• ঢাকা, বাংলাদেশ

বাবা সিকিউরিটি গার্ড, মা গৃহকর্মী, ছেলে এখন জজ 

 admin 
27th Jan 2020 5:48 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

বাবার অভাবের সংসার। সংসারের টাকা রোজগারের আশায় রাজধানীতে গিয়ে একটি বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন। অভাবের তাড়নায় মা অন্যের বাড়িতে ঝি’র (গৃহকর্মী) কাজ শুরু করেন। পরিবারের এমন অভাব অনটনের মধ্যেই সংগ্রামী হয়ে ওঠেন গোলাম রসুল সুইট। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী গোলাম রসুল সুইট। পরিবারের অভাবও দমাতে পারেনি তাকে। কষ্টের ফসলও পান হাতে-নাতে। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। এক সময় ঠিকমত খেতে না পারা সেই গোলাম রসুল সুইট এখন জজ। ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে ৬৭তম হওয়া এই জবি ছাত্র আগামীকাল মঙ্গলবার সহকারী জজ হিসেবে পিরোজপুর জেলায় যোগদান করবেন।

গোলাম রসুল সুইটের বাড়ি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামে। বাবা মোশারফ হোসেন ও মা মাহফুজা খাতুনের বড় ছেলে তিনি।

একান্ত আলাপকালে নিজের পরিবার ও লেখাপড়া নিয়ে খোলামেলা আলোচনাকালে সহকারী জজ গোলাম রসুল সুইট জানান, গত এক মাস আগে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরিটা ছেড়ে দিয়েছে। মাকেও এক বছর আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি।

শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করে গোলাম রসুল সুইট বলেন, শাখরা কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভোমরা ইউনিয়ন দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করেছি। এরপর দেবহাটা উপজেলার সখিপুর খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ্ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। আমাদের পরিবারের তখন খুব অভাব। বাবাও ছিলেন উদাসীন। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো আমাদের।

তিনি আরও জানান, কলেজ শেষ করার পর লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এমন সময় সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। সেখান থেকে এক ভাই আমাকে ঢাকায় কোচিং করার পরামর্শ দেন। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় দোটানায় পড়ি। এ সময় মায়ের একটি গরু ছিল। সেই গরুটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২০১০ সালের মে মাসে ঢাকায় এসে একটি কোচিংয়ে ভর্তি হই।

কিন্তু সেই টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর বিপাকে পড়েন গোলাম রসুল সুইট। তিনি বলেন, বাড়িতেও টাকা চাওয়া বা পরিবারের দেওয়ার মত কোন সঙ্গতি না থাকায় কোচিং পরিচালকের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করি । এরপর তিনি আমাকে সেখানে বিনামূল্যে কোচিং ও থাকার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া পারিবারিক অবস্থা খারাপ জানার পর কোচিংয়ের সহপাঠী অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কোচিং সেন্টার পরিচালক এবং বন্ধুদের সেই সহযোগিতা ভুলে যাওয়ার মতো নয়।

এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয় গোলাম রসুল সুইটের। তিনি জানান, বন্ধু ও শোভাকঙ্খীদের পরামর্শে ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হই। ভর্তির পর নিজে হাতে পোস্টার ছাপিয়ে অবিভাবকদের কাছে বিতরণ শুরু করি। এভাবে পাঁচটি টিউশুনি জোগাড় হয়ে যায়। এভাবেই চলেছে আমার শিক্ষাজীবন। আত্মীয়-স্বজনরা কখনো খোঁজ নেয়নি। তবে আমার বন্ধুরা আমার পাশে থেকেছে সব সময়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ফলাফলে বি ইউনিটে মেধা তালিকায় হয়েছি ১১তম। ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে হয়েছি ৬৭তম।

আগামীকাল (২৮ জানুয়ারি) পিরোজপুর জেলার সহকারি জজ হিসেবে যোগদান করবো জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় লোক হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। সব সময় ন্যায়ের পথে থেকে মানুষদের জন্য কাজ করে যাবো। কখনোই অনিয়ম বা দুর্ণীতির সঙ্গে জড়িত হবো না। যখন চাকরিজীবন শেষ করবো তখন যেন অবৈধ উপায়ে উপার্জনের একটি টাকাও আমার ব্যাংক একাউন্টে না থাকে। আমার কাছে সকল মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। অসহায় মানুষরা কখনোই ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১