
করোনাভাইরাসের অভিঘাতে নাকাল পুরো বিশ্ব। প্রায় বছরব্যাপী ধরে চলা এ বৈশ্বিক মহামারীর আঘাতে পাল্টে গেছে প্রতিটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা। উদ্ভূত সমস্যার উত্তরণে তাবত দুনিয়ার প্রতিষ্ঠিত সব গবেষক প্রাণপাত করছেন টিকা আবিষ্কারের জন্য। ফলে আশার আলো ফুটতে শুরু করেছে দেশে দেশে। ভ্যাকসিন তৈরিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতাও দেখিয়েছেন গবেষকরা।
যে পর্যায়ে আছে করোনার টিকা:
বিশ্বজুড়েই ১৭৯টি পৃথক টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ১৪৫টি। আর পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে ৩৪টি। এসব টিকা শেষ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্রি কোয়ালিফাই করলেই বাজারজাত করার অনুমতি পাবে। কিন্তু রাশিয়া গেল ১২ আগস্ট টিকা আবিষ্কারে সফলতার ঘোষণা দিলেও স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। তবে রাশিয়ার টিকা পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশেরও একটি প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্লিনিকগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকা ‘স্পুটনিক ফাইভ’ দেয়া শুরু হয়েছে। এর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিনটিকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এবং ৯৫ ভাগ কার্যকর দাবি করেছে। তবে, ‘স্পুটনিক ফাইভ’ এর এখনও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। সম্প্রতি গণহারে টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এক্ষেত্রে নিজ দেশ অক্সফোর্ডের টিকার জন্য অপেক্ষা করেনি তারা। বরং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফাইজার’ ও জার্মানির ‘বায়োএনটেক’ কোম্পানির টিকাতেই আপাতত আস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
এছাড়া চীন সরকার কোটি কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করলেও চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো দেয়নি। হংকং-ভিত্তিক গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বৃহস্পতিবার তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রাথমিক গবেষণায় এগিয়ে থাকার পরও চীনের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাকসিনের ট্রায়াল সম্পর্কিত চূড়ান্ত ডেটা এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি।
আছে নকল ভ্যাকসিনের শঙ্কা:
করোনাভাইরাসের টিকা বাজারজাত নিয়েও বিভিন্ন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল এরই মধ্যে বাজারে নকল টিকা বিক্রির চেষ্টা হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইন্টারপোলের ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বৈশ্বিক সতর্কতা (গ্লোবাল অ্যালার্ট) জারি করেছে। অপরাধী চক্র যাতে সরাসরি বা অনলাইনে করোনার নকল টিকা বিক্রি করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও একই আশঙ্কার কথা বলছেন। তারা মনে করেন, যখন এটা প্রাইভেট সেক্টরে যাবে তখনই নকল হতে পারে। তাই বেসরকারি ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দেয়ার এখতিয়ার দেয়া হলে সেখানে সরকারি নজরদারি প্রখর করতে হবে। কারা কতটুকু ভ্যাকসিন আনছে, কীভাবে সেগুলোর ডিস্ট্রিবিউশন হচ্ছে, তা নিয়ে জোরাল নজরদারি থাকতে হবে। প্রতারণা রোধে প্রথমত, সরকারকেই ভ্যাকসিনের দায়িত্ব নিতে হবে।
ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান:
কার্যকরী করোনার টিকা পেতে আন্তর্জাতিক লবিং চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। করোনা ভ্যাকসিন যেখানে প্রথমে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে তিনি বলেছেন, যেখানেই আগে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আমরা ভ্যাকসিন আনবো। প্রয়োজনে কিনে আনব। এজন্য আমরা টাকাও প্রস্তুত রেখেছি।
ভ্যাকসিন পেতে যোগাযোগের তৎপরতার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে ট্রায়ালের জন্য চীনা ভ্যাকসিনকে অনুমতি দিয়েছি। রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি। ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তিনি জানান, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইম্যুনাইজেশন-এর (গ্যাভি) সঙ্গেও বাংলাদেশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। ওখানে বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত। বুকিং দেয়া আছে।
দেশে ভ্যাকসিন ক্রয়-নীতি:
করোনাভাইরাসের টিকা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গেল বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্রয়ে পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬ (২)-এ উল্লিখিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে কেনার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি।
ভ্যাকসিন ভীতি কাটাতে এগিয়েছেন বিশ্বনেতারা:
এদিকে করোনা টিকার ভীতি কাটাতে প্রকাশ্যে টিকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা। করোনার যে টিকা সরকারের অনুমোদন পাবে, সেটির প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি করতে তারা ক্যামেরার সামনে ওই টিকা নেবেন।
Array