এদিন সকাল থেকেই মেলায় উপস্থিতি ছিল ভালো। দুপুরের পর মেলাপ্রাঙ্গণে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। আর বিকালের দিকে মেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, যাদের কেনাকাটা শেষে হয়েছে, তারা যেন নতুন দর্শনার্থীদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেন।
মেলার ভিড়ের কারণে বিজয় সরণি, আগারগাঁও, রেডিও কলোনি এলাকায় তীব্র যানজট লেগে যায়।
এত ভিড়ের মেলাতেও ‘আল আমিন জামদানি’ নামের একটি স্টলের বিক্রয়কর্মী রায়হান উদ্দিন বললেন হতাশার কথা। তার ভাষ্য, এ বছর মেলায় তাদের বেচাকেনা ‘সন্তোষজন’ হয়নি।
রায়হান বলছেন, মেলায় যারা পোশাকের দোকানে আসছেন, কম দামি কাপড়ের দিকেই তাদের ঝোঁক বেশি। অনেকে এসে জামদানি নেড়ে চেড়ে দেখে কিনছেন অন্য পোশাক।
“আমাদের স্টলে ৩৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার জামদানি শাড়ি আছে। কিন্তু লোকজন সেগুলো কিনছে না। ৯০০ টাকার একটা প্যাকেজ আছে তিনটা থ্রি-পিসের, ওগুলোই বেশি কিনছে।”কায়সার মেটাল প্রডাক্টসের কর্মকর্তা আবুল বাশার জানালেন, এবার তারা মেলায় স্টল নিয়েছেন মূলত নিজেদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং করার জন্য। সেই জায়গা থেকে তারা সন্তুষ্ট।
“আমাদের একশর বেশি মডেলের মেটাল পণ্য রয়েছে। মেলায় অনেকে আসছেন আমাদের স্টলে, এসব পণ্য সম্পর্কে জানতে চাইছেন। আমাদের মেলায় আসার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।”
তবে ভারতীয় প্যাভিলিয়নে কাশ্মিরি শাল নিয়ে এসে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করলেন জম্মু-কাশ্মিরের নাগরিক খুরশীদ রাথের।
তিনি বলেন, “বাঙালিরা দাম দিতে চায় না। এমনিতে যেসব শাল দুই হাজার টাকায় বিক্রি করি, সেগুলো ১২ শ টাকায় নামিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না। লোকজন কম দামের জিনিস চায়।”
পাঁচ লাখ টাকা স্টল ভাড়া আর অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এখন কত টাকার লোকসান গুণতে হয়, সেই হিসাব করার কথা বললেন খুরশীদ।
কাশ্মিরের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুস সালামও একই ধরনের হতাশার কথা বললেন। তিনি জানান, শাল ছাড়াও মেয়েদের কামিজ আছে তার স্টলে। কিন্তু দাম তুলনামূলক বেশি বলে মানুষ বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ওই স্টলে দামদর করতে থাকা আয়েশা বেগম নামের এক গৃহিনী বললেন, হাতের কাজ করা এসব কাশ্মিরি কামিজ শীতের পোশাক হিসেবে ভালো। কিন্তু সামনে গরম আসছে, তাই এগুলো এখন কেউ কিনতে চাইবে না।
তবে ইন্ডিয়ান প্যাভিলিয়নে ৯০০ টাকায় ভারতীয় চামড়ার তৈরি মেয়েদের জুতা দেদার বিক্রি হতে দেখা যায়।
এ দোকানের কর্মী পবন কুমার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাঞ্জাবের কোম্পানি ইন্ডিয়ান ফুটওয়্যারের পণ্য নিয়ে তারা মেলায় এসেছেন। ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছেন বেশ ভালো।ভারত থেকে প্রসাধনী পণ্য নিয়ে আসা তারেক হাসান খানও এবারের মেলার ব্যবসা নিয়ে আশাবাদী। তিনি জানালেন, ছুটির দিনগুলোতে তার দোকান বেশ জমজমাট থাকছে।
তবে ইরানের মেলামাইন পণ্য নিয়ে বড় পরিসরের স্টল বসিয়ে ভালো সাড়া না পাওয়ার কথা বললেন বিল্লাল হোসেন। সেখানে ইরানি মেলামাইনের একটি প্লেটের দাম বলা হচ্ছে দেড়শ টাকা।
মোবাশ্বের রফিক নামের এক ক্রেতা ১০টি প্লেট কিনে নিলেও দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানালেন।
“এটা জাস্ট কেনার জন্য কিনলাম। এরচেয়ে বাংলাদেশি মেলামাইন পণ্য অনেক ভালো, দামও আরেকটু কম। তারপরও ইরানি জিনিস, ঘরে রাখার জন্য কিনলাম।”
সকালে স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার। বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেলা ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিক পণ্য, রান্না ঘরের আসবাবপত্রসহ অন্তত ১০ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাত্তার বলেন, “মেলায় ঘোরাফেরা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছরই মেলায় আসা হয়, এবারও আসলাম। গিন্নির পরামর্শে কিছু কেনাকাটা করতে হয়েছে।”
সময়ে বাড়ানোর দাবি
এবারের বাণিজ্য মেলা শেষ হওয়ার কথা আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। এই মেয়াদ আরও দুদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্টল মালিকরা।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, স্টলমালিকরা এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তাদের সেই আবেদন গৃহীত হলে সময় বাড়তে পারে।