• ঢাকা, বাংলাদেশ

বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতি 

 admin 
07th Mar 2021 2:15 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

করোনা মহামারির কারণে টানা ১২ মাস ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে রয়েছে। ক্লাস নেই। বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চালু হয়েছে অনলাইনে পাঠ। প্রশাসনিক কাজও কম; কিন্তু থেমে নেই দুর্নীতি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে রাজধানী ঢাকার অন্তত ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি তদন্ত চলছে। এর মধ্যে নামকরা স্কুল-কলেজও আছে।

দুর্নীতির অভিযোগগুলো হচ্ছে- ছুটির মধ্যে বিভিন্ন পদে নিয়োগে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া, নিয়োগ পরীক্ষার খাতায় টেম্পারিং বা ঘষামাজা, আর্থিক অনিয়ম, জমি কেনায় অপচয় বা আত্মসাৎ, নিয়ম ভেঙে শিক্ষার্থী ভর্তি, প্রতিষ্ঠানের দোকান বরাদ্দে স্বার্থসিদ্ধি প্রভৃতি। তদন্তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত মূল ব্যক্তি অধ্যক্ষ অথবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।

বিভিন্নভাবে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। কিছু তদন্ত শেষে প্রতিবদেন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে, কিছু চলছে।

অভিযোগের আওতায় আসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মান্নান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডেমরা কলেজ, রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ আলী কলেজ এবং কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

এ বিষয়ে ডিআইএর পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আজমতগীর বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা তদন্ত চালাচ্ছেন। তদন্ত শেষ হওয়া একাধিক প্রতিষ্ঠানে গুরুতর কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর জমা দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে।

তিনি আরো বলেন, তারা কেবল তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান। ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের।

ভিকারুননিসা

ডিআইএ ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ অফিসার পদের জন্য গত নভেম্বরে লিখিত নিয়োগ পরীক্ষা হয়। দুই প্রার্থীর খাতায় টেম্পারিং করে নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌজিয়া এবং গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি ফাতেমা জোহরা হকের বিরুদ্ধে।

ভিকারুননিসার অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অভিযোগ করা হয়। নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি কয়েকজন শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের নজরে এলে কমিয়ে ফের আগের নম্বর দেয়া হয়।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষায় এক ব্যক্তিকে চাকরি পাইয়ে দিতে তৎকালীন অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধি আর্থিক চুক্তি করেন বলেও অভিযোগ ওঠে। তখন তৎকালীন গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

তার ভিত্তিতে ২৯ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ ফওজিয়াকে ওএসডি করে তার স্থানে মিরপুর দুয়ারিপাড়া সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ গত ১২ জানুয়ারি ফাতেমা জোহরা হককে চাকরিচ্যুত ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গভর্নিং বডিকে নির্দেশ দেয়।

এছাড়া গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ারুল হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে ভিকারুননিসার আর্থিক বিষয়ে তদন্ত ও অডিট করতে ডিআইএকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শেখ বোরহান উদ্দিন

শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের জন্য কেরানীগঞ্জে জমি কেনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করেছে ডিআইএ। অভিযোগের তীর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুনর রশিদ খান ও সাবেক দুই শিক্ষক প্রতিনিধির দিকে। ডিআইএর উপপরিচালক রসময় কীর্ত্তনিয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত দল মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তদন্ত দলের বাকি সদস্যরা হলেন- শিক্ষা পরিদর্শক এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষা পরিদর্শক হেমায়েত উদ্দিন এবং অডিট অফিসার ফরিদ উদ্দিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হারুনর রশিদ খান তার মেয়াদকালের ২৬ মাসে মোট ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৭ টাকা প্রতিষ্ঠানটি থেকে সম্মান পারিতোষিক হিসেবে ও অন্যান্য বিলের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন। তিনি পদের অপব্যবহার করেছেন নিজের আর্থিক লাভের জন্য। তদন্তে কলেজের সর্বমোট ২৯ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়েছে। কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য কলেজ থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নে গ্রামের মধ্যে প্রায় ৪০০ শতক কৃষি জমি কেনা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। কলেজের জমি কেনা-সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক আবু নাঈম মো. রাফীর এক নিকটাত্মীয়ের অখ্যাত প্রতিষ্ঠান সারা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তির শর্ত অমান্য করে জমির দাম ব্যাংক চেকের পরিবর্তে নগদে পরিশোধ করা হয় যা অস্বাভাবিক। দ্বিতীয় দফায় কলেজের জন্য ৮৫ শতক জমি কেনায়ও পুরো লেনদেন হয় নগদে। অথচ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছিল পে-অর্ডার ছাড়া অর্থ ব্যয় না করার। শুধু ৯৭ শতাংশ পরিমাণের একটি জমি কেনায়ই দেড় কোটি টাকা ও রেজিস্ট্রেশনে অন্তত ১৭ লাখ টাকা কলেজের ক্ষতি হয়েছে বলে ডিআইএ বলেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জিবি সভাপতি হওয়ার পর অধ্যাপক হারুনর রশিদ নিয়মবহির্ভূতভাবে মোবাইল ফোনসেট কেনার নামে কলেজ থেকে ৮৩ হাজার ৯৬০ টাকা নগদ নেন। পাশাপাশি বিধিবহির্ভূতভাবে তিনি টেলিফোন ভাতার নামে মাসে চার হাজার করে টাকা নেন। এক হিসাবে দেখা গেছে, এক অর্থবছরে তিনি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার ৬৫৪ টাকা নিয়েছেন। মোট অর্থ হচ্ছে, নিয়োগ কমিটি বাবদ দুই লাখ ৬৩ হাজার ৩৫০ টাকা, জিবির মিটিং বাবদ দুই লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা, ওয়ার্কিং গ্রুপ বাবদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইল বিল ৪৮ হাজার টাকা, ক্লাস নেওয়া বাবদ দুই লাখ টাকা এবং পদোন্নতি কমিটির মিটিং করে ৩০ হাজার টাকা।

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আবু ইউসুফ প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ধরা পড়েছে ডিআইএর তদন্তে। এ ঘটনায় নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন। শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও আত্মসাতের ঘটনা সেখানে ঘটেছে। চলতি মাসে আরেক দফা এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত চালাচ্ছে ডিআইএর তিন সদস্যর প্রতিনিধি দল। তারা বিপুল আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষা পরিদর্শক হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে তদন্ত দলে আরো আছেন সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মো. মুকিব মিয়া ও অডিট অফিসার সুলতান আহমেদ। হেমায়েত উদ্দিন জানান, তারা আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে পারবেন বলে আশা করছেন।

শহীদ জিয়া উচ্চ বালিকা স্কুল ও কলেজ

অন্যায়ভাবে শিক্ষকদের বহিস্কার, দায়িত্বে অবহেলা, প্রশাসনিক অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারাতে যাচ্ছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া উচ্চ বালিকা স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ। ডিআইএর তদন্তে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২৭ জানুয়ারি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ স্কুলটির গভর্নিং বডিকে ওই অধ্যক্ষকে চাকরিচ্যুত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা পাঁচ শিক্ষককে স্বপদে বহাল করে সাত দিনের মধ্যে বোর্ডকে জানাতেও বলা হয়েছে এ চিঠিতে।

একরামুন্নেছা স্কুল

রামপুরা একরামুন্নেছা স্কুলের শিক্ষকরা ডিআইএতে লিখিত অভিযোগ করেছেন, প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে মূল একাডেমিক ভবনের পঞ্চম তলায় ক্লাস রুম ভেঙে পাঁচ রুমের বিলাসবহুল টাইলস, উন্নত কাঠের দরোজাসহ নান্দনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ আবাসিক ফ্ল্যাট তৈরি করেছেন। ব্যক্তিগত আবাসিক ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের বিল সব বিদ্যালয়ের টাকা থেকে দেয়া হচ্ছে। ফ্ল্যাটের প্রতিটি কক্ষেই বিদ্যালয়ের টাকায় কেনা হয়েছে এসি। অভিযোগগুলো তদন্ত করছে ডিআইএ।

কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ

কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনিয়মের তদন্ত করে এ সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডিআইএর শিক্ষা পরিদর্শক এনামুল হকের নেতৃত্বাধীন তদন্ত দল। এতে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ বশির আহমেদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের চার লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া এসি কেনার প্রক্রিয়ায় গলদ ও দোকান বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণও মিলেছে এ প্রতিষ্ঠানে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশীদ আমিন বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১