• ঢাকা, বাংলাদেশ

পুরান ঢাকায় আগুনের আঁচ পেলেই জ্বলে উঠবে ২৯ ধরনের কেমিক্যাল 

 admin 
25th Feb 2019 10:35 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

পুরান ঢাকায় দুই হাজার ব্যবসায়ী কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আট শতাধিক ধরণের কেমিক্যাল বিক্রি করেন তারা। আর এসব কেমিক্যাল মুজদ রাখা হয় প্রায় চার হাজার গোডাউনে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ গোডাউন ৮৫০টি। প্রায় কোনও গোডাউনেরই অনুমোদন নেই। তার ওপর লোকারণ্য এলাকায় থাকা এসব গোডাউনের অনেকগুলোতেই রয়েছে সোডিয়াম আনহাইড্রোজ, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইল ও টলুইনের মতো ২৯ ধরণের কেমিক্যাল, যেগুলো আগুনের আঁচ পেলেই ভয়াবহ ধরনের অগ্নিকাণ্ড তৈরি করতে পারে। বিস্ফোরক পরিদফতর, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

গোডাউনগুলো যেমন
আরমানিয়ান স্ট্রিটের ২৬/৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় আছে এপি গোডাউন। কেমিক্যাল মজুদ করা হয় সেখানে। গোডাউনের পূর্ব দিকে সড়ক তেমন প্রশস্থ নয়। পশ্চিমে হাসপাতাল, আর উত্তর ও দক্ষিণে মার্কেট। আরমানিয়ান স্ট্রিটে মানুষের বসতি, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, গোডাউন, মার্কেট-সবই একসঙ্গে মিশে একাকার। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেমিক্যাল বা প্লাস্টিকের গোডাউন রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম রাখার সুযোগ না থাকলেও তাতে এখানকার বাড়ি মালিকদের কিছু যায় আসে না।
এদিকে চকবাজার, হাজী বাল্লু রোড, নলগোনা, পোস্তা, ইমানগঞ্জ, নিমতলী, মাজেদ সরদার রোড, মৌলভীবাজার, রহমতগঞ্জ, হাজী আজগর লেন, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, ইসলামপুর, ইসলামবাগ এলাকায় সরেজমিন ঘুরে একই চিত্র চোখে পড়ে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনের পাশাপাশি অন্তত ৪০০ প্লাস্টিক কারখানা এবং হাজারেরও বেশি প্লাস্টিক দ্রব্যের গোডাউন রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, ‘পুরো পুরান ঢাকা জুড়েই মৃত্যুকূপ। সেখানে একইসঙ্গে মানুষের আবাস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা, কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক দ্রব্যের গোডাউন দেখা যায়। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, গ্যাস লাইন, ওয়াসার লাইনগুলোও বিপজ্জনক অবস্থায় আছে সেখানে। শত শত কেমিক্যাল গোডাউনে নানা ধরণের কেমিক্যাল মজুদ আছে। কেমিক্যালের গোডাউনে থাকা দাহ্য পদার্থের ড্রাম, কন্টেইনার, প্যাকেট, বোতলে কোনও লিকেজ হলে বাতাসে জ্বালানির মিশ্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্লাস্টিকও ভয়াবহ মাত্রার দাহ্য পদার্থ। এসবের কারণে পুরান ঢাকায় যে কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে নিমতলী বা চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির চেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।’

কেমিক্যাল মজুদে ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেও বিপজ্জনক কেমিক্যাল নিয়ে তথ্য মেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেমিক্যাল কীভাবে মজুদ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে নিরাপত্তা এবং বিপদ। তারপরও যে কেমিক্যালগুলো ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে তার মধ্যে আছে- ক্যালসিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম কার্বনেট, ব্লিচিং পাউডার, গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রেজ, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, অ্যাসিটোন, বিউটাইল অ্যাসিটোন, আইসো-বিউটানাল, ডিএল-২৫৭৫, ইথাইল অ্যাসিট্রেট, ইথানল, হেভি অ্যারোমেটিক, আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল, মিথানল, বিউটাফেল, মিথাইল আইসো, এ- প্রোপাইল অ্যাসিট্রেট, প্রোপেন-১ অল, প্রোপাইলিন গ্লাইকল, টলুইন, থিনার-বি, রিডিউসার/রির্টাডার, থাইলিন/মিক্সড থাইলিন ও ডাই অ্যাসিটোন অ্যালকোহলসহ ২৯ ধরণের কেমিক্যাল। এসব কেমিক্যাল আগুনের সামান্য আঁচ পেলে অগ্নিকাণ্ড ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

সব গোডাউনই অনুমোদনহীন
বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক মো. সামসুল আলম বলেন, ‘বিস্ফোরক, পেট্রোলিয়াম, গ্যাস, গ্যাস পাইপ লাইন ও বিভিন্ন বিপজ্জনক পদার্থের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে বিস্ফোরক পরিদফতর। পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ মজুদের অনুমোদন আমাদের কাছ থেকে নিতে হয়। পুরান ঢাকা অনুমোদিত কোনও গোডাউন নেই। যা আছে তার সবই অবৈধ।’
সামসুল আলম আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালায়। আমরা তাদের সহযোগিতা দেই। গোডাউন সিলগালা করা হয়, জরিমানাও হয়। জেলেও পাঠানো হয় অনেককে। এরপরও অবৈধ কারখানা ও গোডাউন বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
এই কর্মকর্তা জানান, ‘পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা আট শতাধিক ধরণের কেমিক্যাল বিক্রি করেন। বিস্ফোরক পরিদফতর ২৯ ধরণের কেমিক্যাল বিক্রির অনুমোদন দেয়। তবে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী পরিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা করছে।’
বিস্ফোরক পরিদফতর সূত্র জানায়, উচ্চ মাত্রার দাহ্য পদার্থের তালিকা বেশ আগেই তৈরি হয়েছে। ওই তালিকায় ২৯টি কেমিক্যালের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশনে ওই তালিকা পাঠিয়েছে পরিদফতর। পুরান ঢাকায় প্লাস্টিক কারখানা, প্লাস্টিক দানা, প্লাস্টিক ফাইবার, পারফিউমের ব্যবসা কতটা বিপজ্জনক সে বিষয়েও পরিদফতরে রিপোর্ট আছে।

কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সাফাই
কেমিক্যাল ও পারফিউমারি মার্টেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন জানান, ‘পুরান ঢাকায় দুই হাজার ব্যবসায়ী কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে ব্যবসায়ীরা কতগুলো গোডাউনের মালিক সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। সব মিলিয়ে গোডাউনের সংখ্যা চার হাজারের বেশি হবে না।’ এসব গোডাউন অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবকিছুই সবার জানা।’
তবে বিসিক কেমিক্যাল পল্লির প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম জানান, ‘সরকারের কাছে কেমিক্যাল ব্যবসায়ী সংগঠনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ি কেমিক্যালের ৯ শ’ গোডাউন আছে পুরান ঢাকায়। বৈধ-অবৈধ কিছু ব্যাপার আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকেও তথ্য গোপন করা হয়।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের দাবি কেমিক্যাল গোডাউনের ৯৮ ভাগই অবৈধ। কোনও গোডাউনের মালিকই পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক পরিদফতর, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপরিচালক দেবাষীষ বর্ধন জানান, ‘কোনও গোডাউনেই আগুন লাগলে নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা নেই। চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৮৫০টি গোডাউন। সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ ও বিস্ফোরক পরিদফতরের সহায়তা ছাড়া অবৈধ গোডাউন অপসারণ সম্ভব নয়।’

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১