
চলছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পূর্তিতে মুক্তিযুদ্ধ ও তার মহানায়ককে একটু চোখ বুলিয়ে দেখার সময় এসেছে। তাইতো এ নিয়ে যেমন বাড়ছে নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা, তেমনি পাঠকও। কেউ তার নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন, কেউবা অন্যের। আর কেউ কেউ লিখছেন এ নিয়ে গবেষণা, কেউবা বিশ্লেষণ।
অমর একুশে বইমেলায় এ পর্যন্ত নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ৬৯১টি। এর মধ্যে ৪৭টি প্রকাশিত স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ে।
চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে নানা জল্পনা কল্পনা শেষে ১৮ মার্চ পর্দা উঠেছে অমর একুশে বইমেলার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে ঘিরে উৎসর্গ করা হয়েছে বইমেলার এবারের আয়োজন।
১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘নয়াচীন’ এর ইংরেজি অনুবাদ NEW CHINA-1952 এর মোড়ক উন্মোচনের মধ্যমে বইমেলার উদ্বোধন হয়। শুধু বঙ্গবন্ধুর বই দিয়েই শুরু নয়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা এবার নতুন বইয়ের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
মেলায় আগত দর্শনার্থীদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুভূতি উপলব্ধির জন্য স্বাধীনতার পাঁচটি দশককে পাঁচটি আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। মেলার স্টলগুলোও সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অবায়বে।
বইমেলার ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা নতুন বই এসেছে ৩২টি। সেগুলোর কেনোটি স্মৃতিকথা, কোনোটি অভিজ্ঞতার বর্ণনা আর কেনোটি মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষণ। এবারের বইমেলায় এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই এসেছে ১৫টি।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক বই প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধের বইগুলো তরে তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্টলটির এক কর্ণারে। সেখানে বই বিক্রি করছেন প্রকাশনীর বিক্রেতা আব্দুল্লাহ।
এসব বই কিনতে মানুষের আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নিয়ে লেখা এসব বই লেখক, গবেষণা এবং অনার্যের শিক্ষার্থীরাই বেশি কিনছেন। অন্যান্য বইয়ের তুলনায় এসব বইয়ে পাঠকের আগ্রহ বেশি বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এসেছে যেসব নতুন বই:
বইমেলায় এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই এসেছে ১৫টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বই প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। মোনায়েম সরকারের ‘স্বাধীন স্বদেশে জনকের পদধ্বনি’ এবং ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে মুক্তিসংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু’, সৈয়দ জাহিদ হাসানের ‘বঙ্গবন্ধু তনয় শেখ কামাল চির-বিপ্লবী চিরঞ্জীবী’, মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু’, সমীর আহমেদের ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প হৃদয়ে অঙ্কিত মুখ’, অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’, ‘রকিবুল আমিনের ‘আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু আছে’, হায়দার মোহাম্মদ জিতুর ‘বঙ্গবন্ধু থেকে দেশরত্ন’, ড. ফজলুল হক সৌকতের ‘ইলেকট্রার গান বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা’, অসীম সাহার ‘বঙ্গবন্ধুর সপ্নের বাংলাদেশ’ ইত্যাদি বইগুলো প্রকাশ করেছে প্রকাশনীটি।
মূর্ধন্য প্রকাশনী মুসা সাদিকের লেখা ‘বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু’ এবং সালেহ রফিকের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অহনা’ বই দুটি প্রকাশ করেছে।
পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ড. সুনীল কান্তি দের লেখা নতুন দুটি বই ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু মানিক নিয়া সম্পর্ক’।
এছাড়া ঢাকা প্রকাশনীতে ড. আনু মোহাম্মদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ঐতিহাসিক মূল্যায়ণ’। তৃণলতা প্রকাশে মারফিয়া খানের ‘বঙ্গ আমার বন্ধু আমার’। অনিন্দ্য প্রকাশে মো. ফখরুল ইসলামের লেখা ‘বাঙালির বঙ্গবন্ধু’।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এবারের নতুন বই:
আগামী প্রকাশনী প্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একই নামে সাতজন লেখকের লেখা পৃথক পৃথক সাতটি নতুন বই ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’।
এছাড়া মঈনুল আহসান সাবেরের ‘পাথর সময়’, আজাদুল হলের ‘আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’, মোনায়েম সরকারের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের ভূমিকা’, ড. সুনীল কান্তি দের ‘৭১-এ পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর বিচার ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়া’, নূরুন নাহার বেগমের ‘স্মৃতিতে ১৯৭১’, জান্নাত-এ- ফেরদৌসীর ‘বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা’, সোহেল রানার ‘বাংলাদেশে ছোটগল্পে মুক্তিযুদ্ধ’, সম্পা. মাসহুদা ইয়াসমিনের ‘রক্ত অশ্রু বিজয় স্মৃতিময় একাত্তর’, আলী আকবর টাবীর ‘১৯৭১ দৈনিক সংগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকা’, পান্না কায়ছারের ‘আমি ও আমার মুক্তিযুদ্ধ’। বইগুলো প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী।
অন্যন্যা প্রকাশনী এম. আর. আখতার মুকুলের লেখা ‘আব্বা হুজুরের দেশে’, আসিফ নজরুলের লেখা ‘নিষিদ্ধ কয়েকজন’, মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিলপত্র’, মোস্তফা কামালের লেখা ‘কয়েকজন কিশোর যোদ্ধা’, ড. নূরুন নবীর লেখা ‘জাপানিদের চোখে বাঙালি বীর’, শাকিল রেজা ইফফাতের লেখা ‘অশ্রুত একুশ’ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এসব নতুন বই প্রকাশ করেছে।
অবসর প্রকাশনা সংস্থা নিয়ে এসেছে সুপা সাদিয়ার ‘মুক্তিযুদ্ধে শত শহীদ বুদ্ধিজীবী’, গোলাম মুরশিদের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সাংস্কৃতিক পটভূমি’ নতুন দুটি বই।
ঐতিহ্য প্রকাশনীতে এসেছে গোলাম কিবরিয়া ভূইয়ার লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধ ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালুয়ের’ এবং হাসান হামিদের লোখা ‘দাগাল’।
এছাড়া শিশুনন্দন প্রকাশনীতে কাশীনাথ মজুমদার পিংকুর নতুন বই ‘বীর বিচ্ছুর গল্প’ প্রকাশিত হয়েছে। পুথিনিলয় প্রকাশনীতে নতুন বই অধ্যাপক ড. নীরেন্দ্রনাথের তারফদারের লেখা ‘আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ’। অনিন্দ্য প্রকাশে আতাউর রহমান কাননের লেখা ‘মার্চের পর মার্চ’। শোভা প্রকাশে আনোয়ারা খাতুনের ‘একাত্তরের কিশোরী’।
মেলায় আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোও ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। বুধবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মুক্তিযুদ্ধে সংবাদ সাময়িকপত্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
মঙ্গলবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
সোমবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
রোববার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
শনিবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। শুক্রবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
Array