
অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট নিয়ে কীর্তি গড়েছেন নাঈম হাসান। দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাই দলের প্রতিনিধি হয়ে এলেন তিনি। এসে অবশ্য রেকর্ড নিয়ে আলোচনায় কোনো আগ্রহ দেখাননি বরং দলের পরিস্থিতি আর পরিকল্পনার কথাই শোনালেন নাঈম
মাঠে কোনো জড়তা নেই। একে তো অভিষেক টেস্ট, তার ওপর গতকাল প্রথম দিনের শেষ সেশনে বেশ চাপে ছিল দল। এই অবস্থায় ৯ নম্বরে নেমে দিন পার করে নাঈম হাসান প্রথমে চমকে দিলেন ব্যাট হাতে। আর আজ আসল চমকটা দেখিয়েছেন বল হাতে। অভিষেক টেস্টেই এক ইনিংসে ৫ উইকেট। ঘূর্ণি উইকেটে নাঈম হাসানের বল স্রেফ কথা বলেছে! কিন্তু মাইক্রোফোনের সামনে সেই নাঈমের-ই এত জড়তা, যেন কথাই বের হতে চায় না!
অভিষেক টেস্ট বলেই হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাইক্রোফোনের মুখোমুখি হওয়া নাঈমের তাঁর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তাই কণ্ঠেও এত জড়তা। যদিও ১৭ বছর ৩৫৫ দিনে অভিষিক্ত এই স্পিনারের কথায় চুঁইয়ে পড়ল আত্মবিশ্বাসের ঝলকানি। চট্টগ্রাম টেস্টে আজ দ্বিতীয় দিন শেষে হাতে ৫ উইকেটে রেখে ১৩৩ রানের লিড নিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেট যে কতটা স্পিনবান্ধব তা আজ বোঝা গেছে খুব ভালোভাবে। পতন হওয়া মোট ১৭ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছেন স্পিনাররা। অর্থাৎ এই টেস্টের বয়স তৃতীয় দিন পার করাই কঠিন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিন্তু এখনো বেশ চাপে। কাল দ্বিতীয় ইনিংসটা যত দূর সম্ভব টানতে না পারলে ফলটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলে নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
নাঈম এই সবকিছু বুঝেই দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে জানিয়ে দিলেন কালকের দায়িত্ব, ‘আমাদের লক্ষ্য যতক্ষণ সম্ভব ব্যাট করতে পারি ততক্ষণ ব্যাট করা, যত স্কোর হবে ডিফেন্ড করব।’ তাঁর এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে রয়েছেন তিন ‘ভাই’ আর ঘূর্ণি উইকেট, ‘উইকেটে তো স্পিন করছে, আমাদের দলে ভালো স্পিনার আছে, সাকিব ভাই, তাইজুল ভাই, মিরাজ ভাই। সমস্যা হবে না আশা করি। আমাদের পুঁজি যতখানি আসবে, ততখানি নিয়েই আমরা লড়াই করব।’
উইকেটে স্পিন ধরছে। নাঈম তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে অভিষেকেই তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। অথচ, রেকর্ডটা তিনি জানতেন না! জেনেছেন সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে। তবে দল খানিকটা পিছিয়ে বলেই হয়তো রেকর্ড গড়ার পরও নাঈমের কথায় কোনো হেলদোল বোঝা গেল না। জড়তা কাটার পর কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিণত ক্রিকেটারদের মতোই, ‘আসার পথে শুনেছি (রেকর্ড)। আমি তো আমার স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলেছি।’
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা নিজেদের স্বাভাবিক কাজটা ভালোভাবে করতে পারেননি। নাঈম কিন্তু এরপরও আশা দেখছেন, ‘আমরা তো এখনো অলআউট হইনি। আমরা ভালো খেলতে পারলে আমাদের স্কোর ৩০০-৩৫০ হতে পারে! আবার অল্প রানেও আউট হয়ে যেতে পারি। যদি বড় স্কোর হয়, তাহলে তো আমাদের বোলারদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।’
অভিষিক্ত খেলোয়াড়ের দায়িত্বটাও খুব ভালোই বোঝেন নাঈম, উপভোগ করা। টেস্টের এই দুই দিন নাঈম কিন্তু তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিজের দায়িত্ব উপভোগ করেছেন, ‘যখন ব্যাট হাতে নামব তখন তো দায়িত্ব আমার। ব্যাটিং করতেও ভালো লাগছে। আবার যখন বল হাতে নিয়েছি, তখন বোলিংয়ের দায়িত্বও আমার। দুইটাই উপভোগ করেছি।’
আজ দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে উইকেট ভয়ংকর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য। নাঈম অবশ্য উইকেটের চেয়ে মানসিকতাকে গুরুত্ব দিলেন বেশি, ‘উইকেট ভালো কিংবা খারাপ তো কিছু না। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেললে সমস্যা হবে না। সবখানেই তো লড়াই করে খেলতে হবে। কিছুক্ষণ ব্যাটিং করতে পারলে তাহলে উইকেট সহজ হয়ে যাবে।’
কাল এই ‘কিছুক্ষণ ব্যাটিং’ করার লড়াইটা মূলত মুশফিকুর রহিমের। তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার দায়িত্ব বাকিদের। সকালের সেশনে কিছুক্ষণ থাকতে পারলে এই বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতেও পারে। অভিষেক টেস্টেই নাঈম কিন্তু তা বুঝে ফেলেছেন। মুশফিক-মিরাজ কি শুনতে পাচ্ছেন?
Array