্লজ্জ, পক্ষপাতমূলক আচরণও পুরো সময়জুড়ে দৃশ্যমান ছিল। তারপরও ডাকসুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পদে কোটা আন্দোলনের নুরুল হক নূর জয়লাভ করেছেন। এটা একটা অভাবনীয় ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটা নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। যদিও নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের শোভনের পক্ষেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আওয়াজ ছিল সবচেয়ে বেশি। এর মধ্য দিয়ে এটা ইঙ্গিত দেয় যে, সারাদেশে যারা আওয়ামী লীগ করেন বা আওয়ামী পন্থী হিসেবে পরিচিত তাদের মধ্য থেকেই কেউ কেউ হয়তো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে বা বিরুদ্ধে যেতে পারে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগই হয়তো আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে।

তৃতীয়ত, ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বে বিষয়ে ছাত্ররা যতোটা না সোচ্চার ছিল তার চেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল ছাত্রীরা। এই নির্বাচন যতোটুকু বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তাতে সম্পূর্ণ অবদান ছাত্রীদেরই। বিশেষ করে কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীরা উল্লেখ করার মতো প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল। তাহলে কি আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি নারীরাই নেতৃত্ব দেবে? তারাই কি প্রধান প্রতিবাদকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে? আর সেটা যদি হয় তাহলে রাজনীতিতে আরেকটি গুণগত পরিবর্তন আসবে।

চতুর্থত, ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমমনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকার সমর্থকদের প্রতি ও জাতীয় রাজনীতির প্রতি একটা অনীহা দৃশ্যমান হয়েছে। নিজেদের ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দাবিদাওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। হলে যারা জনপ্রিয়, সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত, শিক্ষার্থীরা সুসময়-দুঃসময়ে যাদের পাশে পান তাদেরকেই এবার তারা নির্বাচিত করেছে। শিক্ষার্থীদের একটা জনপ্রিয় দাবি ছিল কোটা সংস্কার। এই ইস্যুতে কোটা সংস্কারের নেতারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা হৃদ্যতা তৈরি করতে পেরেছিল। বাংলাদেশের জনগণও কি রাজনৈতিক ইস্যুর চেয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যক্তিগত বিভিন্ন জনদাবিকে বেশি প্রাধান্য দেবে? রাজনৈতিক বিষয় থেকে মানুষ যে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে সেটাও দৃশ্যমান।

কাজেই ডাকসুর এই নির্বাচনে মধ্য দিয়ে এই ইঙ্গিত দেয়, আগামী দিনে বাংলাদেশে রাজনীতির ধারা পাল্টে যাবে। তখন মানুষের দাবি দাওয়া, আন্দোলনের পথ ও ভঙ্গি বদলে যাবে। এবারের ডাকসু নির্বাচন কি সেই পরিবর্তনেরই সূচনা করলো? ডাকসু নির্বাচন কি সেই পরিবর্তনের বার্তাই আমাদের সামনে তুলে ধরলো?

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১