আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করায় কদিন আগে বিসিবি বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানকে সোনায় খচিত পদক দিয়েছে। তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে এই বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন সাকিব আল হাসানও। ১০ হাজার রানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে এখানে বাঁহাতি অলরাউন্ডারের একটা প্রশ্ন আছে, ৫০০ উইকেট নেওয়ার স্বীকৃতি কেন দেওয়া হবে না?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেছেন বাংলাদেশের তিনজন। কিন্তু ৫০০ উইকেট? একজনই—সাকিব আল হাসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই রেকর্ড আছে মাত্রই দুজনের—জ্যাক ক্যালিস ও শহীদ আফ্রিদির। বাংলাদেশের হয়ে অনেক দুর্দান্ত রেকর্ড করেছেন। সাকিবের সামনে নতুন আরেক মাইলফলক ছোঁয়ার হাতছানি।
বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট পেতে সাকিবের লাগবে আর ৪ শিকার। ফিট থেকে সাকিব খেলতে পারলে চট্টগ্রাম টেস্টেই সেটি হয়ে যেতে পারে। সাকিবকে অবশ্য এই অর্জন নিয়ে খুব একটা চিন্তিত মনে হলো না। আজ সংবাদ সম্মেলনে মুখে বিস্তৃত হাসি টেনে শুধু এতটুকু বললেন, ‘কিছু টেস্ট খেললে তো ২০০ টেস্ট উইকেট হয়েই যাবে। এটা খুব বড় ব্যাপার নয়। যদি হয় তাহলে হয়তো অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতে পারে।’
১০০ উইকেট নিয়ে থেমে গেছেন মোহাম্মদ রফিক। তাঁকে কবেই ছাড়িয়েছেন সাকিব। ছাড়িয়ে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্য উচ্চতায়। টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এখন তিনিই সবচেয়ে সফল। তাঁর পিছু পিছু হাঁটছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ২১ টেস্টে ৮৭ উইকেট নিয়ে আছেন তিনে। দ্রুত এগিয়ে আসছেন মেহেদী হাসান মিরাজও (৬৯টি)।
সতীর্থ স্পিনারদের এই উঠে আসাটা ২০০ উইকেটের দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সাকিবকে ভীষণ আশাবাদী করছে, ‘দুজনই এর ভেতরে অনেক ম্যাচ খেলে ফেলেছে এবং ওরা ভালো অভিজ্ঞ এখন। ওরা এখন যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও সেই সামর্থ্যও আছে, যেকোনো একজনই হয়তো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাইজুল খুবই ভালো বোলিং করেছে, অনেক উইকেট পেয়েছে। মিরাজও অনেক ভালো বোলিং করছে। নাঈম যে এসেছে, আমার কাছে সেও অনেক সম্ভাবনাময়। আমাদের স্পিন আক্রমণ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করার নেই। সবাই খুবই আক্রমণাত্মক বোলার, উইকেটশিকারি বলার।’
তবে সাকিব যে কীর্তিগুলো গড়ছেন, বাংলাদেশে তাঁর মাপের আরেকজন পেতে কত যুগ অপেক্ষা করতে হয়, কে জানে! ২০০ উইকেট হয়ে গেলে টেস্টে সাড়ে তিন হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবল কীর্তির ছোট্ট তালিকায় চলে যাবেন। যেখানে আছেন কপিল দেব, জ্যাক ক্যালিস, ইমরান খান, ইয়ান বোথামরা। অবশ্যই আছেন গ্যারি সোর্বাস, অনেকের চোখেই যিনি সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। এ শতকের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন অ্যান্ড্রু ফ্লিটনফ। শন পোলক ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি নাম দুটি এঁদের পাশে হয়তো কিছুটা বেমানান, তবে এই অর্জনে আছেন তাঁরাও।
কদিন আগে নির্বাচনী জিকির উঠলেন শেষ পর্যন্ত সাকিব ও পথে যাননি। আরও চার বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজত্ব করার সামর্থ্য সাকিবের আছে। ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখবেন, তা এখনই বলা কঠিন। টেস্টে সাড়ে ৫ হাজার রানের পাশাপাশি ৩০০ উইকেটের লক্ষ্য খুব একটা অবাস্তব লক্ষ্য নয়। এই ডাবলের কীর্তিও কিন্তু কারও নেই!