• ঢাকা, বাংলাদেশ

পাকিস্তানের সঙ্গে করা সিন্ধুর পানির বণ্টন ‍চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ভারত 

 admin 
24th Apr 2025 7:39 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  ছয় দশকেরও আগে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে করা সিন্ধুর পানির বণ্টন ‍চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। সম্প্রতি দেশটির কাশ্মিরের পেহলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরের প্রতিক্রিয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতিতে এটি যেন প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টিরই আগমনী বার্তা।

কী আছে এই চুক্তিতে
চুক্তির সেই ধারা অনুযায়ী সিন্ধু নদের ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। যাতে রাভি, বিয়াস ও সুললেজ নদীর পানি ভারতের এবং সিন্ধু, ঝিলুম ও চিনাব নদীর পানি পাকিস্তানের পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা আসায় এই ধারা মোড় নিতে পারে অন্যভাবে, যা পাকিস্তানের জন্য অবশ্যই সুখকর হবে না।

এই চুক্তির আওতায় উজানের দেশ ভারত জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সীমিত সেচের মতো কাজে পশ্চিমের নদীগুলো ব্যবহারের অধিকার রাখে। তবে চুক্তিতে বলা আছে সেই কাজটি এমনভাবে করতে হবে, যাতে নদীর প্রবাহ ঘুরে না যায়। পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তি অনেক বড় কিছু। দেশটির নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে সম্পূর্ণ সেচ ব্যবস্থা ও কৃষিকাজে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে এই নদীগুলো। তাই সামান্য প্রবাহ বাধা পেলে, এর রেশ নেতিবাচকভাবে বড় পরিসরে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি।

অবশ্য, চুক্তি স্বাক্ষরের সময় এর মেয়াদ শেষের তারিখ কিংবা স্থগিতের কোনো বিধান রাখা হয়নি।

ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে পানি বণ্টন যেভাবে হতে পারে
নয়াদিল্লির নতুন সিদ্ধান্তে এই প্রশ্ন সবার আগে আসে- ভারত কি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বন্ধ করতে কিংবা প্রবাহে কোনো সরাসরি বাধা সৃষ্টি করতে পারে কি না? এর সহজ উত্তর হলো, না।

সিন্ধু, ঝিলুম ও চিনাব বড় নদী। বছরের মে-সেপ্টেম্বরে বরফ গলার ফলে এই নদীগুলো কয়েক বিলিয়ন ঘনমিটার পানি বহন করে। নদীগুলোর উজানে ভারতের বেশকিছু অবকাঠামো রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাগলিহার ও কিষাণগঙ্গা বাঁধ। তবে এর কোনোটিই বিপুল পরিমাণ পানি ধরে রাখার মতো শক্তিশালী নয়। ভারত যদি তার বিদ্যমান সমস্ত বাঁধের পানি ছেড়েও দেয়, তবুও মোট পানি প্রবাহে খুব বেশি পরিবর্তনই ঘটবে না।

ভারত ইতোমধ্যেই চুক্তির অধীনে বরাদ্দকৃত পূর্বের নদীগুলোর বেশিরভাগ পানি ব্যবহার করে, তাই সেই নদীগুলোতে যেকোনো নতুন পদক্ষেপে ভাটি অঞ্চলে সীমিত প্রভাব পড়বে।

তবে পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো শুষ্ক মৌসুমে কী ঘটবে, যখন অববাহিকায় পানির প্রবাহ কম থাকে। তখন চুক্তির অনুপস্থিতি তারা তীব্রভাবে অনুভব করতে পারে। এক্ষেত্রে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ওপর ভারতের কর্তৃত্ব তৈরি হতে পারে। তবে সেই কাজটিও সহজ নয়। যেকোনো বড় আকারের বাঁধ বা জলপথ পরিবর্তনে নেয়া নতুন প্রকল্প নির্মাণে বহু বছর সময় লাগে। আর ভারতীয় কাশ্মিরে তেমন স্থান সীমিত এবং তা করা ভূতাত্ত্বিকভাবেও চ্যালেঞ্জিং। এর খরচ যেমন বিশাল, তা রাজনৈতিকভাবেও হবে ঝুঁকিপূর্ণ।

অপরদিকে, পাকিস্তানও দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ভারত যদি পশ্চিমের নদীগুলোতে পানি ধরে রাখার মতো কিছু করে, তবে তা সম্ভাব্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করবে। স্যাটেলাইটের যুগে এই ধরনের কাঠামো গোপনে তৈরি করাও সম্ভবপর নয়। আবার চিনাব বা ঝিলুমের মতো নদীতে পানি ধরে রাখতে গেলে ভারতে নিজস্ব উজানের অঞ্চলগুলোতেও বন্যার ঝুঁকি থাকে।

পাকিস্তানের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব
ভারতের এই পদক্ষেপে সার্বিক সীমাবদ্ধতা সামনে এলেও চুক্তি সুরক্ষার বিষয়টি এখনও গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ এই নয় যে, একদিন বাদেই পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। বরং নয়াদিল্লি এটি খুব সম্ভত করবেও না।

সিন্ধু, ঝিলম ও চিনাবের প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। আর এই মুহূর্তে পাকিস্তানের কাছে এর কোনও বিকল্প নেই। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা বিশ্বের বৃহত্তম সেচ ব্যবস্থাগুলোর একটি, আর এটি পশ্চিমের নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল। এই নদীগুলোর পানির ওপর খালগুলোও নির্ভরশীল, পানিপ্রবাহে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটলেও সেচব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎক্ষণিক ঝুঁকি হল স্থিতিশীলতার অভাব।

পাকিস্তানের জিডিপির ২১ শতাংশই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশটির ৪৫ শতাংশ কর্মজীবীর কর্মসংস্থানও হয় কৃষি খাতে। এই আবহে পাকিস্তান যদি সিন্ধুর পানি থেকে বঞ্জিত হয়, তাহলে তাদের অর্থনীতিতে বড় রকমের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পশ্চিমের নদীগুলো পাকিস্তানে পানির প্রধান উৎস। পাকিস্তানের জন্য তাই পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকা খুবই জরুরি। তারপর রয়েছে বিদ্যুৎ। পাকিস্তানের বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশ জলবিদ্যুৎ থেকে আসে। উজানের প্রবাহ হ্রাস পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যা বলে
সিন্ধুর পানি চুক্তি তার স্থায়িত্বের জন্য প্রশংসিত হলেও গত দশক ধরেই এটি চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০১৩ সালে একটি সালিশি আদালত পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেয় এবং ভারতকে কিষাণগঙ্গা প্রকল্পের ভাটিতে ন্যূনতম প্রবাহ ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। কিন্তু, ২০১৬ সালের উরি হামলার পর সেই ধারায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ভারত নিয়মিত সহযোগিতা স্থগিত করে, দীর্ঘকাল ধরে স্থগিত রাখা বাঁধ প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন শুরু করে এবং পানিকে তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনার হাতিয়ার করে।

তখনও ভারত বলেছিল যে তারা চুক্তির মধ্যে থেকেই কাজ করবে। কিন্তু ২০২৩ সালে সেটিও পরিবর্তিত হতে শুরু করে, যখন ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ অনুচ্ছেদের ৩ ধারা (যে বিধান অনুসারে কেবল পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমেই চুক্তি সংশোধন করা যায়) প্রয়োগ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা এবং পাকিস্তানের বাধার কারণ দেখিয়ে চুক্তি পর্যালোচনার অনুরোধ করে। পাকিস্তান পর্যালোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।

ভারতের সাম্প্রতিক ঘোষণায় ১৯৬০ সালের পর এই প্রথম চুক্তির বাইরে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এটি একটি দর কষাকষির কৌশল নাকি স্থায়ী বিচ্ছেদ, তা এখনও দেখার বাকি।

উল্লেখ্য, সিন্ধু এবং এর উপনদীগুলো হাজার হাজার বছর ধরে একটি সভ্যতাকে টিকিয়ে রেখেছে। সময়ের পরিক্রমায় এখন দুটি আধুনিক পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এর গতিপথ। এখন দেখার বিষয়, পানিপ্রবাহের পাশাপাশি পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কতটা পরিবর্তিত হয়।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১