
কথায় বলে নিরামিষভোজীরা বেশিদিন বাঁচে। কথাটি একেবারেই ফেলে দেয়ার মতো নয়। নিরামিষ খাবারে পর্যাপ্ত ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, প্রোটিনসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এতে ক্ষতিকারক ফ্যাট থাকে না। তাই শাকসবজি খেলে শরীরে বাড়তি মেদ জমতে পারে না।
শাকসবজি, ফলমূল, সয়াবিন, মাশরুম, ডাল ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১২, লোহা, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক ক্যালসিয়াম ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড। যেগুলো শরীরের কার্যকলাপকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে সহায়তা করে।
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা আমাদের চোখ ও ত্বক ভালো রাখে। অকালে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। শরীরকে জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে।
শাকসবজিতে যে পরিমাণে ফাইবার ও লোহা থাকে, তা আমাদের বিপাক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সচল রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া নিরামিষ খাবারে ক্যালরি কম থাকে বলে তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সবুজ সবুজশাক সবজিকে বলা হয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আধার, যা ফ্রি র্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাব বিনষ্ট করে। পাশাপাশি এসব খাবারে থাকে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি, যা আমাদের মস্তিষ্কের কোষ সতেজ ও সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সবুজ শাকসবজিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লেভোনোয়েড, সালফোরাফান। এগুলো বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, যেমন কোলন ক্যান্সার, পাকস্থলী ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের কোষবেড়ে ওঠায় বাধাপ্রাপ্ত করে
অনেকে মনে করেন মাছ, মাংস ও ডিমের পরিপূরক আর কিছু নেই। কিন্তু এগুলোর পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় সয়া রাখা যেতে পারে। এর ভিটামিন কে, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি ছাড়াও প্রয়োজনীয় নিউট্রিশনস, যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, জিংক ইত্যাদি প্রাণিজ প্রোটিনের চেয়ে অনেক বেশি উপকারী।
আগেই বলা হয়েছে, শাকসবজিতে ক্ষতিকারক ফ্যাট থাকে না। ফলে শরীরে কোলেস্টেরলের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা দেখা দেয় না। তাছাড়া মৌসুমি শাকসবজিতে যে পরিমাণে ফাইবার থাকে, তা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা কমায় ও হূদযন্ত্রকে ভালো রাখে।
অনেকেই মনে করেন, আমিষহীন খাবার অর্থাৎ কেবল নিরামিষ খাবার খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন যদি সঠিক পরিমাণে নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা যায়, তাহলে শরীর অনেক বেশি সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকবে। তবে আমিষ খাবারে অভ্যস্ত যারা, তারা হঠাৎ করেই নিরামিষে অভ্যস্ত হতে পারে না। তাই খাদ্যাভ্যাসে অল্প অল্প করে পরিবর্তন আনতে হবে। সেক্ষেত্রে খাবারে একটু বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ফল রাখুন। এভাবে গোটা সপ্তাহে অল্প অল্প করে আমিষ খাওয়া কমান। সেক্ষেত্রে নিরামিষ খাবার রান্নায় পটু হলে বেশি সুবিধা হবে নতুন খাদ্যাভ্যাস তৈরিতে। এতে রুচি তৈরি হবে শাকসবজি খাওয়ার। কারণ সুস্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত খাবারটি খেলেই হয় না। খাওয়ার ইচ্ছাটাও স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। তাই যেভাবে শাকসবজি রান্না করলে স্বাদ ভালো হবে, সেভাবেই রান্না করুন। তবে এ কথাও মনে রাখা জরুরি, মাছ-মাংস খাবেন না বলে প্রোটিন যেন খাদ্যতালিকা থেকে বাদ না পড়ে। খাবারে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন ও ফাইবার থাকে। তাই শাকসবজি, ফল ইত্যাদির খাদ্যগুণ জানতে চেষ্টা করতে হবে। সেই সঙ্গে বয়স হিসেবে কতটুকু খাবেন, সেটাও জেনে নিতে হবে।
সব সময় চেষ্টা করতে হবে মৌসুমি তাজা ফল-সবজি ও ফলমূল কেনার। কৃত্রিম সার ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা শাকসবজির কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে স্থানীয় বাজার থেকেই এসব কিনুন। রান্নার আগে শাকসবজি ভালোভাবে শুয়ে নিতে হবে। ফলের ক্ষেত্রে লবণ ও ভিনেগার দিয়ে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে তারপরই খাবেন। আর সবজি রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল ও মসলা এড়িয়ে চলুন।
Array