
করোনা মহামারীর মধ্যে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের জীবন-জীবিকা শর্ত সাপেক্ষে হোটেল-মোটেল জোনগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া পর্যটন স্পটে যাওয়া যাবে না। এমনকি মাস্ক ব্যবহার না করলে পর্যটকরা সেবা পাবে না। পর্যটকদের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, নো মাস্ক নো সার্ভিস। আর সব স্থানে ন্যূনতম ৩ ফিট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। আর সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধ। ২৪ আগস্ট সোমবার কক্সবাজার রিজিয়নের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসায় এবং প্রতিরোধ ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট থেকে সীমিত আকারে শর্তসাপেক্ষে কক্সবাজার সদরের পর্যটন স্পটগুলো সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিবেচনা খুলে দেয়ার পূর্বে বিভিন্ন সেক্টরে কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়ার পরও কিছু বিধিনিষেধ যথাযথভাবে পালন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে হোটেল-মোটেল জোনের মালিক ও তাদের সংগঠনের নেতৃত্বসহ সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে করণীয় নির্ধারণ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে ১২ দফা শর্তাবলী দেয়া হয়েছে। যা সবার জন্য প্রযোজ্য। আর বিশেষ শর্তাবলী দেয়া হয়েছে। হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্টহাউস, কটেজ ও রিসোর্টগুলোর জন্য বিশেষ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এ জন্য কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে।
হোটেলের প্রবেশমুখে বেসিন ডিসইনফেকশন ট্রে, তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা থাকতে হবে। হোটেল লবিসহ সব রুমে হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। প্রতি বেডে একজন পর্যটক। তবে স্বামী-স্ত্রী ও নাবালক বাচ্চার ক্ষেত্রে এ নিয়ম শিথিলযোগ্য। রুম ডেলিভারি ফুড সার্ভিস, হোটেল রেস্টুরেন্টে ৩ ফুট দূরত্বে বসে খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। ওয়েটারদের সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক রুম দুইবার ভাড়া দেয়ার মধ্যে ন্যূনতম তিন দিন সময় গ্যাপ রাখতে হবে। দৃশ্যমান স্থানে স্বাস্থ্যবিধি প্রদর্শন, অনিয়মের অভিযোগ জানাতে স্থানীয় প্রশাসনের হটলাইন (০১৭৩৩৩৭৩১২৭) প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিয়মিত হোটেল কর্মচারীদের করোনা টেস্ট করার কথা বলা হয়েছে। পর্যটকদের রেজিস্ট্রার পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন ও সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। পর্যটকদের পালনের শর্তাবলীর লিফলেট হোটেলে উঠার সময় পর্যটকদের হাতে দিতে হবে। হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষকেই এসব দায়িত্ব পালন করতে হবে।
গণপরিবহনে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে নির্ধারিত আসন সংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ যাত্রী পরিবহন করতে বলা হয়েছে। বাসের গেটে কক্সবাজারগামী যাত্রীদের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা করার শর্ত দেয়া হয়েছে। ড্রাইভারের পাশে কোন যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করা যাবে না। অটোরিকশার পেছনে সর্বোচ্চ ৩ জন এবং সিএনজি অটোরিকার পেছনে সর্বোচ্চ ২ জন যাত্রী বসতে পারবে। রেন্ট এ কার থেকে গাড়িভাড়া নিলে তা অপরিচিত কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।
বিচ মার্কেট : বিচের হকার মার্কেটগুলো একই দিনে পাশাপাশি দুই দোকান খোলা রাখা যাবে না। পর্যটকদের বিভিন্ন পণ্য হাতে ধরে দেখাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আর পণ্য বিক্রি বিরতিতে সেখানে স্যানিটাইজ করতে হবে। প্রত্যেক দোকানে অবশ্যই ময়লা ফেলার ডাস্টবিন বা ঝুড়ি থাকতে হবে। এ সব শর্ত বিচ মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিকদের পালন করার ওপর জোর দিতে হবে।
বিচবাইক ও জেটস্কি : বিচবাইক জেটস্কি মালিকদের ড্রাইভার পিপিই পরিহিত অবস্থায় থাকবে। একসঙ্গে এ সব পরিবহনে একজনের বেশি যাত্রী উঠানো যাবে না। প্রতিবার যাত্রী উঠা শেষে বাইককে ব্লিচিং পানি বা অন্য জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। আর কিটকটগুলো ন্যূনতম ৩ ফিট দূরত্বে থাকবে। এ নিয়ম পালনে মালিককে দায়িত্ব নিতে হবে। আর ব্যবহার শেষে জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।
যারা পর্যটকদের ক্লোজ কন্টাকে যাবেন তারা পিপিই পরিহিত থাকতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ যাবতীয় জীবাণুনাশক সামগ্রীর ব্যবস্থা থাকবে এবং প্রতি পর্যটকের ব্যবহার শেষে সেগুলো স্যানিটাইজ করতে হবে।
পর্যটন স্পট (রেডিয়েন্ট ও ফিশ ওয়ার্ল্ড) পর্যটন স্পটে অতিরিক্ত বড় যট এড়াতে নির্দিষ্ট সংখ্যার অধিক পর্যটক প্রবেশে বাধা। পর্যটন স্পটের প্রবেশ পথে বেসিন, স্যানিটাইজার, তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। এজন্য পর্যটন স্পট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
স্পিটবোর্ড : পর্যটন স্পটে ব্যবহ্নত স্পিটগুলো ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে নির্ধারিত আসন সংখ্যার ৫০ ভাগ যাত্রী উঠানো যাবে। প্রত্যেক যাত্রীকে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। আর বিচের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সবার কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পর্যটন স্পটের সব ক্যামরাম্যানদের হাতে হ্যান্ড গ্লাভস থাকতে হবে। আর শারীরিক অসুস্থ অবস্থায় কক্সবাজার ভ্রমণ করা যাবে না। কক্সবাজার গেলে হোটেলে উঠে প্রথমে গোসল করে নিতে হবে। রেস্টুরেন্ট বা রেস্ট্রোরা পরিহার করে হোটেল রুমে খাওয়ার চেষ্টা করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এভাবে কক্সবাজার পর্যটক স্পটগুলোতে ভ্রমণ করতে গেলে নিয়ম-কানুন পালনে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পালন করলে পর্যটকরা নিরপদে কক্সবাজার ভ্রমণ করলে কোন সমস্যা হওয়ার কথ নয়। মূলত পর্যটক এখন তুলনামূলকভাবে কম। আর এখন ভীতিকর পরিস্থিতির কোন প্রভাব পড়ছে না বলে এ ট্যুরিস্ট এসপি জানান।
Array