
পাখির কিচির-মিচির। চারিদিকে নানা ধরনের পাখির সমাহারে পাখি গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার আলিদেওনা গ্রাম। যেখানে পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকে সারাবেলা । এ গ্রামের গাছে গাছে হাজার হাজার পাখির আশ্রয়স্থল। পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে এ গ্রামের মানুষের।
মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে পশ্চিমে এ গ্রামটির দুরুত্ব প্রায় ১২কিলোমিটার। জানা গেছে, সবুজে সুন্দর ও ছায়া সুনিবিড় গ্রাম আলিদেওনা। প্রায় ২০বছর আগে হঠাৎ করেই এই গ্রামের বাঁশ ঝাড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছে আসতে শুরু করে নানা প্রজাতির পাখি। সেখানে গড়ে ওঠে পাখি কলোনী। গ্রামের সাধারণ মানুষের উদ্যোগে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল। এখানে আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের মধ্যে রয়েছে লাল বক, সাদা বক, শামুককল, রাতচোরা, সারস, মাছরাঙা, পানকৌড়ি ও বিভিন্ন প্রজতির ঘুঘুসহ নাম না জানা নানান রংয়ের হাজার হাজার পাখি। গ্রামের আনাচে-কানাচে বেড়ে ওঠা বাঁশ ও গাছে গাছে সারাক্ষণ হাজার হাজার পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামটি। বর্তমানে এ গ্রামটির নাম হয়েছে পাখি গ্রাম।
পাখির গ্রামে গেলেই মুগ্ধ হয়ে উঠে নওগাঁ জেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলার পর্যটকরা। স্থানীয়রা স্ব-উদ্যোগে গ্রামটিকে পাখি শিকার মুক্ত এলাকা ঘোষণা করেছেন। ওই গ্রামের সীমানায় কোন পাখি প্রবেশ করা মানে পাখিটি নিরাপদ। গ্রামটিতে প্রবেশের সময় দেখা যায় ছোট রাস্তার দুই ধারে থাকা গাছে গাছে লাগানো রয়েছে বিভিন্ন পাখির আদলে সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ড গুলোতে পাখি শিকার রোধে বিভিন্ন আইন ও সচেতনতামূলক উপদেশ লেখা রয়েছে। আর এখানে পাখির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন গ্রামের সকলেই। পাখি শিকার রোধে গ্রামবাসী নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। ফলে সারা বছরই সেখানে হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে বাচ্চা উঠানোর মৌসুমে শামুকখোল ও বকের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে গ্রামটিতে প্রতিদিনই মানুষের সমাগম ঘটে।
পাখিদের বারতি নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় পাখিপ্রেমী, সমাজসেবী ও পরিবেশবিদরা সরকারীভাবে অভয়ারণ্য ঘোষণার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করছেন। আলিদেওনা পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত নির্মল বর্মন বলেন, প্রকৃতির বন্ধু পাখি। তাদের প্রতি ভালবাসা থেকেই এ গ্রামে গড়ে উঠেছে পাখির আবাসভূমি বা পাখি কলোনি। যেখানে পাখিরা নিরাপদে বিচরণ করতে পারে। পাখি শিকারীদের গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বা অন্য কোন কারণে পাখিরা আহত হলে তাদের চিকিৎসা দিয়ে যত্ন সহকারে পাখিদের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। এ গ্রামে দুর দুরান্ত থেকে মানুষ পাখি দেখতে আসে। গ্রামটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠলে সরকারি রাজস্ব বাড়বে, সেই সাথে বেকারদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে মনে করেন তিনি।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, জেলার আলিদেওনা গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী পাখি গ্রাম হিসেবে সারাদেশের মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। পাখির অভয়ারণ্যসহ গ্রামটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি।
Array