• ঢাকা, বাংলাদেশ

নীতিমালা শিথিলের পরও গতি ফিরছে না ঋণপ্রবাহে 

 admin 
26th Aug 2020 2:37 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক 

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করার পরও ঋণপ্রবাহে গতি আসছে না। দেড় যুগ পর নীতিনির্ধারণী সুদহার কমানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো কম খরচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যাতে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য কমানো হয়েছে রেপোর সুদহার। এর আগে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সীমা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো উদ্যোগই ঋণপ্রবাহ বাড়াতে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগমুখী করা যাচ্ছে না। সুফল মিলছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের।

তিন অর্থবছর যাবত ধারাবাহিকভাবে কমছে বিনিয়োগ : বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত চারটি অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ছিল ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবারও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যায় ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা আরও কমে হয় ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। করোনাভাইরাসের প্রবাহে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরও কমে যাচ্ছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।

পলিসি রেট কমানো : জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নেয় ব্যাংক রেটের মাধ্যমে। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নিলে তুলনামূলক কম সুদে বিনিয়োগ করতে পারে। অপর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঋণ নেয় ব্যাংক রেটে। আবার আমানতের সুদহারও নির্ধারণ হয় অনেকটা ব্যাংক রেটের ভিত্তিতেই। এ কারণে ব্যাংক রেট অর্থের সরবরাহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘ দেড় যুগ পর নীতিনির্ধারণী সুদ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়। একই সাথে অন্যান্য নীতিনির্ধারণী সুদহার তথা রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদহারও কমানো হয়েছে। করোনাকালীন সঙ্কট মেটাতে সস্তায় উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতেই নীতিনির্ধারণী এসব সুদহারে কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ ব্যাংক রেট কমানো হয়েছিল ২০০৩ সালে। ওই সময় ব্যাংক রেট ছিল ৬ শতাংশ। তখন ১ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এর পর ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সভায় দাবি উত্থাপন করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক রেট কমানো হয়নি।

ব্যাংক ঋণের সুদহার ১ অংকে নামিয়ে আনা : গত ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ সুদহার কার্যকর করতে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।

ঋণসীমা বৃদ্ধি : ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে ঋণসীমা বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে একটি ব্যাংক তার মোট আমানতের ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারত। কিন্তু ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৭ শতাংশ করা হয়। এতে ব্যাংকের প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ হয়।

সিআরআর হার কমানো : ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে তার পুরোটাই বিনিয়োগ করতে পারে না। এর মধ্যে একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে নগদে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সংরক্ষণ করতে হয়। এটাকে ব্যাংকিং ভাষায় সিআরআর বলা হয়। এ সিআরআর হার দেড় শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়। এতে ব্যাংকগুলোর হাতে বাড়তি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা চলে যায়।

ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ক্ষমতা বাড়াতে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন : সরকার বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের করোনাকালীন সাপোর্ট দিতে সুদের হারের ওপর সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদের ওপর ভর্তুকি দেয়। সুদের ওপর ভর্তুকি নিতে উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাংকগুলোকে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলো তহবিল সঙ্কটের কথা বলে ঋণ বিতরণ করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তহবিল জোগানের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার অর্ধেক ২৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়।

বেসরকারি খাতের বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ৬ মাসে এতগুলো উদ্যোগ নেয়ার পরও বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে কোনো গতি আসছে না। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ব্যাংকগুলো থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। আর ব্যাংকগুলো বলছে, ব্যাংকের কাছে ভালো উদ্যোক্তা আসছে না। এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা অনেকটা ব্যাংকারদের প্রতি বিরক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি ব্যাংকারদের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর কড়া বার্তা দিয়েছেন। ব্যাংকারদের তিনি বলেছেন, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার অর্থ পুরোটাই বিতরণ করতে হবে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলোর নানা সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১