• ঢাকা, বাংলাদেশ

দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা 

 admin 
09th Mar 2021 2:32 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য বেশ পুরনো। বাংলাদেশের পণ্য আমদানির প্রধান উৎস দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। তবে চীনের তুলনায় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি অধিক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ১০ শতাংশ ভারতের সঙ্গে হলেও পাল্লা বরাবরই ভারতের দিকে হেলে আছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে মোট ৮৬২ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। এই বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যের মধ্যে ৭৭৫ কোটি ডলারের ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি ৪৫ গুণের মতো বাড়লেও তাতেও ঘাটতি কমাতে পারেনি বাংলাদেশ। বিষয়টি রীতিমতো দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের নানারকম অশুল্ক বাধার (নন ট্যারিফ র‌্যারিয়ার) কারণে বড় বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। ভারতের উচিত বাংলাদেশকে মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগ দেওয়া এবং সাপটা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে সহযোগিতা করা। দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য ১.৬২ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তার কার্যকারিতা খুবই কম বলেও অভিমত দিয়েছেন বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যবৈষম্য শিগগিরই দূর হবে না। তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্যারিফ, নন-ট্যারিফ যে সব পণ্যের সমস্যা রয়েছে তা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। সে উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে মন্ত্রী, সচিব ও কূটনৈতিক পর্যায়ে। দুদেশের বাণিজ্য বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈরী সম্পর্ককে দায়ী করেছেন অনেকে। গেল দুই বছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে বারবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের। আগে থেকে না জানিয়ে কয়েক দফা হুট করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। সে সময় বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ভারতের এমন আচরণে দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন।

এ অবস্থা উত্তরণের জন্য সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব অনুপ ওয়াদেওয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে বাণিজ্যমন্ত্রী স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে দুদেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন দ্বার খুলে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি এ সময় বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চলমান সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে উভয় দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে টিপিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিজিপিএ) স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরপূর্তিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এমন কিছু করতে যা দুই দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যে বাণিজ্য বৈষম্য স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ঊর্ধ্বমুখী, তা ভারসাম্যতা অর্জনে এসব উদ্যোগ কতটুকু কাজে আসবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ভারত থেকে সাধারণত কাঁচামাল আমদানি করা হয় বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী খাতের জন্য, বিশেষ করে বস্ত্রশিল্পের জন্য। এ শিল্পে রপ্তানির উদ্দেশ্যে পোশাক প্রস্তুত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। এসবের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে রয়েছে তুলা, সুতা ও কাপড় যার অধিকাংশই ভারত থেকে আনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬.১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়টি নীতি-নির্ধারণী এবং জনমহলে বড় বিতর্কের বিষয় হয়ে রয়েছে বলেও জানানো হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।

এদিকে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য পরিধি বাড়াতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার। আশাবাদ ব্যক্ত করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালনা হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বাণিজ্য ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারছে দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির কারণ সম্পর্কে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বেশ ভাবিত। ২০১৮ সালে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮.৬ বিলিয়ন ডলার, এটি বাড়ছে। ভারতে রপ্তানির প্রসঙ্গ উঠলে প্রায়ই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অশুল্ক বাধা নিয়ে অভিযোগ করেন। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি ও কাউন্টারভেইলিং ডিউটি আরোপ করে রেখেছে দেশটি। এসবের প্রভাব ক্ষতিকর। বাণিজ্য উৎসাহিত করার ও ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থার অভাব উভয় পক্ষের জন্যই সবচেয়ে বড় অশুল্ক বাধা।
তিনি বলেন, ভারতের বর্তমান আমদানি বাজারের সুবিধা ঠিকমতো নিতে পারছে না বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ভারতের মোট আমদানি ছিল ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ভারত বিশ্ববাজার থেকে অনেক পণ্য কিনছে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নয়। একই জাতের পণ্য বিশ্ববাজারে পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ, কিন্তু ভারতে নয়। নীতি-নির্ধারকদের যথাযথ নীতির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর পথে বাধা অবশ্যই দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেক স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর জন্য নো ম্যানস ল্যান্ডে পণ্য খালাস ও উত্তোলন করতে হয়Ñএতে একদিকে বিলম্ব ঘটে, অন্যদিকে পণ্যের দাম চড়ে। মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্ট না থাকায় দূরবর্তী টেস্টিং সেন্টার থেকে পরীক্ষণ-সমীক্ষণের ফলাফল না আসা পর্যন্ত পণ্য পড়ে থাকে।

ঢাকা-দিল্লি পণ্য পরিবহন খরচ ঢাকা থেকে ইউরোপীয় বা মার্কিন বন্দরে পরিবহন খরচের চেয়ে অনেক বেশি। বাণিজ্য-সংযোগের কার্যকারিতা পরিবহন, বিনিয়োগ ও লজিস্টিকস কানেক্টিভিটির কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে। সাফটা চুক্তির অংশ হিসেবে ভারত তার বাজারে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে পারছে না।

সীমান্তে বাণিজ্য ত্বরান্বিতকরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য কিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কাজও চলছে। ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন এবং দুই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অবকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে এবং নথিকরণের ঝামেলা কমানো হচ্ছে। ২০১৫ সালে সম্পাদিত বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মোটর ভেহিকল চুক্তি অনুযায়ী সীমান্ত দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল অনুমোদন পেলে পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ভারতে সহস্রাধিক আইটেমের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এসবের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, মাছ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার, কাঁচাপাট, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও বাইসাইকেল। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, এসব পণ্য ভারত নিজেই উৎপাদন করে এবং অন্য দেশে রপ্তানিও করে।

এই অভিন্ন পণ্যের উৎপাদন বা সমজাতীয় পণ্যের রপ্তানির কারণে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা কম। এ সুযোগে সে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য নিয়ে দরকষাকষি করতে পারেন। এতে রপ্তানিকারকের নিট লাভ খুব বেশি থাকে না।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১