• ঢাকা, বাংলাদেশ

ধ্বংসের মুখে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টপল্লী : বুড়িগঙ্গার তিন খেয়াঘাট বন্ধ 

 admin 
23rd Sep 2020 2:52 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

বুড়িগঙ্গা নদীর ঢাকার প্রান্তের ওয়াইজঘাট, বাকল্যান্ডবাদ ঘাট ও সিমসন ঘাট বন্ধ করে নতুন বিনয় স্মৃতি সংলগ্ন একটি ঘাট চালু রাখায় ব্যাপক নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের নদী পারাপারে অরাজকতাসহ জানমলের নিরাপাত্তা হুমকিতে রয়েছে। অন্য দিকে বুড়িগঙ্গার কেরানীগঞ্জ প্রান্তের নগর মহল, খাজা মার্কেট ও জেলা পরিষদ মার্কেট এই তিনটি ঘাট বন্ধ হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টপল্লী এলাকার বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ধ্বংসের মুখে পড়েছে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টপল্লী। কাজ হারিয়েছেন শতাধিক নৌকার মাঝি। এ নিয়ে ব্যসায়ীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লী এলাকা ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ঢাকার ওয়াইজঘাট, বাকল্যান্ডবাদ ঘাট ও সিমসন ঘাট বরাবর কেরানীগঞ্জ প্রান্তের নগর মহল, খাজা মার্কেট ও জেলা পরিষদ মার্কেট নামক এলাকায় যাতায়াতের জন্য সরাসরি তিনটি খেয়াঘাট রয়েছে। এই ঘাটগুলো দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করছেন। এ ছাড়া দেশের সর্ববৃহত্তম তৈরি পোশাকের পাইকারি মার্কেট কেরানীগঞ্জে হওয়ায় দেশের ৬৪ জেলার সাধারণ ব্যবসায়ীরা এই খেয়াঘাটগুলো ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছেন। এলাকাবাসী বলেন, কেরানীগঞ্জ থেকে নৌকাযোগে রাজধানীতে পারাপারের অত্যন্ত জনবহুল এই তিনটি খেয়াঘাট দিয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত শত শত নৌকাযোগে কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীতে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু একটি স্বার্থানেষী মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হঠাৎ করে নৌনিরাপত্তার দাবি তুলে গত ৩ সেপ্টেম্বর এ খেয়াঘাট তিনটি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য পন্টুন স্থাপন করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। তারা ঢাকার ওয়াইজঘাট, বাকল্যান্ডবাদ ঘাট ও সিমসন ঘাট নামক তিনটি ঘাট বন্ধ করে নতুন করে নৌকার মাঝিদের জন্য বিনয় স্মৃতিঘাট সংলগ্ন একটি নতুন ঘাট চালু রাখে। যে ঘাটটি ইতঃপূর্বে ব্যবহার হতো না। তা ছাড়া নতুন ঘাটটি ছোট ও অপ্রস্থ হওয়ায় সেখানে শত শত নৌকা ভেড়ানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া ঘাটের জমি দখল করে চায়ের দোকান, রিকশার গ্যারেজসহ বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। একপাশে পড়ে আছে ময়লার স্তূপ। এ কারণে দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করতে হয় নৌ-পারাপারকারীদের। ঘাট এলাকায় অস্থায়ী দোকানঘর স্থাপিত হওয়ায় সড়কের একাংশ দখল হয়ে গেছে। ফলে সড়ক সরু হওয়ায় যানজট সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা।

এ ছাড়া তিনটি ঘাটের খেয়া নৌকা একটি ঘাটে ভেড়াতে গিয়ে মাঝি ও যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। মাঝিদের ঘাটে ভেড়ানোর প্রতিযোগিতার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তারা প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। অনেক নৌকা ঠিকমতো ঘাটে ভেড়াতেও পারছেন না। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের অন্য নৌকায় করে কিনারে যেতে হয়। এ সময় নৌকাটি ছেড়ে দিলে ঘটে বিপত্তি। তখন ওই যাত্রীকে আবার রিটার্ন যেতে হয় যে পাড় থেকে আসছেন সে পাড়ে। খেয়াঘাটের পাশেই নতুন করে চালু করা হয়েছে ওয়াটার বাস। যা যানজটের আরো বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবেই চলছে নতুন চালু করে দেয়া বিনয় স্মৃতি সংলগ্ন ঘাটটি।
কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লীতে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশিত বিকল্প ঘাট ব্যবহারে নানা সমস্যার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃৎ তৈরি পোশাকের এই পাইকারি বাজার। ইতোমধ্যে তাদের বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমে আসছে। অনেক শোরুমে দেখা যায়, সেলসম্যান ও মালিক বসে অলস সময় পার করছে। তাদের বেচাকেনা নেই বললেই চলে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বাদল জানান, সদরঘাটে চলাচলরত লঞ্চমালিকদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিআইডব্লিউটিএর শত বছরের পুরনো তিনটি খেয়াঘাট বন্ধ করে দিয়েছে। যে ঘাটটি নতুন করে চালু করেছে সেটি ব্যবসায়ী এলাকা থেকে দূরত্ব অনেক। তাই দূর-দুরান্তের পাইকাররা তাদের চিরচেনা ঘাট বন্ধ ও নতুন ঘাট খুঁজে না পাওয়ার কারণে মালামাল না নিয়ে চলে যায়। এ কারণে গত কয়েক সপ্তাহে আমাদের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে আসছে। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লী ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা বিআইডব্লিউটিএর বেঁধে দেয়া সময় ও তাদের নির্দেশিত ঘাট ব্যবহারে না রাজি প্রকাশ করে পূর্বের জায়গায় ঘাট ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছন।

নাম না বলার শর্তে একজন খেয়াঘাট ইজারাদার বলেন, লঞ্চমালিকদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ খেয়াঘাট বন্ধ করে খেয়াঘাটের জায়গায় লঞ্চ ভেড়ানোর জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর পন্টুন বসিয়েছে। এর প্রতিবাদে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করা তিনটি ঘাটের মাঝিরা নৌকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী অবরোধ করে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে আসেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। তিনি কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক শেষে সমস্যা নিরসনে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক ও যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিনের সাথে আলোচনায় বসে এবং খেয়াঘাট খুলে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু গত পনেরো দিনেও তাদের আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো: মুসলিম ঢালী বলেন, এ ঘাট তিনটি বন্ধ হলে এখানকার গার্মেন্টস ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় রেখে এবং ঐতিহ্যবাহী এসব নৌকা ঘাটকে বাঁচিয়ে রেখে এলাকার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টপল্লীটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম তৈরি পোশাকের মার্কেট। নৌকাযোগে এখানকার বহু পাইকার তাদের মালামাল পার করে থাকেন। খেয়াঘাট বন্ধ হয়ে গেলে এ পল্লীটি যে মুখ থুবড়ে পড়বে তার নিদর্শন গত কয়েক দিনেই আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, যে ঘাট দিয়ে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু হয়েছে সেসব ঘাটের সাথে আমাদের ব্যবসায়ীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তা ছাড়া ওয়াটার বাসে শুধু যাত্রীই পারাপার হতে পারেন। মালামালসহ আমাদের ব্যবসায়ীরা পারাপার হতে পারবেন না। কাজেই এসব ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে ঘাট সম্পৃক্তরা সবাই বিপদে পড়ে যাবেন। গার্মেন্টশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এসব ঘাট কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তার মতে মালিকদের গাফিলতি ও অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থানে নোঙর করার কারণে নৌদুর্ঘটনা ঘটে। পরিকল্পিতভাবে টারমিনালে নোঙর করলে ও ছেড়ে গেলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। তিনি মনে করেন ঘাট বন্ধের নামে একটা মহল এখানকার গার্মেন্টস ব্যবসা ধ্বংস কারার চক্রান্ত করছে। তিনি এসব চক্রান্ত থেকে সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোড় অনুরোধ জানান এবং আবার আগের মতো ঘাট চালুর দাবি জানান।

তবে লঞ্চমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সদরঘাট পন্টুনের সাথে খেয়াঘাট থাকায় আমরা সবসময় হুমকির মুখে থাকি। পোর্ট আইনে আছে জাহাজ ভেড়ানো ঘাটের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না, কিন্তু পন্টুনের কাছাকাছি খেয়াঘাট থাকায় মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চের পাখাগুলো অনেক বড় হওয়ার কারণে লঞ্চ চালু বা ভেড়ানোর সময় পাখার পানির ধাক্কা নৌকাগুলো সামলাতে পারে না। তাই দুর্ঘটনায় পতিত হয়। আর এর খেসারত দিতে হয় লঞ্চমালিকদের।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান মাহবুবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি  বলেন, লঞ্চমালিকদের এজেন্ডা নয়, জনগণের জানমালের নিরাপাত্তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, খেয়াঘাটগুলো জাহাজ ভেড়ানো পন্টুনের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতি মাসেই প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এসব কারণে প্রতি বছর ১০-১২ জন মানুষ মারা যায়। তাই ঘাট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নতুন ঘাটে ব্যবসায়ী ও মাঝিদের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার করে দেয়া হবে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১