• ঢাকা, বাংলাদেশ

প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঝুড়িতে ২২৩ রান 

 admin 
11th Feb 2021 10:48 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন ৯০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান করেছে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় দিন সকালে তাদের দ্রুত অলআউট করার লক্ষ্যই থাকবে বাংলাদেশ দলের। অন্যদিকে সেট ব্যাটসম্যান বোনারের উইলোতে চড়ে বড় সংগ্রহে চোখ থাকবে ক্যারিবীয়দের।

সকালে মাঘের কুয়াশার মাঝে সূর্যের উঁকিঝুঁকি দেখে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। সফরে প্রথমবারের মতো কোনো নতুন খেলোয়াড়ের অভিষেক করায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেমার রোচের বদলে আরেক পেসার আলঝারি জোসেফকে একাদশে নিয়ে ব্যাটিং করতে নামে তারা।

দিনের শুরুটা দুর্দান্ত ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। প্রথম ঘণ্টায়ই তারা তুলে নেয় দলীয় পঞ্চাশ, সেটাও মাত্র ১৫ ওভারের মধ্যে। মনে হচ্ছিল, ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন থাকবে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু তাতে বাঁধ সেধেছেন স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের বোলাররা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু দিয়ে ম্যাচের দখল পুরোপুরি হাতছাড়া হতে দেননি আবু জায়েদ রাহি, তাইজুল ইসলামরা।

চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্ট জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই আজকের ১১ ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম দিনে ব্যাটিং করেছে ক্যারিবীয়রা। অধিনায়কের সঙ্গে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক ব্যাটিং করতে থাকেন বাঁহাতি ওপেনার ক্যাম্পবেল। ইনিংসের প্রথম বলে দুই রান ও চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকান ব্রাথওয়েট। ক্যাম্পবেল প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান ইনিংসের চতুর্থ ওভারে গিয়ে। পরে তার ব্যাট থেকেই আসতে থাকে একের পর এক আক্রমণাত্মক শট। ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ফিফটি তুলে নিয়েছেন এনক্রুমাহ বোনার। রানের দেখা পেয়েছেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট, জন ক্যাম্পবেলরাও। তবে তারা ইনিংস বড় করতে পারেননি, আর এবার ব্যর্থ হয়েছেন আগের ম্যাচের নায়ক কাইল মায়ার্স।

বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় একাদশে আসা একমাত্র পেসার হিসেবে আবু জায়েদ রাহিকে নিয়ে বোলিং শুরু করে বাংলাদেশ। তার সঙ্গে নতুন বল ভাগ করে নেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনের কেউই নতুন বলের মুভমেন্ট কাজে লাগাতে পারেননি। প্রায় প্রতি ওভারেই এক-দুইটি করে শর্ট লেন্থ ডেলিভারি করেছেন মিরাজ। অন্যদিকে রাহি শুরুতে লাইন-লেন্থ খুঁজে পেতে সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট জায়গায় বোলিং করতে থাকেন।

কিন্তু এতে কোনো সমস্যাই হয়নি দুই ক্যারিবীয় ওপেনারের। স্বাচ্ছন্দ্যে রান করেছেন তারা। ইনিংসের নবম ওভারে ক্যাম্পবেলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছিলেন রাহি। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় নিজের উইকেট বাঁচান বাঁহাতি ওপেনার। রিপ্লেতে দেখা যায়, ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিটি স্ট্যাম্পের ওপর দিয়ে চলে যেত। তখন ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন ক্যাম্পবেল।

নতুন বলে মিরাজ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে না পারায় দশম ওভারে আক্রমণে আনা হয় নাঈম হাসানকে। তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে প্রথম ছক্কা হাঁকান ক্যাম্পবেল। এর পরের ওভারেই রাহিকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে ডেকে নেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক। শুরু থেকেই অল্পবিস্তর টার্ন পেতে শুরু করেন এ বাঁহাতি স্পিনার। তবে ব্যাট হাতেও দারুণ জবাব দিচ্ছিলেন ক্যাম্পবেল-ব্রাথওয়েটরা।

ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেন ব্রাথওয়েট। দিনের প্রথম ঘণ্টা শেষে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৫ রান।

দ্বিতীয় ঘণ্টায় খানিক ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এর বড় কৃতিত্ব তাইজুলের। তার করা ২১তম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ক্যাম্পবেল। রিভিউ নেন ক্যারিবীয় ওপেনার। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি আঘাত হানত সোজা মিডল স্ট্যাম্পে।

যদিও এ রিভিউ নিয়ে রয়েছে খানিক ধোঁয়াশা। টিভি রিপ্লে দেখার সময় মনে হচ্ছিল, বলটি হয়তো ক্যাম্পবেলের ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে গেছে। তবু থার্ড আম্পায়ার আউট দিয়ে দেয়ায় অসন্তোষ দেখা যায় ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্সের অভিব্যক্তিতে। তিনি কথা বলেন বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দাঁড়ানো চতুর্থ আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুলের সঙ্গে। এতে অবশ্য লাভ হয়নি কোনো। ক্যাম্পবেলকে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে ৬৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংস নিয়ে। প্রথম সেশনের বাকি সময়টায় আর বিপদ ঘটতে দেননি ব্রাথওয়েট ও তিন নম্বরে নামা শেন মোজলি। দ্বিতীয় ঘণ্টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ১৪ ওভারে ১ উইকেটে ২৯ রান। ব্রাথওয়েট ৮২ বলে ৩৯ ও মোজলি ২৫ বলে ৬ রান নিয়ে যান মধ্যাহ্ন বিরতি।

দ্বিতীয় সেশনে ফিরে আর প্রথম সেশনের ভুল করেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ব্রাথওয়েট ও ক্যাম্পবেলের ব্যাটে ভর করে প্রথম সেশনের ২৯ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় সেশনে তারা আরও ২৯ ওভার ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পেরেছে ৬২ রান, বিপরীতে হারিয়েছে ৩টি উইকেট। যার দুইটিই রাহির শিকার। অন্য উইকেট দখল করেন খণ্ডকালীন মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এক ওভার করেছিলেন রাহি। পরে দ্বিতীয় সেশনেও তাকে দিয়ে বোলিং শুরু করেন অধিনায়ক মুমিনুল। প্রথম সেশনে খানিক টেনে শর্ট লেন্থে বোলিং করছিলেন রাহি। দ্বিতীয় সেশনে আরেকটু সামনের দিকে বল ফেলতে থাকেন তিনি। যার ফলে থেমে আসে রানের চাকা। এর সুফল পেতে সময় লাগেনি।

রানের গতি বাড়াতে গিয়ে রাহির করা অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারিতে ড্রাইভ খেলতে চান শেন মোজলি। ব্যাটের নিচের দিকে লেগে বল চলে যায় স্ট্যাম্পে, বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরতে হয় ৩৮ বলে ৭ রান করা মোজলিকে। উইকেটে আসেন আগের ম্যাচে ক্যারিবীয়দের জয়ের পার্শ্বনায়ক এনক্রোমাহ বোনার। দ্বিতীয় স্পেলে ৫ ওভারে ৫ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়ে থামেন রাহি।

ইনিংসের ৩৮তম ওভারে রাহির বদলে সৌম্যর হাতে বল তুলে দেন মুমিনুল। তার এই সিদ্ধান্তও কাজে লেগে যায় শতভাগ। নিজের তৃতীয় ওভারে সৌম্য ফেরান দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা ক্যারিবীয় অধিনায়ক ব্রাথওয়েটকে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দেন ব্রাথওয়েট। ফেরার আগে তিনি ১২২ বল খেলে করেন ৪৭ রান।

দলীয় ১০৪ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনে ফের জুটি বাঁধেন চট্টগ্রামে ইতিহাস গড়ার দুই নায়ক কাইল মায়ার্স ও বোনার। তবে এবার জমেনি তাদের রসায়ন। বলা ভালো, জমতে দেননি আবু জায়েদ রাহি। আজ মায়ার্স-বোনার জুটি টিকেছে ৪০ বল, ইনিংসের ৪৮তম ওভারে তৃতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়েই মায়ার্সকে আউট করে দেন টাইগারদের ডানহাতি পেসার। ওয়াইড স্লিপে দাঁড়িয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ৫ রানেই মায়ার্সের বিদায় নিশ্চিত করেন সৌম্য।

তবে এরপর সেশনের বাকি সময়টায় আবার বেশ ভালো ব্যাটিং করেন এনক্রুমাহ বোনার ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড। দুজন মিলে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন ১০.১ ওভার, যোগ করেন ৩০ রান। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ৩৫ বলে ১৮ রান করেন ব্ল্যাকউড। আরও একটি ফিফটির দিকে এগুতে থাকা বোনার অপরাজিত থাকেন ৬৮ বলে ৩০ রান করে।

প্রথম দুই সেশনে যেখানে দুই দলের আলাদা আলাদা আধিপত্য, সেখানে তৃতীয় সেশনে পরিস্কারভাবে কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। কেননা বোনার ও ব্ল্যাকউড জুটিতে ক্যারিবীয়রা যেমন চাপ সামাল দেয়, তেমনি ব্রেকথ্রু এনে খেলায় ফিরেছে বাংলাদেশ দলও। শেষ সেশনের ৩২ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ৬৯ রান।

দ্বিতীয় সেশনের শেষের দশ ওভারের সঙ্গে শেষ সেশনে আরও ১৪ ওভার ব্যাটিং করে বোনার-ব্ল্যাকউড জুটি। পরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন বোনার, ৯৮ বলে ৬ চারের মারে এ মাইলফলকে প্রবেশ করেন তিনি। দিনের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত আর তাকে সাজঘরে পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা।

তবে ব্ল্যাকউড শেষপর্যন্ত টিকতে পারেননি। বাঁহাতি তাইজুলের করা ইনিংসের ৭২তম ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ৭৭ বলে ২৮ রান করা বোনার। তার বিদায়ে ভাঙে ৬২ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। শেষ ঘণ্টায় আবার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জশুয়া ডা সিলভাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন বোনার। তাদের প্রতিরোধগড়া ব্যাটিংয়ে আর উইকেট হারাতে হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

আম্পায়ার অবশ্য একবার আউট দিয়েছিলেন বোনারকে। দ্বিতীয় নতুন বল নেয়ার ঠিক আগে দিয়ে মেহেদি মিরাজের করা ৭৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন করে বাংলাদেশ, সাড়া দেন আম্পায়ারও। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন বোনার। রিপ্লেতে দেখা যায়, সেই বলটি তার পায়েই লাগেনি। ফলে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন আম্পায়ার।

নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির অপেক্ষায় রয়েছেন বোনার। দিন শেষে তার নামের পাশে ১৭৩ বলে ৭৪ রান। জশুয়ার নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক কম থাকলেও তার উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক দ্বিতীয় দিন সকালে খেলতে নামবেন ৪৮ বলে ২২ রান নিয়ে।

বাংলাদেশের পক্ষে দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন আবু জায়েদ রাহি ও তাইজুল ইসলাম। মাঝে এক উইকেট নিয়ে গেছেন ‘পার্টটাইমার’ সৌম্য সরকার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২২৩/৫ (ক্যাম্পবেল ৩৬, ব্রাথওয়েট ৬৭, মোজলি ৭, বোনার ৭৪*, মায়ার্স ৫*, ব্ল্যাকউড ২৮, জশুয়া ২২*; রাহি ২/৪৬, মিরাজ ০/৩৯, নাঈম ০/৪২, তাইজুল ২/৬৪ ও সৌম্য ১/৩০)

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১