• ঢাকা, বাংলাদেশ

বাংলাদেশের জয়যাত্রা শুরু 

 admin 
03rd Jun 2019 12:31 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

উড়ন্ত সূচনা বোধহয় একেই বলে! শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের পথচলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এটি বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টাইগারদের দ্বিতীয় জয়। প্রথমটি এসেছিল ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। আর সব মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বাদশ জয় এটি। ক্রিকেট পরাশক্তিদের অনায়াসে মাটিতে নামিয়ে আনার কৌশল টাইগাররা এক যুগ আগেই রপ্ত করেছে। গতকাল কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে মাশরাফি-সাকিবরা জানিয়ে দিল এবার বিশ্বকাপে ফেভারিট বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হার ছিল নেহায়েত দুর্ঘটনা। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন টাইগাররা প্রস্তুতি ম্যাচে হেরেছিল। প্রস্তুতি ম্যাচে হার টাইগারদের চলার পথে গতি সঞ্চার করে। এবার বিশ্বকাপে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান না পারলেও এশিয়ার মান রেখেছে টাইগাররা। বাঘের থাবায় প্রোটিয়ারা এভাবে কুপোকাত হবে কম ক্রিকেটবোদ্ধাই ভেবে ছিলেন। উত্তেজনার পারদে ঠাসা এ ম্যাচে দাপট দেখিয়েই জিতেছে মাশরাফি বাহিনী।
আগে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩৩০ রান সংগ্রহ করে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। যা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। শুধু তাই নয়, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় সংগ্রহ বাংলাদেশের। এদিন রান পেয়েছেন বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানই। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম পেয়েছেন হাফসেঞ্চুরির দেখা।
এই ম্যাচে তিনটি রেকর্ড গড়েছেন নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টানা চারটি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই অর্ধশতক হাঁকানোর রেকর্ড এখন তার দখলে। আর সবচেয়ে কম ম্যাচে ২৫০ উইকেট ও ৫ হাজার বা তার বেশি রান করার রেকর্ডও এখন সাকিবের। এদিন মুশফিকের সঙ্গে ১৪২ রানের জুটি গড়েছেন সাকিব, যা বিশ্বকাপে টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের জুটি। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন সাকিব আল হাসান। ৫ জুন কেনিংটন ওভালে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মোকাবেলা করবে। ম্যাচটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল টাইগাররা তাদের চমৎকার গেম প্ল্যানের কারণে প্রোটিয়াদের অনায়াসে হারাতে পেরেছে। ফিল্ডিং একটু ভালো হলে জয়টা আরো বড় হতে পারতো। তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস। এ সত্যকে ভুল প্রমাণিত করেছেন টাইগার বোলরারা। চারটি ক্যাচ মিস করার পরও বোলাররা যেভাবে ম্যাচ বের করে এনেছে তাতে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ফিল্ডিং ভালো না হলেও ব্যাটে-বলের কল্যাণে যে ম্যাচ জেতা যায় ওভালে তা দেখিয়ে দিল সাকিব-মোস্তাফিজরা।
দলের জয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পেরে মহাখুশি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরবর্তী ম্যাচে তিনিও এমন পারফরমেন্স প্রদর্শন করতে চান। ম্যাচ শেষে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রেকর্ডে কথা আমি আগে জানতাম না। রেকর্ড গড়তে পেরে ভালোই লাগছে। ওয়ান ডাউন আমার প্রিয় পজিশন। তবে দলের প্রয়োজনে যে কোনো পজিশনেই খেলতে প্রস্তুত।
শর্ট বল ও দ্রুতগতির ডেলিভারিতে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের যে দুর্বলতা রয়েছে একথা কারো কাছে অজানা নয়। দুদলের মধ্যকার অতীতে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচগুলোতে বেশিরভাগ সময় দেখা গেছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের এই দুর্বল দিকটির সুবিধা নিয়েছেন প্রোটিয়া পেসাররা। বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিজেদের প্রস্তুত করেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচের আগে দলপতি মাশরাফি বলেন, তারা শর্ট বল ও গতিময় ডেলিভারিতে আমাদের দুর্বলতার কথা ভেবে পরিকল্পনা সাজাবে সেটা জানি। আমার দলের ব্যাটসম্যানরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে।
তামিমকে নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে রেখেই একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। ইনজুরির কারণে মাহমুদউল্লাহ বল করতে পারবেন না সেটা বিবেচনায় রেখে সাব্বিরের পরিবর্তে একাদশে রাখা হয় ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিন করতে সক্ষম মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। এ ছাড়া পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে জায়গা পান সাইফউদ্দিন।
তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন সৌম্য সরকার। তামিম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সাবধানতার সঙ্গে ব্যাট করলেও সৌম্য তার স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ই করতে থাকেন। রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন তিনি। প্রথম ওভারে একটি বাউন্ডারি হাঁকান সৌম্য। আর পঞ্চম ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে ৩টি চার। ৫ ওভার শেষে টাইগারদের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ২৮ রান। আর টাইগারদের সংগ্রহ ৫০ ছুঁই ৭ ওভার শেষে। নবম ওভার করার জন্য আন্দাইল পেহেলেকায়োর হাতে বল তোলে দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। বোলিংয়ে এসেই তামিমকে সাজঘরে ফেরান তিনি। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বাড়তি উচ্চতার বল তামিমের ব্যাটের কোনায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসে। ভাঙে ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি। ব্যক্তিগত ১৬ রান করে আউট হন তামিম। ক্রিজে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এরপর দলের স্কোরে আর ১৫ রান যোগ হতে সৌম্যকে ফেরান ক্রিস মরিস। শর্ট বলে পুল করার চেষ্টা করেছিলেন সৌম্য। কিন্তু বল তার গ্লাভসে লেগে উপরে উঠে যায়। দৌড়ে এসে সহজেই তালুবন্দি করেন ডি কক।
তারপর সাকিব-মুশফিক ঝলক। দুই ওপেনারকে হারানোর চাপ সামলে তৃতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়ে তোলেন তারা। ৫৪ বলে ফিফটি তোলে নেন সাকিব। যা তার ক্যারিয়ারের ৪৩তম অর্ধশতক, বিশ্বকাপে ষষ্ঠ। এর কিছুক্ষণ পর হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। যা তার ক্যারিয়ারের ৩৪তম, আর বিশ্বকাপে পঞ্চম।
এর মধ্যে ৯৫ বলে শত রানের জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। এ নিয়ে পঞ্চমারের মতো শত রানের জুটি গড়লেন তারা। তামিম-মুশফিক ও তামিম-সৌম্যেরও ৫টি করে শত রানের জুটি আছে। এ ছাড়া গতকাল সাকিব-মুশফিকের করা জুটিটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চতুর্থ শত রানের জুটি। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলের স্কোরটাকে বড় করতে থাকেন সাকিব ও মুশফিক। ৩২ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২০০ রান। ৩৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর যখন ২ উইকেটে ২১৭ রান তখন আরেকটি রেকর্ডের পাশে যুক্ত হয় মুশফিক-সাকিবের নাম। বিশ্বকাপে টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের জুটি ১৪২ রান। এর আগে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের ১৪১ রানের জুটি ছিল সর্বোচ্চ। সাকিবকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন প্রোটিয়া স্পিনার ইমরান তাহির। আউট হওয়ার আগে সাকিব খেলেন ৭৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন আউট হন ২১ রান করে। আর সেঞ্চুরি থেকে ২২ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন মুশফিক। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৪৬ ও মোসাদ্দেকের ২৬ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের বড় স্কোর দাঁড় করায় স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। প্রোটিয়াদের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন পেহেলেকায়ো, ক্রিস মরিস ও ইমরান তাহির।
৩৩০ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার ইতিহাস গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার এইডেন মারক্রাম ও কুইন্টন ডি কক। এই জুটি ভাঙে রান আউটের কল্যাণে। দশম ওভারের চতুর্থ বলে মিরাজের ঘূর্ণিতে কুইন্টন ডি ককের ক্যাচ ছাড়েন মুশফিক। তবে পুষিয়ে দেন তখনই। রান নেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে ডি কক। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরাসরি থ্রোতে ডি কককে রান আউট করেন টাইগার উইকেটরক্ষক। বিপজ্জনক হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন এইডেন মারক্রাম। তাকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারে ২৫০তম উইকেটের মাইলফল স্পর্শ করেন সাকিব। এরপর ৫৩ বলে ৬২ রান করা ডু প্লেসিসকে বোল্ড করেন মিরাজ। প্রোটিয়াদের সংগ্রহ তখন ৩ উইকেটে ১৪৭। ম্যাচটি প্রোটিয়াদের জন্য সহজ করে তুলছিলেন ডেভিড মিলার। তবে মোস্তাফিজের বলে অসাধারণ এক ক্যাচে মিলারকে সাজঘরে পাঠিয়ে টাইগারদের আবারো ম্যাচে ফেরান মিরাজ। প্রোটিয়াদের স্কোরে আর ২৬ রান যোগ হতে ভান ডার ডুসেনকে বোল্ড করে টাইগারদের জয়ের সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল করেন সাইফউদ্দিন। জেতার জন্য প্রোটিয়াদের তখন প্রয়োজন ৬৫ বলে ১০৩ রান। শেষ দিকে জেপি ডুমিনি কিছুটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে তাকে বোল্ড করে প্রোটিয়াদের জয়ের সব সম্ভাবনাই ধূলিস্যাৎ করে দেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। প্রোটিয়াদের ইনিংস থামে ৩০৯ রানে। বাংলাদেশের পক্ষে মোস্তাফিজ ৩টি উইকেট নেন। সাইফউদ্দিন নেন ২ উইকেট। এ ছাড়া ১টি করে উইকেট নেন সাকিব ও মিরাজ।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১