• ঢাকা, বাংলাদেশ

তবুও বাণিজ্য মেলায় ‘হকারি পণ্য’ 

 admin 
04th Jan 2020 2:44 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার গুণগত মান বাড়াতে এবার নিম্নমানের পণ্য নিরুৎসাহিত করে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তবে মেলার প্রথম থেকেই নিম্নমানের ‘হকারি পণ্য’ বিক্রি করা হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই ফুটপাতের মতো কানে ভেসে আসছে ‘দেইখ্যা লন, বাইছা লন, একদাম দেড়শ টাকা’। রাজধানীর ফুটপাত মার্কেট সম্পর্কে যাদের সামান্যতম ধারণা আছে তাদের কাছে এ দৃশ্য দেখে মনে হবে, এটি যেন গুলিস্তান মতিঝিল বা ফার্মগেটের কোনো ফুটপাত! যেখানে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।

বাণিজ্য মেলার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক মানের পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন করবেন -এ লক্ষ্য নিয়েই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বসছে। বছরের প্রথম থেকে মাসব্যাপী এ মেলায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, ইরান, জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দেশের প্রতিষ্ঠানের নামে মেলায় পণ্য প্রদর্শন করে আসছে।

দেশি-বিদেশি পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন, রফতানি বাজার অনুসন্ধান এবং দেশি-বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। পাশাপাশি মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিল্পপণ্য ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারীরা একদিকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান, ডিজাইন, প্যাকেজিং ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিপণন করতে পারছেন। অন্যদিকে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনসহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ লাভ করছেন, যা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

তবে গত এক দশক ধরে মেলার ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে দেখা দিয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের পণ্য ও ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা। মূলত এ কারণেই এবার (২০২০) মেলা শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার মেলার গুণগত মান বাড়ানো হয়েছে। মেলায় নিম্নমানের পণ্য নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ কারণে মেলায় স্টলের সংখ্যা কমানো হয়েছে। এছাড়া আগে বিদেশি প্যাভিলিয়নে নিম্নমানের দেশি পণ্য বিক্রি হতো, এবার যাতে এমনটি না হয় সে জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মেলায় নিম্নমানের পণ্য বিক্রয় হওয়ায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা জৌলুস হারিয়েছে। এ জন্য এবার যাতে নিম্নমানের পণ্য মেলায় না আসে সে জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

মেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলেও মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, গত বছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ফুটপাত মানের পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এতে মেলায় আসা এক শ্রেণির ক্রেতা-দর্শনার্থীরা খুশি হলেও মেলায় আশা অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থী বিরক্ত প্রকাশ করছেন।

বাণিজ্য মেলায় ‘দেইখ্যা লন, বাইছা লন, একদাম ১৫০ টাকা’ স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা এমন একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে মেলার পশ্চিম দিকে। প্রতিষ্ঠানের কোনো নাম দেয়া হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটিতে পণ্য বিক্রি করা মামুন নামের একজন বলেন, ‘আমাদের কাছে এক হাজারের বেশি আইটেম আছে। খেলনা সামগ্রী, রান্নার সামগ্রী, ঘর সাজানোর সামগ্রীসহ বাসা-বাড়িতে কাজে লাগে এমন প্রায় সব ধরনের পণ্য আমাদের কাছে আছে। আগ্রহীরা এসব পণ্য থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যটি বেছে নিতে পারবেন। প্রতিটির জন্য দাম দিতে হবে ১৫০ টাকা।’

স্টলটি থেকে পণ্য কিনতে আসা আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমি একটি ফ্রাইপ্যান কিনেছি ১৫০ টাকা দিয়ে। আমার কাছে ফ্রাইপ্যানটি ভালো লেগেছে। মেলায় এমন একদামে পণ্য বিক্রি করা ভালো উদ্যোগ। এতে যারা দামাদামি করে কিনতে পারেন না তাদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।’

মেলার এ ক্রেতা ১৫০ টাকা দিয়ে পণ্য কিনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও মিরপুর থেকে আসা মালিহা নামের এক দর্শনার্থী বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘মেলার মান বাড়ানোর কথা বলে এবার প্রবেশের টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মেলার সবদিকে নিম্ন মানের পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। বিদেশি প্যাভিলিয়নে আগের মতো নিউমার্কেট, চকবাজারে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তাহলে মেলার মান বাড়ানো হলো কিভাবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আন্তর্জাতিক মানের পণ্য বিক্রি হবে। কিন্তু আমাদের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সবসময় দেখছি নিম্নমানের পণ্যের দাপট। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। আয়োজকদের উচিত মেলায় যাতে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য আসে তার নিশ্চয়তা বিধান করা।’

খায়রুল হোসেন নামের আরও একজন বলেন, ‘মেলা শুরুর আগে আয়োজকদের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তাতে ধারণা করেছিলাম মেলায় এবার নিম্নমানের পণ্য আসবে না। কিন্তু মেলায় এসে দেখি আগের মতোই নিম্নমানের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আয়োজকদের বোঝা উচিত, ৪০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে একজন এক বা দেড়শ টাকার পণ্য কিনতে আসবে না।’

এ বিষয়ে মেলার সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেখতে হবে মেলায় যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার ক্রেতা আছে কি-না। অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই। চাহিদা থাকলে সেই পণ্য তো বিক্রি হবেই।’

আপনারা তো মেলা শুরুর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবার মেলায় নিম্নমানের পণ্য আসতে দেয়া হবে না -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো ওই জায়গায় আছি। মেলায় যাতে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি না হয় সে জন্য ভোক্তা অধিদফতর আছে। মেলায় আমরা তাদের জায়গা দিয়েছি। কেউ নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করলে তারা ব্যবস্থা নেবে।’

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এবার বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, অস্ট্রিলিয়া, ভুটান, বুনাই, দুবাই, ইতালি ও তাইওয়ানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠান যেসব পণ্য নিয়ে মেলায় প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাট জাত পণ্য, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়া জাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন সামগ্রী, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ঘড়ি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইমিটেশন জুয়েলারি, সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, ক্যাবল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, আসবাবপত্র ও হস্তশিল্পজাত পণ্য, উপহার সামগ্রী, কনস্ট্রাকশন সামগ্রী, হোম ডেকর, বেকারি পণ্য, বিদেশি বস্ত্র ইত্যাদি।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১