admin
03rd Dec 2019 1:14 pm | অনলাইন সংস্করণ

আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যয় কিলোওয়াট ঘণ্টা প্রতি ৪৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি অডিটরিয়ামে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির শুনানিতে এ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে ডিপিডিসি ২০২০ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যয় কিলোওয়াট ঘণ্টা প্রতি ১.২৪ টাকা করার প্রস্তাব করে। বিপরীতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ০.৮৭ টাকা করার কথা বলেছে। এর আগে ২০১৭ সালে প্রদত্ত মূল্যহারে বিদ্যুতের নিট বিতরণ ব্যয় ছিল ০.৮৩ টাকা। ডিপিডিসির এ প্রস্তাবনার ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যয় ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হল। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) বিদ্যুতের মূল্যহার পরিবর্তনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি পর্বের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডিপিডিসির চেয়ারম্যান বিকাশ দেওয়ানসহ অন্যান্য সদস্য এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উপ-ব্যবস্থাপক (ট্যারিফ) কামরুজ্জামান। বিদ্যুতের বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসাবে ডিপিডিসি উল্লেখ করে, অপচয় ও সম্পদের পরিবৃদ্ধি; জনবল, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তারা। গণশুনানিতে জুরি বোর্ডের দ্বায়িত্ব পালন করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এছাড়াও কমিশনের সদস্য রহমান মুর্শেদ, মিজানুর রহমান এবং মাহমুদউল হক ভুঁইয়া ছিলেন। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে জেরা পর্বে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) সভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সিকিউরিটি সার্ভিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহানুর সরকার, বাংলাদেশ মোবিইল ফোনের গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
বিদ্যুৎ বিল না দিলে লাইন কেটে দেবে ডিপিডিসি : বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনার শুনানিতে ডিপিডিসি জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে ১৫৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে তাদের। ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিল পরিশোধ না করলে জানুয়ারিতে একসঙ্গে দুই সিটির সব বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। শুনানিতে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম ডিপিডিসির কাছে জানতে চান, দুই সিটি করপোরেশনের কাছে ডিপিডিসির কত টাকা বকেয়া আছে। ডিপিডিসির পক্ষে থেকে জানানো হয়, উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে ৬৪ কোটি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে ৯৪ কোটি টাকা বকেয়া আছে। শামসুল আলম আরও জানতে চান, বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকলেও কেন লাইন কাটা হচ্ছে না?
জবাবে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন্স) এটিএম হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা দুই সিটি করপোরেশনকে বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদেরকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা না হয়, তাহলে আগামী জানুয়ারি মাসে তাদের সব বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হবে।
জামানতের টাকা সুদসহ ফেরত দেওয়ার সুপারিশ : ভোক্তা নিরাপত্তা জামানত খাতের সম্পূর্ণ টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখা এবং সেই জামানতের ওপর যে সুদ আসবে, সেই সুদসহ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার সুপারিশ করেছে বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন)-এর কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার সময় প্রত্যেক গ্রাহককে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হয়। এই অর্থ বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেদের আয় হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু আইন অনুযায়ী ভোক্তা বিদ্যুৎ লাইনটি ছেড়ে দিলে এই নিরাপত্তা জামানতের অর্থ ভোক্তাকে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনও বিতরণ কোম্পানি তা ফেরত দেয় না।
কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি শুনানিতে জানায়, ভোক্তা নিরাপত্তা জামানত খাতের সম্পূর্ণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা আবশ্যক। নিরাপত্তা জামানতের ওপর অর্জিত মুনাফাও একই ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত করা সমীচীন। এই হিসাবের মূল এবং মুনাফার অর্থের পৃথক পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নিরাপত্তা জামানতের মুনাফা বিতরণ কোম্পানির আয় হিসাবে অন্যান্য আয় খাতে প্রদর্শন করার বদলে ভোক্তাকে নিরাপত্তা জামানতের অর্থ মুনাফাসহ ফেরত দেওয়ার লক্ষ্যে পৃথক হিসাবে সংরক্ষণ করা সমীচীন। এই বিবেচনায় কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ভোক্তা নিরাপত্তা জামানত খাতের ৫১৯ কোটি ৭ লাখ টাকার বিপরীতে ১৮ কোটি ২ লাখ টাকা অন্যান্য আয় হিসাবে বিবেচনা করেনি।
কমিশনের শুনানির তৃতীয় দিন সোমবার ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি হয়। এদিন বিকালে ডেসকোর দামের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এবং দুপুরে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহক পর্যায়ের মূল্য হার নিয়ে গণশুনানি হবে।
Array