• ঢাকা, বাংলাদেশ

নারীর করণীয় সম্পর্কে বিশ্বনবির ৬ উপদেশ 

 admin 
25th Jun 2020 1:13 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

এ ধরণীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত নারী। মায়ের জাতি নারী। ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। অথচ এমন এক সময় ছিল যখন নারীর জীবন ও জীবিকা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মর্জির উপর নির্ভর করত। সে জীবন থেকে নারীকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। বসিয়েছে সম্মানের আসনে। হাদিসে পাকে ঘোষণা করা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।

নারী জাতি সঠিক পথে চললে পুরো পরিবার পাবে সঠিক পথের দিশা। এ কারণেই নেপালিয়ান বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও আমি শিক্ষতি জাতি দেব।’ এ কথা থেকে বুঝা যায়, আদর্শ, মার্জিত রুচিবোধ সম্পন্ন শিক্ষিত মা পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও সন্তানদের জন্য আদর্শ।

‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত’- এ ঘোষণা যে সমাজে করা হয়েছিল সে সময় পুরো নারী সমাজের অবস্থা ছিল মারাত্মক ভয়াবহ। যা কুরআনের পরিভাষা থেকেই আঁচ করা যায়। আল্লাহ বলেন-
‘যখন তাদের কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, মনের কষ্টে তাদের চেহারা কালো হয়ে যায়। তাদের যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তার কারণে তারা নিজ সম্প্রদায়ের লোক থেকে মুখ লুকিয়ে রাখে। তারা ভাবে এই সন্তান রাখবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তাদের সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

কন্যা সন্তানের জন্ম তাদের কাছে এত অপমানজনক ছিল যে, লাজ-লজ্জার ভয়ে, মনের কষ্টে তারা কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী জাতিকে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। দিয়েছেন সমাজের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। নারীর জন্য দিয়েছেন অনন্য সব সুন্দর সুন্দর যুগশ্রেষ্ঠ উপদেশ। যে উপদেশ পালনে নারী যেমন হবে সম্মানিত আবার এ সম্মানের সুবিধা ভোগ করবে পুরো পরিবারের মানুষ।

নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে নারীর প্রতি সুবিচার করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের কল্যাণের ব্যাপারে অসিয়ত (নির্দেশ) গ্রহণ করো।’ নারী জাতির জন্য প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে বিশেষ নসিহত হলো-

আল্লাহর ভয় অর্জন করা
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় মানুষের সেরা গুণ। নারী যদি নিজের মধ্যে আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারে তবে এ গুণে গুণাম্বিত হবে পুরো পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। তাকওয়া নারীকে যাবতীয় স্খলন ও প্ররোচনা থেকে রক্ষা করতে পারে। তাকে শৃঙ্খলাপূর্ণ আদর্শ জীবনে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

কেননা তাকওয়া বা খোদাভীতির অর্থ হলো আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপ-অনাচার, অন্যায়-অবিচার ও মন্দ-নিন্দনীয় কাজ থেকে নিজেকে বিরত থাকা। আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা! তোমার জন্য আবশ্যক হলো আল্লাহর ভয় অর্জন করা।’ (তিরমিজি)

ইসলামে তাকওয়ার ভিত্তিতেই মানুষের গুণ ও মর্যাদা নির্ধারিত হয়। তাকওয়া অর্জন সম্পর্কে একাধিক ঘোষণা রয়েছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মানিত, যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)
– ‘তোমরা পাথেয় অর্জন করো। নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। তোমরা আমাকে ভয় করো হে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ!’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত : ১৯৭)

> সগিরা গোনাহ থেকে বিরত থাকা
নারী জন্মের পর থেকে সময়ের পবিক্রমায় তার পিতা, ভাই, স্বামী ও পুত্রের পক্ষ থেকে যে ভরণ-পোষণ লাভ করে থাকেন। তাদের জন্য এ সবই হালাল। যদি না নিজে কোনো কাজের মাধ্যমে তা হারামে রূপান্তর করে। যেহেতু নারী সব সময় বা বেশির ভাগ সময় হালাল রিজিক খায়, তাই ইসলামিক স্কলারদের মতে, নারীর জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা পুরুষের তুলনায় অনেক সহজ। এ জন্য তাদের ছোট ছোট মন্দ স্বভাব ও পাপ কাজগুলো পরিহার করতে হবে।

নারীসমাজে অনেক পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা ও হিংসার প্রবণতা দেখা যায়। এ ছাড়া সময় ও অর্থ অপচয়, টিভি ও সিরিয়ালের মতো অর্থহীন কাজে নারীরাই সবচেয়ে বেশি আসক্ত। যা নারীর দুনিয়া ও আখেরাতকে ক্ষতিগ্রস্তই করে। এসব কর্মকাণ্ড নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করে। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা ও উপদেশ হলো, নারীদের ছোট ছোট গোনাহগুলো পরিহার করা। ছোট ছোট মন্দ অভ্যাস ও পাপকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। অথচ এর পরিণতি ভয়াবহ। হাদিসে এসেছে-
– হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আয়েশা, আমল বিনষ্টকারী বিষয় (ছোট গোনাহ) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা আল্লাহ তা প্রত্যাশা করেন।’ (ইবনে মাজাহ)

– আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আজ তোমরা কোনো কোনো কাজকে চুলের চেয়ে ছোট (তুচ্ছ অর্থে) মনে করো, অথচ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করতাম।’ (বুখারি)

> যথা সময়ে নামাজ পড়া
ঘরকে মসজিদে রূপান্তর করার অন্যতম হাতিয়ার নারী। কোনো নারী ইচ্ছা করলে যে কোনো ঘরকেই নামাজি পরিবেশে পরিণত করতে পারে। এটি নারীর জন্য অনেক সহজ কাজ। শুধু প্রয়োজন নারীর ইচ্ছা শক্তি। এ কারণেই ইসলাম নারীকে ঘরে যথা সময়ে নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করেছে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করে, স্বামীর নির্দেশ মান্য করে, তবে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (ইবনে হিব্বান)

ইসলামিক স্কলারদের মতে-
‘নারী যদি যথা সময়ে তথা প্রথমভাগে সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করে, তাহলে জামাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব পাবে। তাই কাজের অজুহাতে বা অলসতা করে মুমিন নারীরা নামাজ বিলম্বিত বা কাজা করবে না, বরং সময়মতো নামাজ আদায় করবে।’

> চলাফেরায় সংযত হওয়া
নারী-পুরুষ উভয়কে শালীনভাবে সংযত হয়ে চলাফেরার নির্দেশ দেয় ইসলাম। ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’ এ ঘোষণা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান। তবে নারীর প্রতি যেহেতু পুরুষের আকর্ষণ অনেক বেশি প্রবল, তাই নারীকে নারীসুলভ সৌন্দর্য প্রদর্শন না করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।
তাই অশ্লীল পোশাক ও চালচলন পরিহার কআ নারীর জন্য আবশ্যক। শুধু ইসলাম নয়, পৃথিবীর সব ধর্মই নারীকে শালীন ও সংযত পোশাক পরার নির্দেশ দেয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আয়াত নাজিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
– ‘তোমরা ঘরে অবস্থান করো এবং জাহেলি (বর্বর) যুগের মতো নিজেদের (রূপ, সৌন্দর্য) প্রদর্শন কর না।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৩)

– ‘মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। আর মুমিন নারীদের বলে দিন, যেন তারা তাদের দৃষ্টিও অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। সাধারণত যা প্রকাশ পায়, তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন ঘাড় ও বুক মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০-৩১)

> অল্পে সন্তুষ্ট থাকা
সুখী জীবনের মূলমন্ত্র অল্পে সন্তুষ্ট থাকা। ইসলাম প্রত্যেককেই অল্পে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষাও এমনই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাগতিক বিষয়ে নিম্নস্তরের দিকে, পরকালীন বিষয়ে উচ্চস্তরের দিকে তাকিয়ে অনুপ্রাণিত হতে বলেছেন।

বর্তমানে এমন অনেক ঘটনাও সংঘটিত হয়ে যে, কোনো কোনো নারী সমাজের অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করে। অনেক সময় তাদের অন্যায় চাহিদা পূরণের জন্য স্বামীকে সুদ-ঘুষসহ অন্যায় পথে, পাপ কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করায়।

নারীর অল্পে সন্তুষ্টির অন্যতম একটি দিক হলো, সামর্থ্য ও চেষ্টার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা। মুমিন নারী স্বামীর আন্তরিকতা ও চেষ্টাকে সম্মান করবে। তার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করবে। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমতের দৃষ্টিতে তাকান না, যে নারী স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। অথচ সে তার প্রতি মুখাপেক্ষী।’ (নাসাঈ)

তাই এসব ক্ষেত্রে নারীকে সহনশীল, অল্পে সন্তুষ্টি ও ধৈর্যশীল হওয়ার পরামর্শ দেয় ইসলাম। এ কারণে ইসলামের সোনালী যুগের নারীরা তাদের স্বামীদের বলতেন-
‘তোমরা হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকো। কেননা আমরা ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারব; কিন্তু জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে পারব না।’ (ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন)

– স্বামীর সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া
ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের পোশাকতুল্য বলেছে, যেন তারা পরস্পরের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়। স্বামীর সংকটে স্ত্রী, স্ত্রীর সংকটে স্বামী পাশে থাকবে, এটাই ইসলামের নির্দেশনা। এর অনন্য দৃষ্টান্ত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা।

আম্মাজান হজরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বামীর সুঃখে-দুঃখে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণেই তাঁর মৃত্যুর পরও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কৃতজ্ঞতাচিত্তে তাঁর কথা বেশি বেশি স্মরণ করতেন। এমনকি তাঁর জীবদ্দশায় কাউকে বিয়েও করেননি। তাঁর মৃত্যুর পরও তিনি তাঁর সন্তানদের প্রতি পরিপূর্ণ মমতা ও ভালোবাসা বজায় রেখেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম্মাজন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আহা মৃত্যুর পর তাঁর কথা এত বেশি স্মরণ করতেন যে, অন্য স্ত্রীরা ঈর্ষাকাতর হয়ে যেতেন। একবার হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঈর্ষা প্রকাশ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, ‘মানুষ যখন আমাকে অস্বীকার করেছিল তখন সে আমার প্রতি ঈমান এনেছে, মানুষ যখন আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে তখন সে আমাকে সত্যাবাদী বলেছে, মানুষ যখন আমাকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছে তখন সে আমাকে তার সম্পদ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আল্লাহ তার মাধ্যমে আমাকে সন্তান দান করেছেন।’ (ফাতহুল বারি)

স্বামী-স্ত্রীর কতজ্ঞতাবোধের দৃষ্টান্ত এমনই হওয়া উচিত। তবেই দুনিয়ার সব সংসারে আসবে সীমাহীন শান্তি। জান্নাতি পরিবেশ ও আবহ বিরাজ করবে।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সব নারীকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নসিহতগুলো মেনে নিজ নিজ সংসারকে জান্নাতের টুকরায় পরিণত করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ ঘোষিত নসিহতগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১