
কিলিয়ান এমবাপে যেন পাথরে গড়া মূর্তি। রেফারির শেষ বাঁশির পর এস্তাদিও দা লুজের সবুজ পিচে হচ্ছিল অনেক কিছুই। কেউ উল্লাসে মেতেছেন, কেউ হতাশায় দু’হাতে মাথা ঢেকে রেখেছেন, কেউবা তখনো বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী হয়ে গেল! এর মাঝে এমবাপে নির্বিকার দাঁড়িয়ে একটু দূরে।
অন্যদিকে নেইমার মাথা ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। শিরোপা উৎসব বাদ দিয়ে বায়ার্ন ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবা এগিয়ে গেলেন ব্রাজিলিয়ানকে সান্ত্বনা দিতে। কয়েক মিনিট ধরে নেইমারকে শান্ত করার চেষ্টা করেও কাজ হলো না। কাঁদলেন ব্রাজিলিয়ান। বায়ার্ন কোচ হান্স ফ্লিক উৎসব বাদ দিয়ে চলে এলেন তার কাছে।
শুরুতে কান্নায় ভেঙে পড়লেও পরে নিজেকে শক্ত করেছেন নেইমার। মানিয়ে নিয়েছেন বাস্তবতার সঙ্গে। টুইটারে লিখেছেন, ‘হেরে যাওয়া খেলার একটি অংশ, আমরা সবকিছুই চেষ্টা করেছি, শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি।’ এমবাপেও প্রায় একই রকম কথা লিখেছেন। তবে হতাশা লুকাননি, ‘সেরা পুরস্কারটি না পেয়ে বছর শেষ হওয়ায় হতাশ, কিন্তু জীবন এমনই। আমরা সবকিছু দিয়েই চেষ্টা করেছি।’
৪০ কোটি ২০ লাখ ইউরো খরচ করে এ দুই তারকাকে পিএসজি প্রেসিডেন্ট নাসের আল খেলাইফি একটা উদ্দেশ্যেই এনেছিলেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে হবে। তিন বছর পর মোক্ষম এক সুযোগ এসেছিল। কিন্তু দুই সুপারস্টার পারলেন না এবার। তবে খেলাইফি ধৈর্য ধরেছেন, ‘আমি আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। দারুণ এক মৌসুম কাটিয়েছি, দারুণ টুর্নামেন্ট খেললাম। কেউ ভাবেনি আমরা ফাইনাল খেলব। জেতার খুব কাছাকাছি ছিলাম কিন্তু এটাই ফুটবল। আগামী মৌসুমে আবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার চেষ্টা করব, কারণ এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে উড়িয়ে দেওয়া বায়ার্নকে ঠিক চেনা যাচ্ছিল না। আগের ১০ ম্যাচে ৪৩ গোল করা বাভারিয়ানরা কোনো ম্যাচেই দুইয়ের কমে গোল করেনি। দুগোলও করেছে একটি ম্যাচে। বাকি সব ম্যাচে অন্তত তিন গোল করেছে। তবে তাতে কিছু আসে যায় না। ৫৯ মিনিটে দরকারি গোলটা আদায় করে নিয়েছে হান্স ফ্লিকের দল। আর তাতেই প্রথম দল হিসেবে দুবার ট্রেবল জিতল তারা।
ম্যাচের প্রথম ভালো আক্রমণটি করে পিএসজি। ১৪তম মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে বায়ার্নের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপে। গোলমুখে শটও নিয়েছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার। কিন্তু তা ব্লক করেন লিওন গোরেৎজকা। দু’মিনিট পর একই কায়দায় এমবাপের আরেকটি প্রচেষ্টা ভেস্তে দেন জশুয়া কিমিচ। পাঁচ মিনিট পর গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল পিএসজি। দুর্দান্ত সেভে বায়ার্নকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যার।
ফের বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেছিল প্যারিসিয়ানরা। এমবাপের বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গড়ানো শট নিয়েছিলেন নেইমার। লক্ষ্য ছিল নয়্যারের দুই পায়ের নিচে দিয়ে বল জালে পাঠানো। কিন্তু পা দিয়ে দারুণভাবে বল ঠেকিয়ে দেন এই জার্মান গোলরক্ষক।
প্রতিপক্ষের টানা আক্রমণের ধাক্কা সামলে এরপর নিজেদের ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিতে শুরু করে বায়ার্ন। প্রথমার্ধের বাকি অংশে অধিকাংশ সময়ে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখে তারা। ভাগ্যের সহায়তা না পাওয়ায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি বায়ার্নের। ২২ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে শট নিয়েছিলেন রবার্ট লেভানডোস্কি। পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে ফাঁকি দিলেও বাধা পায় পোস্টে।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও গোছানো খেলা উপহার দেয় বায়ার্ন। চোখ ধাঁধানো আক্রমণে ৫৯ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। ডান প্রান্ত থেকে কিমিচের ক্রসে ডি-বক্সের ভেতর থেকে হেডে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন কোমান (১-০)। দুই মিনিট পর কোমানই আরেকটা গোল করতে পারতেন। তবে তার ক্রস রুখে দেন পিএসজি ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা।
৭০ মিনিটে ডি মারিয়ার পাসে কাছের পোস্টে নেওয়া মার্কিনোসের দুর্বল শট অনায়াসে পা দিয়ে রুখে দেন ন্যুয়ার। বদলি নামা এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোটিং শেষদিকে পেয়েছিলেন সমতায় ফেরানোর ভালো দুটি সুযোগ। কিন্তু একবারও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি।
Array