
তৈরি পোশাক শিল্পের যে সব শ্রমিক ঈদের আগে বাড়ি চলে গেছেন ঈদের ছুটির পর সময় মতো না ফিরলেও তাদের জন্য তাড়াহুড়ো করছে না মালিক পক্ষ। বাড়িতে যাওয়া শ্রমিকদের ছাড়াই কারখানা খুলতে চান মালিকরা। এরপর যখন শ্রমিকরা যখন বাড়ি থেকে ফিরবেন তখন তারা কাজে যোগদান করবেন। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এবারের ঈদে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা বাড়িতে গেছে অল্পই। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকাতে অবস্থান করতে বলেছিলাম, তারা প্রায় সবাই নির্দেশনা মেনে ঢাকাতে আছেন। আমরা ঈদের আগেও যেমন স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য জোর দিয়েছিলাম, ঈদের পরও তেমনি জোর দিচ্ছি। আমরা যথাসময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করব। ইতোমধ্যে কিছু কারখানা চালু হয়েছে।
আগামীকালও খুলবো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ও সুবিধা মতো কারখানা খুলে যাবে। এরপরও যারা ঈদে বাড়িতে গেছে তারা যখনই আসুক স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে যোগ দেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিকরা এরই মধ্যে বিভিন্ন ভাবে ঢাকা ছেড়েছে। সংখ্যা একেবার কম নয়। ছুটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারখানার নির্দেশনা না মেনেই চুপি চুপি ঢাকা ছেড়েছে। আবার নির্দিষ্ট সময়ে কাজেও যোগ দেবে। জানা গেছে, কিছু কিছু কারখানা ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছেও। যে সব কারখানা ঈদের ছুটির সঙ্গে ছুটি বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আগে থেকে সাপ্তাহিক ছুটি বা অন্য ছুটির দিনে সাধারণ কর্মদিবস হিসাবে কাজ করেছিল তারা বাড়তি ছুটি দিয়েছে। এ সব শ্রমিক আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরবে। যে করেই হোক তারা কর্মস্থলে ফিরবে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্টিয়াল পার্কের এমন একজন শ্রমিক ইস্কান্দার আলী। তার ছুটি আছে সাতদিনের। ইতোমধ্যে চারদিন শেষ হয়েছে। সামনে আছে তিন দিন। সামনে দুইদিন পর ঈদের চতুর্থ দিন ঢাকায় রওনা দেবে যে কোনোভাবেই হোক কর্মস্থলে পৌঁছবে।
শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের ধারণা, এই ঈদে মোট শ্রমিকের এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। সরকারের বিধি নিষেধের মধ্যেই তারা ঢাকা ছেড়েছে। সংখ্যায় এ সব গার্মেন্ট শ্রমিক প্রায় ১৫ লাখ হবে। এ সব শ্রমিক বেশি টাকা খরচ করে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। যে ভাবেই হোক তারা ঢাকাতে আসবে। প্রয়োজনে তারা হেঁটে আসবে। ২০২০ সালে করোনার প্রথম ঢেউয়ের কঠোর লকডাউনের মধ্যে শ্রমিকরা তা দেখিয়ে দিয়েছে। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়া গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক জালাল হাওলাদার। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, সরকার বা গার্মেন্ট মালিকরা যে হিসাব করে তা তাদের জায়গা থেকে। আমাদের কথা চিন্তা করে কথা বললে আমাদের যে কোনোভাবেই হোক বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো। আমরা কারখানায় আক্রান্ত হই না, আবার বাড়িতে গেলে আমরা নাকি আক্রান্ত হয়ে যাব। এটা কেমন দ্বিমুখী নীতি? আমরা যারা সারা বছর ছুটি পাই না, বছরের বিভিন্ন সময়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে জেনারেল ডিউটি হিসাবে কাজ করে থাকি, আশায় থাকি ঈদের ছুটির সঙ্গে বাড়তি ছুটি পাব। ঈদের সময় এসে বলল ছুটি তিনদিন। মালিক সরকার আমাদের বুঝে না, আমরা মালিক-সরকারের ভুল নীতি কেনো মানব- প্রশ্ন শ্রমিকদের।
কিন্তু এই যে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাড়ি গেছে তারা কি আদৌ বাড়ি ফিরতে পারবেন। দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই কমের দিকে। লকডাউনসহ নানামুখী উদ্যোগের ফলে এই এই আক্রান্ত ও মৃত্যু হার কমের দিকে। কিন্তু সরকার আশঙ্কা করছে করোনার ভারতীয় ভয়ঙ্কর ধরন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের শরীরে এ ধরন শনাক্তও হয়েছে। এই যে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিষেধাজ্ঞা না মেনে গায়ে ঠেলা-ঠেলি করে বাড়ি গেছে আবার যদি ঢাকা আসে এই ভারতীয় ধরন মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। করোনার ভারতীয় বাংলাদেশে শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। বাংলাদেশ ঘনবসতির দেশ হওয়ার কারণে দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে। এ জন্য যারা ঢাকা ছেড়েছে তাদের ১৪ দিন পরে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম। রোববার দুপুরে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার পরামর্শ দিয়েছিল আমরা যেন এবারের ঈদে নিজ নিজ অবস্থান ছেড়ে বাইরে চলে না যাই। কিন্তু আমরা দেখেছি, বড় সংখ্যক মানুষ এই পরামর্শ উপেক্ষা করেও নানাভাবে ঘরে ফেরার চেষ্টা করেছেন। সেখানে কিছু মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেছি। যারা বাড়িতে গেছেন, এখনো অফিস খোলেনি। স্কুল-কলেজে দেরি করে ফিরলেও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, তারা অন্তত সাত থেকে ১৪ দিন দেরি করে ফিরে আসবেন। বাড়িতে গিয়ে ইতোমধ্যে যাদের উপসর্গ দেখা গেছে, তারা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা সদর হাসপাতালে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা অবশ্যই করিয়ে নেবেন। ফিরে আসার সময় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।’
এই বাধা নিষেধের মধ্যেই গার্মেন্ট শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশাজীবী ঢাকায় ফেরা শুরু করেছে। যমুনার পশ্চিম পারে শতাধিক বাড়ি পুলিশ আটকে রেখেছে। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকায় ঢোকার অন্যান্য পয়েন্টগুলো দিয়েও মানুষ ঢোকা শুরু করেছে। তারা যে কোনোভাবেই যে হোক কাজে যোগ দেবে। শেষ পর্যন্ত তারা রাখতে পারবে না, ছেড়েই দিতে হবে।
Array