
দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করা হবে এমন কথা বার বার বলা হলেও বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংক একীভূতকরণ ফাইলবন্দি রয়েছে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের উদ্যোগ হাতে নেবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। তাই এই সময়ে বিষয়টি আর এগিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কার্যত, ভোটের বিবেচনায় সরকার দীর্ঘদিন বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
দেশে বর্তমানে ৫৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও নতুন তিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এসব ব্যাংকের অনুমোদনে নীতিগত সায় দিয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভা ডাকা হলেও তা স্থগিত করা হয়। মূলত, বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ সময়ে সমালাচনা এড়াতে বোর্ড সভা স্থগিত করে।
জানা গেছে, ৫৯টি ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক। বর্তমান সরকারের প্রথম আমলে মোট ৯টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আর এই মেয়াদে বাংলাদেশ পুলিশকে একটি ব্যাংক স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনন্তপক্ষে তিনটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকও রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক রয়েছে। তার পরও দেশের বিশাল অঞ্চল ব্যাংক সেবার বাইরে রয়েছে। এ কারণেই নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। অনেক ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে সরকার কাজ করছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ব্যাংক খাতে কোনো ধরনের তারল্য সঙ্কট নেই। অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কাজ শুরু হবে। যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাদের জন্য ব্যাংক সংস্কারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়ে যাব। দুর্বল ব্যাংককে শিগগিরই মার্জার (এককীভূত করা) শুরু হবে। পলিটিক্যাল গ্রাউন্ডে আপাতত এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক মিনিস্টারই ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সংখ্যা বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো একীভূত করা হবে। এ জন্য আইন ঠিকঠাক করা হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতে একীভূতকরণে আইন হালনাগাদ করা হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশে ১৯৯৭ সালের দেউলিয়া আইন রয়েছে। তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে একটি আধুনিক একীভূতকরণ আইন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বর্তমানে দেশে ব্যাংক খাতে মোট আমানত প্রায় এগারো লাখ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের আড়াইগুণ। দশ হাজারের বেশি শাখা সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু সুশাসন ঘাটতি থাকায় অনেক ব্যাংক পিছিয়ে পড়ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সঙ্কট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদ হার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদ হার ১৭-১৮ শতাংশ দাঁড়ায়।
পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের নীতি সহায়তা চান বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে নতুন নিয়মে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। কমানো হয়েছে নগদ জমার হার (সিআরআর)। সকল তফসিলি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং ৬ শতাংশ দৈনিক হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করার বিধান ছিল। সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ। আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তারল্য সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত হার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলা একগুচ্ছ সুবিধা নিয়ে গেলেও ঋণের সুদ হার কমানোর ব্যাপারে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তবে নিজেদের ঘোষণা ব্যাংকগুলো কার্যকর করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত টিম। বিভিন্ন ব্যাংক সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছে।
Array