
প্যারালাইজড রিকশাচালক তারা মিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে তারা মিয়া এক হাত ও এক পা দিয়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তবু হার মানেননি শারীরিক অক্ষমতার কাছে। তাকে নিয়ে গত মঙ্গলবার সমকালে ‘এক হাত এক পায়েই রিকশা চালান তিনি, প্যারালাইজড হলেও হার মানেননি তারা মিয়া’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ (যুগ্ম সচিব) ওয়াহিদা আক্তার সমকালকে জানান, প্রতিবেদনটির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। তিনি তারা মিয়ার কষ্টের কাহিনী পড়ে ব্যথিত হয়েছেন। পরে তিনি নেত্রকোনার দুর্গাপুরে তারা মিয়ার গ্রামে একটি বাড়ি করে দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার বোন শেখ রেহানা এ কাজের তত্ত্বাবধান করবেন।
সমকালের স্টাফ রিপোর্টার সাজিদা ইসলাম পারুলের লেখা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্গাপুরের বাসিন্দা তারা মিয়া রাজধানীর অলিগলিতে রিকশা চালান। কাকডাকা ভোরে বের হয়ে ঘরে ফেরেন রাতে। সারাদিনে আয় করেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আবার কোনো কোনো দিন রিকশা গ্যারেজের মালিক রিকশা দিতে নারাজ থাকলে সারাদিন শুয়ে-বসেই পার করেন। ইচ্ছা থাকলেও প্রায় সময় রিকশা পান না তিনি। কারণ, তার শরীরের একাংশ প্যারালাইজড। রিকশা চালানোর সময় তার পুরো শরীর কাঁপতে থাকে। এই শরীর নিয়ে কেন রিকশা চালান? প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘ভিক্ষা করা পাপ। তাই রিকশা চালাই।’
এত কষ্টের ভিড়েও তারা মিয়া শান্তি খোঁজেন দুই সন্তানের মাঝে। আর স্বপ্ন দেখেন বড় মেয়ে ঝুমা আক্তার এমএ পাস করবে। ছেলে হবে ডাক্তার। ঝুমা বর্তমানে বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নেত্রকোনায় মামার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছে। সুসুং সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষায় দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে সে। এসএসসিতে তার ফল ছিল জিপিএ ৫। ছোট ছেলে মোহাম্মদ মাসুম বর্তমানে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। সেও মেধাবী। তারা মিয়ার পাশাপাশি তার স্ত্রী রোকেয়াও শান্তিবাগের বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে সংসারের খরচ জোগান।
তারা মিয়ার মেয়ে ঝুমা জানায়, বাবার আয়ের টাকা দিয়েই সুসুংয়ে লেখাপড়া করছে সে। মামার বাড়িতে থাকা-খাওয়া ও কোচিং খরচ বাবদ প্রতি মাসে তারা মিয়া চার হাজার টাকা পাঠান।
এ ছাড়া তিনি ঢাকায় ছেলের লেখাপড়া বাবদ দুই হাজার টাকা দেন। আর ঘর ভাড়া ও খাওয়ার খরচ জোগান দেন তার স্ত্রী রোকেয়া।
এক হাত, এক পা অকেজো থাকায় রিকশা চালাতে তারা মিয়ার দুঃখ নেই। তবে ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী’ হওয়ায় যাত্রীরা রিকশায় চড়তে চান না। তাই পুঁজি থাকলে মুদি দোকান দেওয়ার ইচ্ছা আছে তার।
সূত্র: সমকাল
Array