
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর-২০২০ : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করেত হবে। তিনি বলেন, প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়। তাই, ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে দেশের সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে সংসদে। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় শুধু বড় দুই থেকে তিনটি দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। তিনি উল্লেখ করে বলেন, সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মতই যদি সারাদেশের ভোটের অনুপাতিক হারে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় তাহলে গণমানুষের আশা-আকাংখার প্রতিফলন হবে।
আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে জাতীয় ছাত্র সমাজ আয়োজিত উপজেলা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি ইব্রাহীম খান জুয়েল-এর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন-এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, ১৮ থেকে ২০ কোটি মানুষের জন্য এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। তাই দেশে ৮টি প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ৮টি প্রাদেশিক সরকার গণমানুষের প্রত্যাশা নিখুঁতভাবে পূরণ করতে পারবে। এতে প্রশাসন, বিচার, স্বাস্থ্যসহ সকল সেবা নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, গণমানুষের ভোটের রায় সবসময় মঙ্গলময়। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে কখনো ভুল করেনা। ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ হবে। নির্বাচনে খুনা-খুনি হবে না। এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সংবিধান থেকে ৭০ ধারা তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, ৭০ ধারার কারণে সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে দলীয় প্রধান সরকার প্রধান হন, এতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন সংসদ সদস্য ভোট দিতে পারেন না। দলীয় প্রধান যা বলেন, তাই কার্যকর হয়। তাই ৭০ ধারায় একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে পরে। এতে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না। আর জবাবদিহিতা না থাকলে সুশাসন নিশ্চিত হয় না। সুশাসন নিশ্চিত করতে ৭০ ধারা তুলে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপনিবেশিক প্রথা ভেঙে অনেক গণমানুষের কল্যাণে অনেক সংস্কার করেছেন। তিনি প্রকৃত গণতন্ত্রে বিশ^াসী ছিলেন। তাই গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিনে আমলাদের পরিচালিত করে ন্যায় বিচার ভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিনে উপজেলা পরিষদে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অধিনে প্রশাসনকে কার্যকর করেছিলেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমলাদের এসিআর লিখতেন, এতে গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি উপকৃত হতো। পল্লীবন্ধুর দেশ পরিচালনায় সুশাসন নিশ্চিত ছিলো, প্রভাবমুক্ত হয়ে দেশের মানুষ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতো। দলীয় পরিচয় ছাড়াই চাকরীতে নিয়োগ পেয়েছে সকল ধর্মের মানুষ। আইনের শাসন নিশ্চিত করে পল্লীবন্ধু দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করেছিলেন। গোলাম মোহাম্মদ কাদের উল্লেখ করে বলেন, ৯১ সালের নির্বাচনের পর একটি আদেশে তৎকালীন বিএনপি সরকার গণমানুষের প্রত্যাশার উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। কিন্তু পরবর্তী সরকার গণদাবি মেনে আবারো উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এতে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর স্বপ্নের উপজেলা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এতে আমলাতন্ত্রের ওপর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা নেই বললেই চলে। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধুর স্বপ্নে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানান।
তিনি বলেন, উপজেলা ব্যবস্থা পূনঃপ্রতিষ্ঠায় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বর্তমান উপজেলা ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, বিচার ব্যবস্থা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌছে দিতে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপজেলা পর্যায়ে কোর্ট এবং বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপণ করেছিলেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গণমানুষের আইনী সহায়তা বিবেচনায় উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কোর্ট স্থাপণের দাবি জানান।
জাতীয় ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন প্রতি বছর ২৩ অক্টোবর জাতীয়ভাবে উপজেলা দিবস পালন করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস-চেয়ারম্যান- নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, উপদেষ্টা-প্রিন্সিপাল গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম মহাসচিব- এ্যাড. আব্দুল হামিদ ভাসানী, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মোঃ বেলাল হোসেন, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হেলাল উদ্দিন, এনাম জয়নাল আবেদীন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোঃ জামাল উদ্দিন, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য-সুলতান মাহমুদ, মাসুদুর রহমান মাসুম, জহিরুল ইসলাম, এম এ রাজ্জাক খান, মাওঃ আল জুবায়ের, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসহাক ভূঁইয়া, শেখ মোঃ শান্ত, কেন্দ্রীয় নেতা-সোলায়মান সামি, সাইফুল ইসলাম শোভন, ওহিদুর রহমান, জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতৃবৃন্দ মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শাহ ইমরান রিপন, মারুফ ইসলাম প্রিন্স, জামাল হোসেন, শাহরিয়ার রাসেল, শাহাদৎ হোসেন রুপু, মোঃ ইউসুফ আলামীন, শাহ আলম সবুজ, তানভীর হোসেন সুমন, মোঃ রুহুল আমিন গাজী বিপ্লব, মোঃ আতাউল আরিফিন, মোঃ মোস্তফা সুমন, তানভীর আজিজ, দ্বীন ইসলাম, শাহ সুলতান সরকার সুজন, ফকির আল মামুন, আবু সাঈদ লিওন, মোসলেম মিয়াজী, মোঃ মানিক খান, মোঃ নাঈম, রুবেল সিকদার,সামি উল সোহাগ, জাহিদুল ইসলাম, নাজিমুদ্দৌলা, রাজু মিয়া, জনি প্রমুখ।
Array